Porjotonlipi

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ ও খুঁটিনাটি তথ্য

সেন্টমার্টিন বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। এটি বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে সর্ব দক্ষিণে অবস্থিত। কক্সবাজার জেলা শহর থেকে প্রায় ১২০ কিলোমিটার দূরে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। এ দ্বীপ ৭.৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং এর আয়তন প্রায় ৮ বর্গ কিলোমিটার। এ দ্বীপকে ‘নারিকেল জিঞ্জিরা’ ও বলা হয়। এর আরও একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ রয়েছে যা ‘ছেড়াদ্বীপ’ নামে পরিচিত। সেন্টমার্টিন দ্বীপে আকাশ আর সমুদ্রের নীল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। এখানে অগভীর দীর্ঘ সমুদ্রতট, সামুদ্রিক প্রবাল, সাগরের ঢেউয়ের ছন্দ সবাইকে মুগ্ধ করে।

চোখ জুড়ানো সেন্টমার্টিন

সেন্টমার্টিন দ্বীপটির ভূপ্রকৃতি প্রধানত সমতল। তবে কিছু কিছু বালিয়াড়ি দেখা যায়। এ দ্বীপটির প্রধান গঠন উপাদান হলো চুনাপাথর। জেলিফিশ, মিশ্র নোনা জলের মাছ, কচ্ছপ এবং প্রবাল এই দ্বীপের প্রধান আকর্ষণ। এছাড়াও এই দ্বীপে প্রায় ৬৬ প্রজাতির প্রবাল, ১৮৭ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ১৫৩ প্রজাতির সামুদ্রিক শৈবাল, ১৫৭ প্রজাতির গুপ্তজীবী উদ্ভিদ, ২৪০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ, চার প্রজাতির উভচর ও ১২০ প্রজাতির পাখি পাওয়া যায়।

 

শীতের আগমনে সেন্টমার্টিন ট্যুর যাওয়ার আগ্রহ সকলের বেড়ে যায়। সেন্টমার্টিনে নভেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত পর্যটকদের ভিড় দেখা যায়।

সেন্টমার্টিন এর বিশেষত্ব

বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিনের সৌন্দর্য বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। যার চারিদিকে শুধুই নীল সমুদ্র, তীরে বাঁধা নৌকা, সারি সারি নারকেল গাছ আর ঢেউয়ের ছন্দ, কখনো থেমে থেমে, কখনো আবার দমকা হাওয়ার স্পর্শ,এসবই সেন্টমার্টিন দ্বীপের মহাত্ম যা ছোট্ট এই দ্বীপটিকে করেছে অনন্য সুন্দর। সেন্টমার্টিন গেলে দেখতে পাবেন প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের বহুল আলোচিত ‘সমুদ্র বিলাস’।

দ্বীপের দর্শনীয় স্থান

অনেক ধরনের দর্শনীয় স্থান রয়েছে এই দ্বীপে।

  • জেটি থেকে বাম পাশের বিচ ধরে হাঁটলেই পাবেন দ্বীপের উত্তর পাশের নারকেল জিঞ্জিরা।
  • পশ্চিম পাশে রয়েছে কোরাল দ্বীপ।
  • ছেঁড়াদ্বীপ, যা বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিনের শেষ স্থলভাগ।
  • বাজার থেকে পাকা রাস্তা ধরে হেঁটে অবকাশ হোটেল পর্যন্ত স্থানীয়দের বাসস্থান ও জীবন ধারা দেখতে পারবেন।

যেভাবে সেন্টমার্টিন যাবেন

ঢাকা থেকে বাসে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায়। আর সেখান থেকে সরাসরি সেন্টমার্টিনে চলে যাওয়া যায়। আবার ঢাকা থেকে কক্সবাজার, তারপর টেকনাফ এবং টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়। আর কক্সবাজার থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া যায়।

ঢাকা থেকে বাসে করে সরাসরি টেকনাফ যাওয়া যায়। ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে শ্যামলী সেন্টমার্টিন পরিবহন, ঈগল, এস আলম, মডার্ন লাইন, গ্রীনলাইন ইত্যাদি বাস সরাসরি টেকনাফ যায়।ঢাকা থেকে বাসে করে টেকনাফ যেতে ১০-১২ ঘন্টা সময় লাগে।  ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ৯০০-২০০০ টাকা।

ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে কিছু সময় বেশি লাগে এবং ভাড়া ও বেশি হয়ে থাকে। ঢাকা থেকে কক্সবাজার গেলে তারপর টেকনাফ গিয়ে সেখান থেকে সেন্টমার্টিন দ্বীপে যাওয়া যায়।  কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বাসের ভাড়া ১৫০ টাকা এবং সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা। টেকনাফ পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় দুই ঘণ্টা।

আবার টেকনাফ হতে সেন্টমার্টিনের দুরত্ব ৯ কি.মি। টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিনে যাত্রা করতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা থেকে আড়াই ঘণ্টা। টেকনাফ হতে সেন্ট মার্টিন পর্যন্ত গ্রীন লাইনের ওয়াটার বাস, এল সি কুতুবদিয়া, কাজল, কেয়ারী সিন্দবাদ সহ বেশ কয়েকটি জাহাজ বা সী-ট্রাক চলাচল করে। এছাড়াও ট্রলার ও স্পীড বোটে করে যাওয়া যায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে।জাহাজের শ্রেনীভেদে আপডাউন ভাড়া ৯০০ -১৬০০ টাকা।

খাওয়াদাওয়া করবেন কোথায়

এখানে প্রায় সকল আবাসিক হোটেলে রেস্টুরেন্ট রয়েছে। সেখান থেকে খাওয়া দাওয়া করে নেয়া যাবে। আর সেন্টমার্টিনের সবচেয়ে সুস্বাদু খাবার হলো ডাব। তাই এখানকার ডাব খাওয়া মিস করা যাবে না। এছাড়াও মাছের বারবিকিউ করে খেতে পারেন কারণ অনেক ধরনের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায় এখানে। বাজারে সব হোটেলেই মাছ সাজিয়ে রাখা হয় সেখান থেকে তাদের বললে বারবিকিউ করে দেয়। আর এখানকার চিংড়ি ও ক্র্যাব ফ্রাই ও খুবই সুস্বাদু। এছাড়াও এখানে রয়েছে অফুরন্ত লইট্টা,কাচকি,ছুরি, রূপচাঁদা ইত্যাদি মাছের শুঁটকি। আর যদি গরমের দিনে সেখানে যান তবে সেখানকার তরমুজ একবার খেয়ে দেখতে পারেন।

কোথায় থাকবেন

সেন্টমার্টিনে থাকার জায়গার মধ্যে ভাল, মাঝারি, সাধারণ সব ধরনের হোটেলই আছে।এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো –

  • ব্লু মেরিন
  • প্রাসাদ প্যারাডাইস
  • অবকাশ
  • সমুদ্র বিলাস (হুমায়ুন আহমেদ)
  • নীল দিগন্ত রিসোর্ট
  • লাবিবা বিলাস রিসোর্ট
  • ড্রিম নাইট রিসোর্ট  ইত্যাদি।

সেন্টমার্টিন ভ্রমণ প্যাকেজ

সেন্টমার্টিনে ভ্রমনের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ রয়েছে যার দামও ভিন্নতা রয়েছে।  সর্বনিম্ন ২ জন হলেই এই প্যাকেজের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন ঘুরে আসতে পারবেন। এছাড়াও কাপল প্যাকেজ ও রয়েছে।

প্যাকেজ গুলোতে আসা যাওয়ার বাস টিকেট, প্রতিবেলার খাবার (মাছের বারবিকিউ সহ), রিসোর্টের খরচ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত থাকে।  প্যাকেজগুলো ২ দিন বা ৩ দিনের হয়ে থাকে।

প্যাকেজের খরচ

তিন দিনের প্যাকেজ হলে জনপ্রতি ৫-৭ হাজার টাকা হতে পারে। আর যদি দুই দিনের প্যাকেজ হয় তবে ৩-৪ হাজারের মধ্যে হয়ে যাবে। আর যদি বিজনেস ক্লাস এসি বাসে করে যেতে চান তবে খরচ তুলনামূলক বেড়ে জনপ্রতি  ৮-৯ হাজার খরচ হতে পারে।

যাওয়া আসার বাসের টিকেট, শিপের টিকেট, রিসোর্ট বুকিং ইত্যাদি যাদের কাছে ঝামেলার মনে হয় তারা এই ট্যুর প্যাকেজ নিয়ে সেন্টমার্টিন ঘুরে আসতে পারেন।

 

 

Porjotonlipi Desk

Add comment