কক্সবাজার সৈকতে প্যারাসেইলিং এর মজাটাই আলাদা। বিরাট আকারের বেলুন কিংবা প্যারাশুট আকাশে উড়তে দেখে আশ্চর্য হয়ে যাওয়া কিংবা তা দেখে সেভাবেই ভেসে বেড়ানোর ইচ্ছে জেগেছে আমাদের অনেকেরই। কিন্তু এতদিন তা ছিল অনেকটা দূর্বোদ্ধ।
কক্সবাজার সৈকতে হাওয়ায় ভেসে বেড়ানো প্যারাসেইলিং
বর্তমানে আমাদের দেশেই কক্সবাজারে পাওয়া যাচ্ছে অপূর্ণ সেই ইচ্ছে পূরণের সুযোগ। মাত্র চার বছর আগে কক্সবাজার শহরের অদূরে দরিয়া নগর সৈকতে প্রথমবারের মতো চালু হয় প্যারাসেইলিং। একটি স্পিডবোটে প্যারাসেইল বাঁধা থাকে এবং এর সঙ্গে আরোহীদের একটি শক্ত দড়ি দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়। স্পিডবোট আরোহীকে টেনে নিয়ে যায় সমুদ্রে, আর সেই গতিতে আরোহী উড়তে থাকেন ঠিক পাখির মতোই।
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় তিন থেকে চারশো ফুট উঁচুতে হাওয়ায় ভেসে সাগর, পাহাড় ও সবুজের সৌন্দর্য উপভোগ করে উচ্ছ্বসিত পর্যটকরা। সময়ের সাথে বেড়েছে এর জয়প্রিয়তা। পরিণত হয়েছে কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকদের আর্কষনের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিংবা অনেকেই আসছেন শুধুমাত্র প্যারাসেইলিং করতে।
কক্সবাজার শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে সৈকতের হিমছড়ি দরিয়ানগর পয়েন্টে রয়েছে এই সুবিধা। বর্তমানে দরিয়া নগরে দুইটি প্রতিষ্ঠান থেকে প্যারাসেইলিং করার ব্যবস্থা রয়েছে। একটি স্যাটেলাইট ভিশন সী স্পোর্টস এবং আরেকটি ফান ফেস্ট বিচ এক্টিভিটিস। স্যাটেলাইট ভিশন সী স্পোর্টস প্রতিষ্ঠানটির তিনটি প্যাকেজ আছে। এই প্যাকেজগুলোর খরচ পড়বে যথাক্রমে ১৫০০, ২০০০ ও ২৫০০। আর ফানফেস্ট বিচ এক্টিবিটিজ নামের প্রতিষ্ঠানটির দুইটি প্যাকেজ রয়েছে। যেগুলোর জন্য আপনাকে ১৫০০ ও ২০০০ টাকা খরচ করতে হবে। ১৫০০ টাকার রাইডে আপনাকে শুধু আকাশে উড়াবে। আর ২০০০ টাকার রাইডে আকাশে উড়ানোর পর আলতো করে সমুদ্রের পানিতে পা স্পর্শ করিয়ে আবার আকাশে উড়ানো হয়। সকল ক্ষেত্রেই ৫ থেকে ১২ মিনিট পর্যন্ত উড়ানো হয় এবং ৩০০ থেকে ৪৫০ ফুট পর্যন্ত উপরে আপনি ভেসে বেড়াতে পারবেন। যোগাযোগ: ০১৭৩০-৬৩৩৭৫৭, ০১৭৫৫-৫৯৬৯৯৬, ০১৭৬২-৫৯২৮৯২।
যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী বিভিন্ন এসি ও নন-এসি বাস সার্ভিস রয়েছে। এদের মধ্যে সৌদিয়া, এস আলম এর মার্সিডিজ বেঞ্জ, গ্রিন লাইন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সোহাগ পরিবহন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৯০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া ঢাকা থেকে ট্রেনে করে চট্টগ্রাম হয়ে আপনি কক্সবাজার যেতে পারেন। আর যদি বাজেট বেশি হয়ে থাকে তবে কক্সবাজার যেতে আকাশপথ বেছে নিতে পারেন। কক্সবাজারের যেকোন জায়গা থেকে দরিয়া নগর যেতে পারবেন খুব সহজেই। অটোরিকশা/ ইজিবাইক/ বা সিএনজি দিয়ে মেরিন ড্রাইভ রোডের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে চলে যান দরিয়া নগরে। লোকাল অটোরিকশায় গেলে ভাড়া নিবে ২০ টাকা।
যেখানে থাকবেন
কক্সবাজারে পর্যটকদের জন্য অসংখ্য আবাসিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ রয়েছে। ঢাকা থেকেই ফোন দিয়ে বুকিং দিতে পারবেন। এখানে রয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন কর্তৃক পরিচালিত মোটেল শৈবাল, তারকা মানের সিগাল হোটেল, হোটেল সী-প্যালেস, হোটেল সী-ক্রাউন, হোটেল ওশান প্যারাডাইজ লি:, হোটেল মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল ইত্যাদি। এখানে থাকতে খরচ পড়বে এক রাতের জন্য এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ষাট হাজার টাকা। এছাড়াও কক্সবাজারে কমমূল্যের অনেক হোটেল রয়েছে থাকার জন্য।
প্রতি বছর হাজারও মানুষ কোনো ধরনের অভিযোগ ছাড়াই প্যারাসেইল করছেন। তবে কখনও কখনও বিপর্যয় ঘটে। মস্তিষ্কে আঘাত পাওয়া থেকে শুরু করে দুর্ঘটনাক্রমে ডুবে যাওয়ার মতো গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটতে পারে প্যারাসেইলিংয়ের সময়।
আনন্দ ভ্রমণে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়িয়ে প্যারাসেইলিংয়ের আনন্দ উপভোগ করতে কিছু বিষয়ের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হলো—
১. এমন একটি প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠান বেছে নিতে হবে যারা প্যারাসেইলিংয়ের সরঞ্জাম সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করে এবং যাদের অপারেটর দক্ষ। সেসব প্রতিষ্ঠানই বেছে নেবেন যারা সেইলিংয়ের আরোহীদের প্রশিক্ষণও দেবে।
২. জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বন্ড সই করে প্যারাসেইলিং করতে হয়। কাজেই জেনে নিন এবং নিশ্চিত হয়ে নিন যে প্রতিষ্ঠানটি আপনাকে প্যারাসেইলিংয়ের সম্ভাব্য ঝুঁকি সম্পর্কে সব তথ্য দিচ্ছে কিনা। অবশ্যই আকাশে ওড়ার ভীতি থাকলে বন্ডে সই করবেন না।
৩. প্যারাসেইলিংয়ের আগে অবশ্যই আবহাওয়ার পূর্বাভাস জেনে নিন। যদি পূর্বাভাসে প্রবল বাতাস, বৃষ্টি, বজ্রপাত বা অন্যান্য খারাপ পূর্বাভাস থাকে তাহলে প্যারাসেইলিং করবেন না। এমনকি, যদি প্যারাসেইলিং প্রতিষ্ঠান আপনাকে নিরাপদ বলে নিশ্চয়তাও দেয়, তবুও না।
৪. জোয়ারের সময় প্যারাসেইলিং করবেন না। কেননা জোয়ারের সময় স্পিডবোট অনেক সময় ঢেউয়ের সঙ্গে তাল মেলাতে পারে না। এতে বোটের ইঞ্জিন থেমে গিয়ে প্যারাসুটসহ আপনি সাগরে পড়ে যেতে পারেন।
৫. যদিও প্যারাসেইলিং কোম্পানি নিরাপত্তার জন্য দায়ী, তবুও স্পিডবোট ও সব প্যারাসেইলিং সরঞ্জাম যাচাই করা নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। প্যারাসুটটি শুকনো আছে কিনা তা যাচাই করে নেবেন। ভেজা প্যারাসুট দিয়ে প্যারাসেইলিং করার সময় ঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। আর অবশ্যই দড়ি যাচাই করে নিতে ভুলবেন না।
৬. স্পিডবোটে পর্যাপ্ত পরিমাণ তেল আছে কিনা জেনে নিন। কেননা, মাঝপথে তেল ফুরিয়ে গেলে আপনাকে সমুদ্রে পড়তেই হবে।
৭. যদি কোনো কারণে প্যারাসুট নিয়ে সমুদ্রে পড়ে যান সেক্ষেত্রে আতঙ্কিত হবেন না। প্যারাসেইলিংয়ের কর্মীরা আপনাকে উদ্ধারে এগিয়ে আসবে। আপনি যদি সাঁতার না জানেন, তাহলে দুহাত উঁচু করে সংকেত দিবেন। আর যদি আপনার সাঁতার জানা থাকে, তাহলে লক্ষ্য রাখবেন প্যারাসুটের দড়ি যেন পায়ে না পেঁচিয়ে যায়।
প্যারাসেইলিংয়ের আগে লাইফ জ্যাকেট ভালোভাবে পরে নেবেন। এতে করে আপনি পানিতে ভেসে থাকতে পারবেন।
Add comment