Porjotonlipi

হাওরের হাওয়ায় হাউশের হাউজবোট

হাউজবোট করে হাওর বেড়ানো, সুনামগঞ্জের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র টাঙ্গুয়ার হাওর। প্রায় সারাবছরই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের ভিড়ে মুখরিত থাকে এই হাওর। তবে বর্তমানে পর্যটকদের মূল আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে বর্ষার সিজনে।

হাউজবোট এক বিলাসীতা

এর মূল কারণ বিস্তীর্ণ নীল জলরাশি, উপরে নীল আকাশ- আর সে নীলের মধ্যে রাজহাঁসের মত ভেসে বেড়াতে থাকা রঙবেরঙে, ছোট বড় অসংখ্য বিলাসবহুল হাইজবোট। পর্যটকদের এই চাহিদাকে কেন্দ্র করে  হাওরের প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ভাসছে প্রায় অর্ধশত বিলাসবহুল হাউজবোট।

একসময় হাওর ভ্রমণে ঘাট থেকে দামাদামি করে ঠিক করতে হত ঘাটের বড় নৌকা। বাজার থেকে যাবতীয় মালামাল কিনে নৌকায় উঠতে হত, কিছু ক্ষেত্রে বাবুর্চিও খুঁজে নিত হত আলাদাভাবে। এছাড়াও নৌকায় থাকার ব্যবস্থা ছিল খুবই সাদামাটা। নৌকার পাটাতনেই ঘুমানোর আয়োজন করা হত। আলাদাভাবে ছিল না ওয়াশরুমের ব্যবস্থা ফলে পরিবেশটা অনেকের জন্যই ছিল বেশ অস্বাস্থ্যকর এবং অস্বস্তিদায়ক। তাই পরিবারসহ হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করা ছিল কল্পনাতীত।

তবে বর্তমান চিত্র সম্পূর্ণ আলাদা! প্রথমত, হাওর ভ্রমণের জন্য এখন আর তাহিরপুর পর্যন্ত যেতে হয় না, সুনামগঞ্জে পৌঁছেই পাওয়া যায় টাঙ্গুয়ার হাওরের নৌকা।

কুষ্টিয়ার শিলাইদহে পারিবারিক জমিদারি দেখাশোনার জন্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার প্রিয় বজরা নৌকায় ঘুরেছেন। অবসরে রাত্রি যাপন করছেন পদ্মা-গড়াই নদীর বুকে। শান্ত-শীতল জলের উপর ভেসে ভেসেই রচিত হয়েছে কত না মধুরতম গান-কবিতা-গল্পের লাইন। কালের পরিক্রমায় রবি ঠাকুরের সেই বজরার আদলেই তৈরি হচ্ছে এসব আধুনিক সুবিধা সম্মলিত হাউজবোট।

এই হাউজবোটগুলোর মাঝে আপনি পেয়ে যাবেন বিলাসবহুল হোটেল রুমের সমস্ত সুযোগ সুবিধা। প্রতিটি বিলাসবহুল হাউজবোটে ১২-২৪ জনের থাকার ব্যবস্থা থাকে। পাটাতনের বদলে বোটগুলোতে রয়েছে আলাদা খাট এবং কিছু ক্ষেত্রে আলাদা রুমেরও ব্যবস্থা পাওয়া যায়। এই হাউজবোটগুলোতে আরও আছে আধুনিক এবং স্বাস্থ্যকর ওয়াশরুমের সুব্যবস্থা। বিশেষ কিছু হাউজবোটে পাওয়া যায় আলাদা রুমের সাথে সংযুক্ত ওয়াশরুমও। অনেক হাউজবোট এখন সম্পূর্ণ শীততাপ নিয়ন্ত্রিতও। আবার কিছু জায়গায় দেখা যায় গোসলের জন্য বাথটাব কিংবা জাকুজিও!

একইরকম আধুনিক সুবিধা খাবার ম্যানুতেও, এখন আর আগে থেকে বাজার করে বোটে ওঠার ঝামেলা পোহাতে হয় না। বোটগুলোতেই দক্ষ বাবুর্চিদের মাধ্যমে প্রতিবেলায় রান্না করা হয় আঞ্চলিক খাবার ও হাওরের তাজা মাছ। এছাড়াও হাঁসের মাংস, টাটকা শাকসবজি এবং নানা পদের ভর্তার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে আপনার পছন্দমাফিক খাবারের মেনুও তারা তৈরি করে দিবে।

হাউজবোটগুলোতে দুই দিনের প্যাকেজ ট্যুরে রয়েছে প্রতিদিন তিন বেলা খাবার, বিকালের নাস্তা, আনলিমিটেড চা এবং পানি। হাওরে আসার দিন সকালের নাস্তা থেকে পরদিন সন্ধ্যায় ঘাটে ফিরে যাওয়া পর্যন্ত আপনি তাদের এই সেবা পাবেন।

মৌসুম ও হাউজবোট ভেদে প্যাকেজের খরচ নির্ভর করে, তবে এক রাত দুই দিনের একটি প্যাকেজে এসব হাউজবোটে ঘুরতে আপনাকে গুনতে হবে ৫-১০ হাজার টাকা।

টাঙ্গুয়ার হাওর এমন একটি স্বর্গীয় স্থান, যেখানে ভ্রমণের কথা চিন্তা করলেও আপনি পুলকিত হবেন। সারাদিন বারিক্কা টিলা, ওয়াচ টাওয়ার ও চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য্যের শহীদ সিরাজ লেক ভ্রমণের পর রাজকীয় হাউজবোটে জাদুকাটা নদীতে রাত্রি যাপন! নিশ্চিতভাবে বলা যায় হাওরের কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আপনার মনে থাকবে সারাজীবন।

কয়েক বছর আগেও পাহাড়, পানি আর আকাশের মোহনীয় সৌন্দর্য উপভোগ করতে পর্যটকদের পোহাতে হত নানা ধরনের বাধা। সেই বাধা-বিপত্তিতে এখন এসেছে অকল্পনীয় পরিবর্তন, চোখ জুড়ানো সৌন্দর্যে বিমোহিত হচ্ছে পর্যটকদের হৃদয়। একইসাথে এই সৌন্দর্য টিকিয়ে রাখার দায়িত্বও আমাদেরই। হাওরের স্বচ্ছতা, সৌন্দর্য যেন নষ্ট না হয় তার দিকে নজর দিতে হবে আমাদেরই। সৌন্দর্য আর আনন্দে ভরে উঠুক সবার জীবন।

 

রাইটার- ওমর মুহাম্মদ ফারুখ 

 

Porjotonlipi Desk

Add comment