Porjotonlipi

স্মৃতিঘেরা অপরূপ গাজীপুর

অপরূপ গাজীপুর নিয়ে ছোটবেলার রুপকথায় কিংবা হুমায়ন আহমেদের গল্পের বইসহ নানান জায়গায় আমরা শুনেছি তার কথা। নানান দর্শনীয় এবং ঐতিহাসিক স্থান নিয়ে ঘেরা এই গাজীপুর।

 অপরূপ গাজীপুর এর গর্জন

১০টি নদ-নদী নিয়ে ঘেরা গাজীপুরের আয়তন হলো ১৭৭০.৫৪বর্গকিলোমিটার। এর অধীনে রয়েছে কালিয়াকৈর, কাপাসিয়ার মত ব্যাস্ত উপজেলা। ভাওয়াল রাজপ্রাসাদ কিংবা জাগ্রত চৌরঙ্গীসহ আরো নানান স্থান নিয়ে ঘেরা এই গাজীপুর। ঢাকার অদূরে এই স্থান ভ্রমণে প্রতি বছরই দেশ বিদেশের নানান ধরনের মানুষের সমাগম ঘটে। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য কিংবা কৃত্তিম ভাবে বানানো নানান স্থাপনা সবকিছুই চেয়ে থাকার মত।ছোটবেলায় একবার গাজীপুর ন্যাশনাল পার্ক যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। তবে সেই স্মৃতি এখন মলিন প্রায়।কখনো আবার সুযোগ হলে আবার ঘুরে আসবো গাজীপুর সেই স্মৃতিগুলো পুনরায় তাজা করতে।চলুন জেনে নেই কি কি আছে ঘুরতে যাওয়ার মত। 

অপরূপ গাজীপুর এর দর্শনীয় স্থানসমূহ

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক

১। জাগ্রত চৌরঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা, গাজীপুর

২। ছয়দানা দীঘি ও যুদ্ধক্ষেত্র,  গাজীপুর

৩। ১৯স্মারক ভাস্কর্য, রাজবাড়ী, জয়দেবপুর

৪। মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি কর্ণার, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর

ঐতিহাসিক পূরাকীর্তি

১। রাজবাড়ী শ্বশান, জয়দেবপুর

২। ভাওয়াল রাজবাড়ী, জয়দেবপুর

৩। মীর জুলমার সেতু, কহরদরিয়া (টঙ্গী বাজার, টঙ্গী)

জমিদারবাড়ী

১। ভাওয়াল রাজবাড়ী, জয়দেবপুর

২। বলধার জমিদার বাড়ি, বাড়ীয়া

৩। পূবাইল জমিদার বাড়ী, পূবাইল

৪। কাশিমপুর জমিদার বাড়ী, গাজীপুর সদর

৫। দত্তপাড়া জমিদার বাড়ী, টঙ্গী

দীঘি ও বিল

১। হায়দ্রাবাদ দীঘি,হায়দ্রাবাদ,পূবাইল

২। ভাওয়াল কলেজ দীঘি, গাজীপুর সদর

৩। রাহাপাড়া দীঘি, গাজীপুর পৌরসভা

৪। রাজবিলাসী দীঘি, গাজীপুর

৫। বিল বেলাই, গাজীপুর সদর

ধর্মীয়স্থান ও সমাধিক্ষেত্র

১। ভাওয়াল রাজ শ্মশানেশ্বরী, জয়দেবপুর

পিকনিক স্পট

১। ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান, গাজীপুর সদর

২। নুহাস চলচ্চিত্র ও পর্যটন কেন্দ্র, মির্জাপুর

৩। হোতাপাড়া স্যুটিং স্পট, গাজীপুর সদর

৪। অনস্তধারা পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র, রাজেন্দ্রপুর, গাজীপুর  সদর

৫। নাগরী-পাঞ্জরী চার্চ, গাজীপুর

৬। সোহাগপল্লী

 এছাড়াও রয়েছে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক, মনপুরা পার্ক, নাগরী-টেলেন্টিনুর সাধুর গির্জা।

সোহাগপল্লী

কর্মব্যস্ত মানুষ নাগরিক জীবনে যখন হাপিয়ে উঠে তখন খুঁজে থাকে প্রশান্তির ছোঁয়া। তাই একটু অবসরে দ্রুত প্রকৃতির সান্নিধ্য পেলে মন্দ হয় না। যারা অল্প সময়ে এবং ঢাকার আসে পাশে থেকে ঘুরে আসতে চান তাদের জন্যে গাজীপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় মনোরম দৃশ্যমাখা গ্রামীণ পরিবেশে গড়ে ওঠা রিসোর্ট সোহাগ পল্লী। গাজীপুরের চন্দ্রা মোড় থেকে ৪ কিলোমিটার উত্তর-পূর্ব দিকে কালামপুর গ্রামে সোহাগ পল্লী (Shohag Palli) অবস্থিত। মোট ১১ একর উঁচু-নিচু জমির ওপর নির্মিত এ রিসোর্ট।

সবুজে ঘেরা সোহাগ পল্লী রিসোর্টের অন্যতম আকর্ষণ হলো বিশাল এক জলাশয়ের ওপর নির্মিত অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত ঝুলন্ত সাঁকো। সকলের নজর কাড়ে এর পিলার ও বেলকনিতে খোঁদাই করা বিভিন্ন কারুকাজ। জলাশয়ের পূর্বপাশে রয়েছে একটি দ্বিতল রেস্টুরেন্ট। রেস্টুরেন্টটির নাম রাখা হয়েছে মেজবান। এখানে কৃত্রিমভাবে একটি লেক নির্মাণ করা হয়েছে। যাতে সব সময়ই পানি থাকে। লেকের পানিতে বিভিন্ন জাতের মাছ দেখা যায়।

 এ রিসোর্টে রয়েছে উন্নতমানের কয়েকটি কটেজ। কটেজগুলোর ঠিক সামনে দিয়ে বয়ে গেছে লেক। রয়েছে একটি সুইমিং পুল আর কনফারেন্সের জন্য একটি হলরুম। ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে সার্বক্ষণিক সেবা দেওয়ার জন্য। এছাড়া রয়েছে উঁচু পাহাড়। যার নিচে এক পাশে রাক্ষসের হাঁ করা মুখ, উপরে সুন্দরী ললনার কোলে জলভর্তি কলসি এবং পাহাড়ের সামনে দু’দিকে দু’টি করে জিরাফ ও হরিণের প্রতিকৃতিসহ আরো অনেক প্রতিকৃতি রয়েছে।

দর্শনার্থীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫০ টাকা মাত্র।

নুহাশ পল্লী

নুহাশ পল্লী গাজীপুর জেলার পিরুজ আলী গ্রামে অবস্থিত যা কিনা বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় গ্রাম। প্রয়াত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ ঢাকার অদূরে গাজীপুরে প্রতিষ্ঠা করেছেন এই প্রাকৃতিক নৈসর্গ নুহাশ পল্লী। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হোতাপাড়া বাজার। সেখান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পিরুজালী গ্রামে অবস্থিত নুহাশ পল্লী যা ৪০ বিঘা জায়গা নিয়ে তৈরি। একেবারে জঙ্গলের ভিতরে হঠাৎ করে এক টুকরো পরিচ্ছন্ন উদ্যান। শান্ত সৌম্য পরিবেশ। উপরে লিচু, জাম আর শান্তির প্রতীক জলপাই গাছ। নিচে সবুজ ঘাসের গালিচা। যেন এক টুকরো শান্তি নিকেতন। এইখানে চির নিদ্রায় হুমায়ূন আহমেদ, উত্তরাধুনিক বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তী লেখক।

নুহাশ পল্লীতে কি কি আছে

এখানে ২৫০ প্রজাতির দূর্লভ ঔষধি, মসলা জাতীয়, ফলজ ও বনজ গাছ রয়েছে। প্রতিটি গাছের গায়ে সেটে দেয়া আছে পরিচিতি ফলক, যা দেখে গাছ চেনা যাবে সহজেই। সবুজ মাঠের মাঝখানে একটি বড় গাছের উপর ছোট ছোট ঘর তৈরি করা হয়েছে।  উদ্যানের পূর্ব দিকে রয়েছে খেজুর বাগান। বাগনের এক পাশে “বৃষ্টি বিলাস” নমে অত্যাধুনিক একটি বাড়ি রয়েছে। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ “লীলাবতী দীঘি”। দীঘির চারপাশ জুড়ে নানা রকমের গাছ। রয়েছে সানকাধানো ঘাট। পুকুরের মাঝখানে একটি দ্বীপ। সেখানে অনেকগুলো নরিকেল গাছ।

এছাড়া এখানে দেখা মিলবে হুমায়ূন আহমেদের আবক্ষ মূর্তি ও সমাধিস্থল, পদ্মপুকুর, সরোবরে পাথরের মৎসকন্যা, প্রাগৈতিহাসিক প্রানীদের অনুকীর্তি, অর্গানিক ফর্মে ডিজাইন করা অ্যাবড়োথেবড়ো সুইমিং পুল যেখানে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় এবং হুমায়ূন আহমেদ একসঙ্গে জলে নেমেছিলেন, দাবার গুটির প্রতিকৃতি, টি-হাউসসহ নানা রকম দৃষ্টিনন্দন সব স্থাপত্য। ভূত বিলাস, বৃষ্টিবিলাসসহ তিনটি বাংলো রয়েছে এই বাগানবাড়িটিতে।

গাজীপুরের প্রত্যেকটি স্থানই মনোমুগ্ধকর।

যেভাবে যাবেন

গাজীপুর যেতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে ট্রেন কিংবা বাসযোগে ঢাকা কিংবা সরাসরি গাজীপুর চলে আসতে হবে। এরপর অটোরিকশা কিংবা যেকোনো গাড়িযোগে আপনি গাজীপুরের সকল স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। ভ্রমণ হোক সুন্দর ও উপভোগ্য। করোনাকালীন সময়ে মাস্ক পরিধান করি। নিজে সুস্থ থাকি এবং অন্যকেও সুস্থ থাকতে সহায়তা করি।

 

শাহীন সুলতানা

Add comment