Porjotonlipi

আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ

বলছি আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ এর কথা। বাংলাদেশের ৬৪ জেলার ছিমছাম, পরিপাটি জেলাগুলোর একটি সিরাজগঞ্জ জেলা। জেলাটিতে ঘুরে দেখার মত যেরকম কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, তেমনি রয়েছে নয়নাভিরাম অনেক মসজিদ। তথ্যসূত্র মতে, সিরাজগঞ্জ জেলায় সর্বমোট মসজিদ সংখ্যা ৩,৯১৬টি। তারই একটি বর্তমানের বহুল কথিত আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ

বাংলাদেশের মসজিদ তালিকায় এক নতুন সংযোজন, আল-আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ

বাংলাদেশে ব্যাক্তি মালিকানায় নির্মিত এমন এক দৃষ্টি নন্দন মসজিদ যেখানে একসাথে প্রায় ৭০০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। শ্বেত শুভ্র এই মসজিদটি প্রতিটি মুসল্লির ইবাদতে প্রশান্তি এনে দেয়। নির্মাণ কারুকাজ ও সৌন্দর্য দেখে নিঃসন্দেহে একে একটি বৃহৎ শিল্পকর্ম হিসেবে আখ্যায়িত করা যায়।

মসজিদ এর সূচনালগ্ন 

মসজিদের নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি উপজেলার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী সরকার  যিনি সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত অর্থায়নে ১ একর জায়গার ওপর মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। তিনি তার ছেলে আল-আমান এবং মাতা বাহেলা খাতুন  এর নামানুসারে মসজিদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। নির্মাণকাজের দীর্ঘ আট বছর পর ২০২০ সালের ২রা আগস্ট মসজিদ উদ্বোধনের ঠিক আগের দিন তিনি ইন্তেকাল করেন। পরবর্তীতে তার ছেলেরা মসজিদের বাকি নির্মাণকাজের সমাপ্তি করেন। ২০১২ সাল থেকে সুদীর্ঘ প্রায় ৯ বছর নির্মাণ কাজ চলার পর চলতি বছর অর্থাৎ ২০২১ সালের ২ এপ্রিল এই মসজিদটি সকল মুসমানদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।  জুমার নামাজের মাধ্যমে মসজিদে সর্বপ্রথম সালাত আদায় করা হয়।

অবকাঠামো এবং অন্দরমহল  

যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বর্তমানে সবকিছুর পাশাপাশি মসজিদ নির্মাণের ক্ষেত্রেও ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায়। আগের দিনের মসজিদগুলোতে গেলে দেখা যায় খুবই সাদামাটা গঠন এবং সামান্য অন্ধকারাচ্ছন্ন। কিন্তু বর্তমান যুগে যেসব মসজিদগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, সেগুলো কমবেশি দুইটি উদ্দেশ্য মেনে চলে। এক, নামাজ পড়া এবং দুই, দর্শনীয় স্থান হিসেবে প্রাধান্য পাওয়া। দ্বিতীয় উদ্দেশ্যের কথা চিন্তা করে মসজিদগুলোর অবকাঠামোর ওপর দেয়া হয় বিশেষ নজর।

এই মসজিদের ক্ষেত্রেও একই চিত্র। ১একর জায়গার ওপর আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত এই বিশাল মসজিদের রয়েছে মধ্যের বড় গম্বুজ সহ চারপাশে আরও আটটি গম্বুজ। রয়েছে ১১০ফিট উচ্চতার দুইটি বিশাল মিনার। ভিতরে রয়েছে মার্বেল এবং গ্রানাইট পাথরের দেয়াল এবং মেঝে, যেগুলো আমদানি করা হয়েছে ভারত, তুরস্ক এবং ইতালি থেকে। আলোকসজ্জার দিকেও দেয়া হয়েছে শৌখিনতার পরিচয়, যেগুলো আমদানি করা হয়েছে সুদূর চীন থেকে। মাঝখানের গম্বুজ থেকে আশেপাশের দেয়ালে জুড়ে দেয়া হয়েছে নানারকম টাইলসের মেলা। শুধু আয়তনের বিশালত্ব ই নয় এই মসজিদটি নির্মান শৈলী ও কারুকাজ একে করে তুলেছে অন্যান্য ৷ বিশেষ করে এর বড় বড় ঝাড়বাতি গুলো দৃষ্টি কাড়বে যে কারো ৷ এছাড়াও রয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাউন্ড সিস্টেম যার মাধ্যমে মুসল্লিগণ শুনতে পারেন মনমুগ্ধকর কুরআনের ধ্বনি।

ছবিঃ সংগৃহীত

মসজিদের অযুখানার বিষয়েও দেখা যায় ভিন্নতার পরিচয়। প্রধান ফটকের দুপাশে রয়েছে গোলাকার দুইটি চৌবাচ্চা, যেখানে আধুনিক পদ্ধতির পানি বিশুদ্ধকরন ফিল্টার রয়েছে। পানি কমতে থাকলে স্বয়ংক্রিয় ভাবেই ফিল্টারের মাধ্যমে পুনরায় চৌবাচ্চা পানিপূর্ণ হয়ে যায়।

পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের নামাজ পড়ারও বিশেষ সুবিধা রয়েছে। দৈনিক শ’খানেক মানুষ জমায়েত হয় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে। প্রায় ৭,০০০ মানুষের একসাথে নামাজ আদায় করার সুব্যবস্থা রয়েছে। মসজিদের নামাজ পরিচালনা কাজের জন্য নিয়োজিত আছেন দু’জন ইমাম এবং ছয়জন খাদেম। এছাড়া সম্পূর্ণ পর্দার মাধ্যমে পৃথকভাবে চাইলে যেকোন মুসল্লি নারী বা পুরুষ এখানে এসে ইবাদতে মত্ত হতে পারেন। এই মসজিদের প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ এর পর হাতের বাম পাশে নির্মাণ করা হয়েছে বাইলা খাতুন দাতব্য চিকিৎসালয়। যেখানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মাধ্যমে দরিদ্র রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়। প্রতিদিন এখানে শত শত দরিদ্র রোগী আসেন বিনামূল্যে উন্নত মানের চিকিৎসা পাওয়ার আশায় ।

সৌন্দর্যবর্ধন 

রাতের ঘড়িতে এই মসজিদ ধারণ করে এক ভিন্ন মাত্রার সৌন্দর্য। লম্বা ঝাড়বাতি এবং বিভিন্ন আলোকসজ্জায় মসজিদটি দেখতে আরও সুন্দর দেখায়। এই মসজিদে নামাজ আদায় করতে দূর দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অনেক মানুষ আসে এবং মসজিদের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যান।

ছবিঃ সংগৃহীত

মসজিদের চারপাশের সৌন্দর্য অক্ষুন্ন রাখতে অবিরত কাজ করে যাচ্ছে চুক্তিভিত্তিক বেশ কয়েকজন শ্রমিক।

কিভাবে যাবেন আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদ :

সিরাজগঞ্জ জেলা হতে ২০ কিলোমিটার দূরে এই মসজিদের বিচরণ। সিরাজগঞ্জের সায়দাবাদ মোড়ে নেমে সিএনজি অথবা অটো করে যাওয়া যাবে মসজিদ পর্যন্ত। সায়দাবাদ থেকে বেলকুচি ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। সি এন জি থেকে নেমেই আপনি পৌঁছে  যাবেন আল আমান বাহেলা খাতুন জামে মসজিদের প্রধান ফটকের সামনে।

সিরাজগঞ্জ বেড়াতে গেলে অন্যান্য দর্শনীয় স্থানের পাশাপাশি এই নয়নাভিরাম মসজিদও ঘুরে দেখে আসা যেতে পারে।

কন্টেন্ট রাইটারঃ ফাতেমা নজরুল স্নেহা ও নূর ফাতিহা তাহিয়াত

 

Porjotonlipi

Add comment