বন্ধুরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব বাংলার অহংকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত এর স্মৃতি বিজড়িত মধুপল্লী ও তাঁকে নিয়ে কিছু কথা। মধুপল্লী স্থাপিত হয়েছে মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের পরিবারের সাগরদাঁড়িস্থ আবাসস্থলটি ঘিরে। বাংলা সাহিত্যের আধুনিকতার আলোকবর্তিকা মাইকেল মধুসূদন দত্ত ১৮২৮ খ্রিস্টাব্দের ২৪ জানুয়ারি শনিবার যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাড়ী গ্রামে এক ধনাঢ্য পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে মহাকবির এই পৈত্রিকবাড়ীটি একটি প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সাগরদাঁড়িতে আগত যে কোন পর্যটক মহাকবির পৈত্রিক বাড়ী ও তাঁর বাল্যকালের স্মৃতি বিজড়িত স্থানসমূহ দর্শন করতে পারবেন।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও তাঁর মধুপল্লী
মাইকেল মধুসূদন দত্ত ও তাঁর ইতিহাস
কবির প্রপিতামহ রামকিশোর দত্ত ছিলেন খুলনা জেলার তালা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের অধিবাসী। তাঁর পিতামহ রামনিধি দত্ত ছোট ভাইদের নিয়ে মামার বাড়ি সাগরদাঁড়িতে চলে আসেন। রামনিধির চার ছেলের মধ্যে রাধামোহন আদালতের সেরেস্তাদার, মদনমোহন মুন্সেফ, দেবীপ্রসাদ ও রাজনারায়ণ উকিল ছিলেন। রাজনারায়ণ দত্ত কলকাতায় ওকালতি করে প্রচুর অর্থশালী হয়েছিলেন। তিনি সাগরদাঁড়িতে জমিদারি ক্রয় করেন ও বাড়িতে কিছু অট্টালিকা ও দেবালয়টি স্থাপন করেন। অপূর্ব নির্মাণশৈলীর সেই দেবালয়টিতে প্রতিবছর দুর্গাপূজা হয়। এ বাড়ির পূর্ব-পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে তার জ্ঞাতিদের বাড়ি ও জমিদারির কাছারি। মধুসূদনের ভ্রাতুষ্পুত্রী কবি মানকুমারী বসু পশ্চিম পার্শ্বের বাড়িটিতে জন্ম নিয়েছেলেন। ১৯৬৮ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বাড়িটি সংস্কার করে এবং ১৯৯৬-২০০১ সালে এলাকাটি দেয়াল বেষ্টিত করে একটি কুটিরের আদলে গেট, একটি মঞ্চ এবং দুটি অভ্যর্থনা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। এ সময় বাড়ির সমুদয় স্থাপনাকে পুনঃসংস্কার করে বর্তমান রূপ দেয়া হয়।
মধুপল্লীর বর্তমান পরিস্থিতি
মধুসূদনকে ঘিরে এখানে গড়ে উঠেছে জেলা পরিষদের ডাকবাংলো, সাগরদাঁড়ি পর্যটন কেন্দ্র, মধুসূদন মিউজিয়াম। কপোতাক্ষের পাড়ে কবির স্মৃতি বিজড়িত কাঠবাদাম গাছ ও বিদায় ঘাট পর্যটকদের আকর্ষণ করে। কথিত আছে ১৮৬২ সালে কবি যখন সপরিবারে সাগরদাঁড়িতে এসেছিলেন তখন ধর্মান্তরিত হওয়ার কারণে জ্ঞাতিরা তাঁকে বাড়িতে উঠতে দেয় নি। তখন কবি এ কাঠবাদাম গাছের তলায় তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন অবস্থান করে, বিফল মনে কপোতাক্ষের তীর ধরে হেঁটে বিদায়ঘাট হতে কলকতার উদ্দেশ্যে বজরায় উঠেছিলেন।
অনুভূতি ও চিন্তার অপূর্ব বাস্তবায়নের নবরূপকার মাইকেল মধুসূদন দত্ত এবং বাংলা সাহিত্য যেন একই বৃন্তে ফুটে থাকা দু’টি ফুল। সাহিত্যের গতানুগতিক আদর্শ উৎখাত করে নতুন আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন মাইকেল মধুসূদন দত্ত। নাতিদীর্ঘ জীবনের ভেতর মাইকেল যে আত্মপ্রত্যয় ও আত্মদ্রোহের ছাপ বাংলা সাহিত্যে রেখে গেছেন তা অসাধারন এবং অবিস্মরনীয়। ছন্দের নানা মাত্রিক পরীক্ষা মিল-বিন্যাস অমিলতা ও যতি স্বাধীনতা দিয়ে মাইকেল বাংলা কবিতার সীমানাকে বহুদূর প্রসারিত করেছে। বাংলা সাহিত্যকে এতদিন যে লোহার বেড়ীর মত পায়ে শিকল পরিয়ে রাখা হয়েছিল-সোনার কাঠির স্পর্শে মধুসূদন নিদ্রিত রাজকন্যার ঘুম ভাঙ্গালেন।
সাহিত্যে শর্মিষ্ঠা, পদ্মাবতী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, কৃষ্ণকুমারী, একেই কি বলে সভ্যতা, তিলোত্তমা সম্ভব, মেঘনাদ বধকাব্য, ব্রজাঙ্গঁনা কাব্য, বীরাঙ্গনা কাব্য তাঁর অনবদ্য অবদান। তাঁর লেখা বাংলা সাহিত্যকে দিয়েছে আলাদা রূপমাধুর্য্য যা বাঙ্গালীকে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। বাংলাসাহিত্যের এ ক্ষণজন্মা পুরুষ মৃত্যু বরণ করেন ১৮৭৩ সালের ২৯,জুন রবিবার।
তদানীন্তন সরকার কবির বাড়িটি ১৯৬৫ সালে ২৬ অক্টোবর পুরাকীর্তি হিসেবে ঘোষণা করে। মধুসূদনের পরিবারের ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে এ বাড়িতেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মধুসূদন জাদুঘর এবং লাইব্রেরি।
Add comment