Porjotonlipi

আমি বাংলাদেশ দেখেছি: শাহপরীর দ্বীপ (ভ্রমন কাহিনী)

আমি প্রথমবার শাহপরীর দ্বীপ যাই ২০১৬ সালের ২৮ মার্চ। আমি ২০১৬ সালের ১২ ফ্রেব্রুয়ারী থেকে ২৮ মার্চ পায়ে হেঁটে তেঁতুলিয়া থেকে টেকনাফ ভ্রমণ করি। আমার ইভেন্ট এর নাম ছিলো ‘‘দেশদেখা’’ আমার স্লোগান ছিলো ‘‘দেখবো বাংলাদেশ গড়বো বাংলাদেশ’’। আমার পার্টনার ছিলো বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন আর স্পন্সর ছিলো ট্যুর ডট কম ডট বিডি নামের একটি কোম্পানী।

শাহপরীর দ্বীপ

Shahpori-Dwip
Shahpori-Dwip

ভ্রমণ কাহিনী

এখান থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত জায়গাকে বলে বাংলা চ্যানেল। ইংলিশ চ্যানেলের মতো খরস্রোতা নাহলে সামুদ্রিক এই চ্যানেল পার হওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং। সৌখিন সাতারু ও এডভেঞ্চার প্রিয় অনেকেই এটি পাড়ি দিয়েছেন।
দ্বিতীয় বার শাহপরীর দ্বীপ ভ্রমণ করি একই বছর ২৪ ডিসেম্বর। এবার অবশ্য পায়ে হেঁটে নয়। এবার সেন্টমার্টিন বেড়াতে গিয়ে ফেরার সময়। শাহ পরীর দ্বীপ হয়ে ফিরলাম। সেন্টমাটিনে আমরা পৌঁছি ২৩ ডিসেম্বর, সে রাতটা দ্বীপেই কাটাই। আমাদের ফিরতি টিকেট সত্বেও আমরা ‍পরের দিন জাহাজে না উঠে একটা স্প্রিডবোট ভাড়া করে শাহপরীর দ্বীপ চলে আসি, সেখান থেকে সিএনজিতে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে কক্সবাজার।

Shahpori-Dwip
Shahpori-Dwip

কিছু কথা

শাহপরীর দ্বীপ। বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সর্বদক্ষিনের অংশ। টেকনাফ উপজেলার সাবরাং ইউনিয়নের কয়েকটি ওয়ার্ড নিয়ে শাহপরীর দ্বীপ গঠিত।
এই দ্বীপের লোকসংখ্যা ৪০ হাজারের মতো। এদের প্রধান পেশা মাছধরা ও লবণ চাষ।
দ্বীপে হাট-বাজার স্কুলে মাদ্রাসা মসজিদ সবিই আছে। নেই শুধু ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা আর দ্বীপবাসির আকাংখার বেড়ীবাঁধ।

শাহপরীর দ্বীপ দর্শন

সেন্টমার্টিন থেকে শাহপরীর দ্বীপ ২৫ মিনিটের মতো সময় লেগেছিলো সাগরের জলরাশির মধ্য দিয়ে আসতে। শীতকাল সমুদ্র ছিলো শান্ত। তাই দলে নারী ও শিশু থাকলেও যাত্রায় কোনো বেগ পেতে হয়নি।
তিনদিনের সরকারী ছুটি থাকায় সেন্টমার্টিনে প্রচুর ভিড় ছিলো তাই বোটের জন্য দ্বিগুন টাকা গুনতে হয়েছিলো এই যা। পথে গোলারচরে নামলাম সেখানে ৫ মিনিটের বিরতি নিয়ে কিছু ছবি তুললাম। নির্জন দ্বীপ বলা যায়।
ছোট দ্বীপ হয়তো কয়েকটা স্টেডিয়ামের সমান হবে। চারদিকে ধুধু বালুকারাশি, তিনদিকেই সমুদ্র মানে এখানে সূর্যোদয় বা সূর্যাস্ত সব দেখা যাবে। আর দেখা পেয়েছিলাম টকটকে লাল কাঁকড়ার।
সাদা সাদা চোখ বের করে লাল কাঁকড়াগুলো বালুময় সৈকতে ঘুরে বেড়ায় কারো আগমণ টের পলেই ঢুকে পড়ে গর্তে। আমার মনে হয়েছিলো। কোনো প্রেমিকযুগল যদি পূর্নিমারাতে এখানে বসে
হৃদয়ের কথাগুলো বলতে বলতে রাত পার করে দিতে পারে। হয়তো সে রাতটি হবে স্বর্গীয় অনুভূতির এক নির্মল স্মৃতি।

Shahpori-Dwip
Shahpori-Dwip

ঘাটে আসলাম আমরা। সেখানে আমাদের বরণ করলেন বন্ধুবর জসীম মাহমুদ। তিনি শাহপরীর দ্বীপের বাসিন্দা। তাজা মাছ কিনলেন জেলেদের কাছ থেকে। সমুদ্রের জীবিত মাছ। মাছগুলো তখনো লাফাচ্ছে।
সেদিন শত অনুরোধ সত্বেও তার বাসায় বেড়ানো গেলোনা। খাওয়া হলো না তাজা সামুদ্রিকমাছ। তবে সাময়িক বিরতি নিয়ে তার বাসায় বসে চা নাস্তা, নুডলস আর লবণ ও হলদি মাখা আড়ালু সেদ্ধ কিন্তু আমার বেশ লেগেছে।

বেশী বসা হয়নি কারণ আমাদেরকে কক্সবাজারে ফিরতে হবে। চলবে ডট কম এর এই ট্যুর টিম যখন শাহপরীর দ্বীপের পাশের জেলে পাড়ার সারি সারি কুঁড়েঘর পেরিয়ে আসছিলো তখন জোয়ার বেলা।
আর ডানপাশে থাকা সৈকতের গাছগুলো তখন বুক সমান পানিতে ডুবে রয়েছে কিছু সময়েরে জন্য। পানির উচ্চতা একটু একটু করে বাড়ছে। তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেই অপার্থিব দৃশ্যের সৌন্দর্য।

জেলেপাড়া পারহলেই আকাঁবাঁকা আর এবড়ে থেবড়ে পথের দুধারে লবণক্ষেত। লবণক্ষেতের মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে ছোট ছোট শাখা নদী তারপাশে রয়েছে আবার নোনা সহনশীল গাছগুলো।
এখানে দেখা মিলে কিছু মাছের। রয়েছে চকচকে সাদা বুকের পাখি গাঙচিল। যেগুলো একটু খাবারের লোভে নৌকা বা শিপের পিছু পিছু চলে যায় মাইলের পর মাইল।

Shahpori-Dwip
Shahpori-Dwip

লবণক্ষেতের রাস্তায় সেদিন দেখেছি সূর্যের অস্তপালা। দূরে, বহুদূরে ছিলো টেকনাফের নোয়াপাড়া, দিগন্তজুড়ে সাগরবক্ষ জড়ানো আকাশ আর নি:সীম নিরবতার মাঝে একটু পর পর
একটি করে সিএনজি চলে যায়। সেদিন টেকনাফে বসে টেকনাফ নিউজ ডট কম এর অফিসে চা খেয়ে টেকনাফে মাথিনের কূপ দেখে ঢাকায় ফিরেছিলাম।

আর আমরা দলের সবাই সাথে নিয়ে ফিরছিলাম শাহপরীর দ্বীপের ভিন্নরকম এক সুন্দরের স্মৃতি। এবড়েথেবড়ে আঁকাবাঁকা উচুনিচু রাস্তা, কিংবা স্পিডবোটের বাড়তি ভাড়ার কথা আমাদের মনেই রইলো না।
বরং আফসোস হলো, কেনযে একটি দিন আর একটি রাত শাহপরীর দ্বীপে বেড়ানো গেলো না। আশা করি পরের বার গেলে শাহপরীর দ্বীপে রাত কাটাবোই। গোলার চরে বসে জোসনা দেখা মিস করা যাবে না।
কারণ জীবনতো একটাই। চাইলেতো আবার পৃথিবীতে আসা যাবে না। গোলার চরে জোসনা দেখার জন্য।

Shahpori-Dwip
Shahpori-Dwip

কিভাবে যাবেন শাহপরীর দ্বীপ?

কক্সবাজার থেকে বাস যায় টেকনাফ শহরে। সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। বর্ষকালে একটু হেরফের হয়। ভাড়া জনপ্রতি ১৪০ টাকা। আশি কিলোমিটার পথ সময় লাগে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা।
টেকনাফ থেকে শুকনো মৌসুমে সিএনজি ছাড়ে জনপ্রতি ১০০ টাকা। সময় লাগে ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। বর্ষাকালে অর্ধেকপথ গিয়ে নৌকা বা ট্রলার নিতে হয়। ভাড়া ২০/৩০ টাকা।
শাহপরীর দ্বীপ জেটির সামনে সিএনজি থেকে নামবেন।গোলার চরে হেঁটেই যেতে পারবেন। চাইলে রিকশা বা সিএনজিও নিতে পারেন। বা নৌকাও।

কোথায় থাকবেন?

এখানে এলজিইডির একটি বাংলা রয়েছে। আগে থেকে যোগাযোগ করলে থাকতে পারবেন। ওখানে গিয়েও উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে থাকতে পারবেন। তবে আগে থেকে যোগাযোগ না করলে কেয়ার টেকারকে পাবেন না। পরে সমস্যা হতে পারে।

কি খাবেন?

এখানে একটি প্রধান বাজার আছে। তাছাড়া বাংলোর সামনেই রয়েছে রেস্টুরেন্ট এখানে সবকিছু পাবেন খাবার হিসেবে। সামুদ্রিক মাছ খেতে চাইলেও সমস্যা নেই। চাইলে জেলেদের কাছ থেকে মাছ কিনে হোটেলে দিলে তারা রান্না করে দেবে।

সর্তকতা

১. কোথাও বেড়াতে গেলে সেখানকার আবহাওয়া, ইতিহাস, নিরাপত্তা, রাজনীতি, ধর্ম, সংস্কৃতি ইত্যাদি সম্পর্কে জেনে নেবেন।

২. স্থানীয় মানুষের জীবন ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেন।

৩. নিজের ভোটার আইডি কাডের কপি সাথে রাখবেন।

৪. মোবাইল ব্যালেন্স, নগদ টাকা, মোবাইল চার্জ যথাযথ কিনা দেখে নেবেন।

৫. যানবাহনের সময়সূচি জেনে নেবেন সে অনুসারে চলাচল করবেন।

কন্টেন্ট রাইটারঃ জাহাঙ্গীর আলম শোভন

 

 

Porjotonlipi Desk

2 comments