Porjotonlipi
ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

অনেকেই প্রশ্ন করেন এই যে বাজারে এত ইলিশ, ইলিশের বাড়ি কোথায়? এক কথায় উত্তর দিতে হলে বলতে হবে ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর। বন্ধুরা পর্যটনলিপি আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরবে মেঘনা কন্যা চাঁদপুর কে। ঢাকা থেকে আপনি খুব সহজেই চাঁদপুর যেতে পারবেন। বাস এবং লঞ্চ উভয় পথেই চাঁদপুর যেতে পারবেন। সায়েদাবাদ থেকে প্রায় প্রতি ঘণ্টায় আপনি বাস পাবেন, এর মধ্যে পদ্মা এক্সপ্রেস, বিলাশ এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। তবে স্থল পথে যাওয়াটা খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। আপনি চাঁদপুর যেতে চাইলে অবশ্যই নদীপথ বেঁছে নিন। সদরঘাট থেকে সকাল ৭টা ২০ মিনিট থেকে রাত ১২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রায় প্রতি ঘণ্টায় লঞ্চ রয়েছে। তবে সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটের পর আবার রাত ১১.০০ টায় লঞ্চ পাবেন। এই রুটের অধিকাংশ লঞ্চই নিরাপদ ও আরামদায়ক।

ইলিশের বাড়ি চাঁদপুর

Roktodhara

ইলিশের দেশ চাঁদপুর

মেঘনা কন্যা চাঁদপুরকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে। কেউ বলেন, ‘রূপসী চাঁদপুর’, কেউ বলেন ‘ইলিশের দেশ চাঁদপুর’। আবার কেউ চাঁদ সওদাগরের সপ্তডিঙ্গা মধুকরের পালতোলা জাহাজের নোঙর খুঁজে বেড়ান চাঁদপুর জনপদে। এভাবেই নানাজনের নানা ভাবনায় সুদীর্ঘ সময়ের পথ পরিক্রমায় ঐতিহ্য আর আদর্শের নীরব সাক্ষী চাঁদপুর। মেঘনা-ডাকাতিয়া আর ধনাগোদা নদীর জলধারায় বিধৌত দেশের অন্যতম বাণিজ্য বসতির জনপদ এই শ্যামলী চাঁদপুর। এই জেলার সদর দপ্তরও চাঁদপুর নামক শহরে অবস্থিত। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌবন্দর এই শহরটিকে ঘিরে গড়ে ওঠেছে।

হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ এই চাঁদপুর

চাঁদপুর নামে জনপদ হাজার বছরের পথচলায় প্রত্যক্ষ করেছে প্রকৃতির নানা লীলাখেলা। ভূমিকম্প, বন্যা আর নদীর ভাঙ্গনে বারে বারে বিপর্যস্ত হয়েছে কিন্তু কোনো শক্তির দাপটের কাছে হার মানেনি চাঁদপুর, সে মানুষই হোক কিংবা প্রকৃতি। ঐতিহ্যবাহী এক সময়ের মহকুমা শহর, ‘‘Gate way of Eastern India” আজকের জেলা চাঁদপুর। শত নয়, হাজার বছরের প্রাচীন জনপদ এই চাঁদপুর। বাংলার স্বাধীন সুলতানদের সময় থেকে প্রাচীন বাংলার এক সমৃদ্ধ নগরী চাঁদপুর। বিশিষ্ট চাঁদ ফকির, জমিদার চাঁদ রায় ও ধনাঢ্য বণিক চাঁদ সওদাগরের নামে এ ত্রয়ীযুগলবন্দীতে নামাঙ্কিত চাঁদপুর। এ যুগলবন্দীর নামের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকালে প্রথমেই দৃষ্টিগোচর হয় পুরন্দপুর গ্রাম ও চাঁদ ফকিরের স্মৃতি। কোড়ালিয়া ও পুরন্দপুর গ্রামে চাঁদ ফকির এলমে তাসাউফের বায়াত দিতেন। একদা কোড়ালিয়া গ্রামে তাঁর বাস ছিলো। চাঁদপুরের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে রয়েছে হাজার হাজার প্রত্নসম্পদ।

Borostation_Chandpur

 

ঢাকা থেকে চাঁদপুর নৌ পথে যেতে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টা সময় লাগে। আপনি চাইলে দিনে দিনেই চাঁদপুর থেকে গিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। চাঁদপুরের লঞ্চ ভাড়া শ্রেনী ভেদে ১০০ থেকে ২০০০ টাকা হয়ে থাকে। এখন সিদ্ধান্ত আপনার, কিভাবে যেতে চান আপনি। একটা কথা বলে রাখি চাঁদপুরে লঞ্চ ভ্রমনে জ্যোৎস্না রাতের যে সৌন্দর্য, তা কোনভাবেই মুখে বলে বর্ণনা করা যাবে না।

চাঁদপুরের বিখ্যাত স্থান

চাঁদপুরে দর্শনীয় স্থান কিংবা বিনোদনকেন্দ্রগুলোর মধ্যে বড়স্টেশন বা মোলহেড অন্যতম। চাঁদপুরের এই বড়স্টেশন এলাকাটি চাঁদপুরবাসীর এক মিলনকেন্দ্র এ যেন এক বিশাল আড্ডাখানা। এই জায়গাটির বিশেষত্ব হলো তিন নদীর (পদ্মা, মেঘনা ও ডাকাতিয়া) মোহনা। তিনটি নদী—ডাকাতিয়া, মেঘনা ও পদ্মা সমানতালে পিঠাপিঠি বয়ে চলছে অথচ কেউ কারও সঙ্গে মিশছে না। ঘোলা সাদা পানি আর স্বচ্ছ কালো পানির এই নিরবচ্ছিন্ন বয়ে যাওয়ার দৃশ্য যে কারও মন ছুঁয়ে যাবে। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় যে বিষয়টি সেটা হল গোধুলিবেলা। সূর্যাস্তের সঙ্গে খাঁজকাটা মেঘের মিতালি সৃষ্টি করে অসাধারণ এক সৌন্দর্যের। চাঁদপুরের বড় স্টেশনের বিকেলের এই সূর্যাস্ত হার মানাবে অনেক সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্যকেও। বিশ্বাস না হলে নিজের চোখে দেখে আসুন (বিফলে মূল্য ফেরত)। সেখান থেকে দাঁড়িয়ে আপনি দূরে দেখতে পাবেন চর রাজরাজেশ্বর যা স্থানীয় ভাষায় লগ্নিমারা চর নামে পরিচিত। ট্রলারে চড়েই আপনি চলে যেতে পারেন সেইখানে। সময় কম বেশি ৪০ মিনিট লাগবে (জোয়ার – ভাটার উপর নির্ভর করে)। আর ভাড়া ৫০০ – ১০০০ (আপ – ডাউন)। নদীতে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানো আর রাজরাজেশ্বরের বালুচরে হেঁটে চলা যেন সমুদ্রসৈকতের তৃপ্তি এনে দিবে আপনার মাঝে।

ব্রিটিশ শাসনামলে চাঁদপুর ছিল তৎ কালীন পূর্বভারতীয় উপমহাদেশের প্রবেশদ্বার। এ জেলা তখন থেকেই বেশ সমৃদ্ধশালী। তবে যেটির জন্য সমৃদ্ধশালী সেটি আর অন্য কিছু নয়, আমাদের জাতীয় মাছ ইলিশ। ইলিশের জন্য এখনো চাঁদপুর তার সুদীর্ঘ ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। এই ইলিশের জন্যই চাঁদপুরে গড়ে উঠেছে তিন ধরনের যোগাযোগব্যবস্থা। অনায়াসে একে ‘ইলিশপুর’-ও বলা যায়।

Hilsha Fish

চাঁদপুরের ইলিশ বাজার

ইলিশ কিনতে হলে আপনি সূর্যাস্তের পর পর চলে যাবেন বড়স্টেশনের মাছ বাজারে এবং সেখানে গেলেই আপনি সদ্য ধরে আনা ইলিশ মাছ পেয়ে যাবেন। তবে আপনি যদি ভাবেন যে এখান থেকে আপনি খুব সস্তায় মাছ কিনতে পারবেন তাহলে এটা হবে আপনার সবচেয়ে বড় ভুল। আকার ভেদে ইলিশ মাছের দাম ৮০০ টাকা থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে এখান থেকেই বাংলাদেশ তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ইলিশ মাছ সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ইলিশ ভাঁজা খেতে আপনি বিভিন্ন হোটেলে ঢু মারতে পারেন, তবে এর মান নিয়ে পর্যটনলিপি সন্দিহান। তবে জেলেদের সাথে যদি আপনি একটু ভাব জমাতে পারেন তাহলে তাদের হাতেই সুস্বাদু মাছ ভাঁজা খেতে পারবেন, যা আপনার জীবনে এক স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। বড়স্টেশনের মাছ বাজারের পাশেই মাছ ঘাটে আপনি তাদের পেয়ে যাবেন। তবে এই অভিজ্ঞতার সফলতা পুরোটাই আপনার উপর নির্ভর করে।
আর চাঁদপুরে থাকার জন্য বেশ কিছু ভাল মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। তাজমহল আবাসিক বোডিং, হোটেল রজনীগন্ধা, হোটেল প্রিন্স, হোটেল রিলাক্স ও হোটেল পূরবী এগুলোর মধ্যে অন্যতম।

চাঁদপুর থেকেও ফিরতি পথে সকাল সোয়া সাতটা থেকে রাত সোয়া বারোটা পর্যন্ত লঞ্চ পাবেন। তবে দুপুর ২টা ৪০ এর পর আবার রাত দশটায়। বন্ধুরা আপনারা যারা প্যাডেল স্টীমারে কখনো চড়েননি তারা প্যাডেল স্টীমারে করেও চাঁদপুরে আসতে পারেন। তবে এই ক্ষেত্রে সময় একটু বেশি লাগবে। বর্তমানে এটি সন্ধ্যা সাতটায় সদরঘাট থেকে নিয়মিত ছেড়ে যায়।
যে লঞ্চগুলো ঢাকা-চাঁদপুর পথে যাতায়াত করে, সেগুলোর মধ্যে রফরফ, প্রিন্স অব রাসেল, ঈগল, আল বোরাক, ময়ূর, সোনার তরী ও আবে জম জম অন্যতম।

আপনার মন্তব্য দিন

চাঁদপুর নিয়ে আমাদের এই প্রতিবেদন সম্পর্কে আপনাদের কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থাকলে আমাদের জানাতে পারেন। আর ভ্রমনের সময় এমন কিছু করবেন না যা আমাদের পরিবেশ, প্রকৃতি এবং সর্বোপরি আমাদের পর্যটন শিল্পের জন্য হুমকি স্বরূপ। আগামী পর্বে বাংলার আরো কিছু চমক নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হবো। আশা করছি পর্যটনলিপির সাথেই থাকবেন, ধন্যবাদ।

 

Porjotonlipi Desk

3 comments