Porjotonlipi

ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ

সুরা মসজিদ এর ইতিহাস সত্যিই অনেক বিস্ময়কর। আজকে আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব যার ঐতিহাসিক সুরা মসজিদ যা দিনাজপুরে অবস্থিত। এই মসজিদের নির্মাণ ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে বিচিত্র মতামত ও বর্ণাঢ্য ইতিহাস।

দিনাজপুরের সুরা মসজিদ

Sura-Mosque1

সুরা মসজিদ এর অবস্থান:

দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট ইউনিয়নের চৌগাছা মৌজায় (হিলি রোড) অবস্থান করছে প্রাচীন এই মসজিদটি। ঘোড়াঘাট উপজেলা কেন্দ্র থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে গেলে পাকা রাস্তায় উত্তর ধারে ৩৫০ – ২০০ গজ আয়তন বিশিষ্ট বিশাল পারওয়ালা দিঘির ধারে এই মসজিদটি অবস্থিত।

Sura-Mosque2

নামকরণ:

এই মসজিদটিকে একেকজন একেক নামে ডাকেন এবং এর নির্মাণ নিয়ে রয়েছে বিভিন্ন মতামত। কেউ কেউ একে বলেন সৌর মসজিদ, কেউ বলেন সুরা মসজিদ, আবার কেউ বলেন শাহ সুজা মসজিদ। সুর শব্দের অর্থ হলো অপদেবতা বা জ্বীন। স্থানীয়দের মতে এক রাতের মধ্যে জিনেরা এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিল, তাই এর নাম হয়েছে সুরা মসজিদ। আর সৌর শব্দের অর্থ আসমানী বা গায়েবী অর্থাৎ লোক চক্ষুর আড়ালে যা ঘটেছে তাই হল গায়েবী। কেউ কেউ এই মসজিদ কে সৌর মসজিদ  বলেন কারণ তাদের ধারণা গায়েবীভাবে এই মসজিদটি তৈরি হয়েছিল। আবার মুরুব্বীরা এটাও বলেন যে মুঘল আমলে বাংলার নবাব শাহ সুজা এই মসজিদ নির্মাণ করেন, তাই তারা একে শাহ সুজা মসজিদ বলে ডাকেন। এমন ধরনের আরো অনেক কথা লোকমুখে শোনা যায়। তবে এ নির্মাণ ও গঠনশৈলী দেখে ধারণা করা যায় যে সম্রাট শাহ সুজার ক্ষমতা গহণের অনেক আগে এটি নির্মিত হয়েছে। আর যেহেতু এই মসজিদটি কোন শিলালিপি নেই তাই গঠনশৈলীর উপর ভিত্তি করেই সম্ভাব্য নির্মাণকাল বের করা হয়। স্থাপত্যশৈলী ও নির্মাণ কলাকৌশল পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ধারণা করা যায় বাংলা নবাব হোসেন শাহী আমলের নিদর্শন এটি। তাছাড়া ইতিহাসবিদ অধ্যাপক দানী একে গৌড়ের সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত বলে অনুমান করেন। আবার কারো কারো মতে এটি সুলতানি আমলে ১৪৯৩ থেকে ১৫১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে নির্মিত।

Sura-Mosque3

বৈশিষ্ট্য:

এক গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের সম্মুখভাগে রয়েছে একটি বারান্দা। মসজিদের প্রতিটি কোণে রয়েছে অষ্টভুজ এবং মসজিদ একটি চত্বরের উপর নির্মিত । এর বাইরের দিকের আয়তন উত্তর-দক্ষিণে ৪০ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ২৬ ফুট। ৪ ফুট উঁচু প্লাটফর্মের উপর এর কাঠামো গড়ে উঠেছে এর প্রধান কক্ষের আয়তন ভিতরে প্রায় ১৬’১৬ ফুট। প্রধান কক্ষের সাথে যুক্ত আছে ৬ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। মসজিদের বাইরের দেয়ালের গায়ে ছোট ছোট খোপকাটা টেরাকোটা অলঙ্করণ ইমারতটির বাহ্যিক সৌন্দর্য্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। এই বহির গাত্রে গোলাপ ও লতাপাতার নকশা খচিত পোড়ামাটির কারুকাজ রয়েছে। জ্যামিতিক আকৃতির কিছু নকশা ও লক্ষ করা যায়। এই নকশাগুলোই একে মানুষের কাছে আরো দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। মসজিদের পাশে একটি পুকুর রয়েছে যেখানে মুসল্লিগণ অজু করে থাকেন। আর এই পুকুরের চারপাশে রয়েছে কবরস্থান। অন্যদিকে শুক্রবারে মুসল্লিদের জন্য এখানে সিন্নি বা তবারকের ব্যবস্থা করা হয়।

প্রত্যাশা:

আমাদের দেশের অনেক স্থানে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্থাপনা আজ বিলীন হবার পথে। তাই বিরল এই স্থাপনা আজ অজান্তে অবহেলায় ধ্বংস হওয়ার আগেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, যাতে করে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের ইতিহাস কে জানতে পারে।

কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর ফাতিহা তাহিয়াত 

 

Porjotonlipi Desk

1 comment