পর্যটনলিপির পক্ষ থেকে আজ আমরা আপনদের কাছে তুলে ধরব বাংলাদেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেস্ট “রাতারগুল”। সামনে আসছে বর্ষা, তাই এই বর্ষার মৌসুমে এটি হতে পারে ভ্রমণের জন্য একটি উত্তম স্থান। এই বনে অথৈ জল থাকে চার মাস। প্রকৃতির এই অপার সৌন্দর্য কাছ থেকে উপভোগ করার জন্য চলে যেতে পারেন সোয়াম্প ফরেস্ট রাতারগুল। বনে ঘোরার একমাত্র মাধ্যম ডিঙ্গি নৌকা। তবে বর্ষা এবং কোমর পানির মৌসুমে ঘোরার মধ্যে পার্থক্যটা এই দুই সময়ে না আসলে বোঝা মুশকিল। ডিঙ্গিতে চড়ে বনের ভিতর ঘুরতে ঘুরতে দেখা যাবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ।
রাতারগুল, বাংলাদেশের আমাজন
অভয়ারণ্য
রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন বা সোয়াম্প ফরেস্ট এবং বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। বনের আয়তন ৩,৩২৫.৬১ একর, আর এর মধ্যে ৫০৪ একর বনকে ১৯৭৩ সালে বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। অপরূপ সৌন্দর্যের বিশাল বন বছরের সাত মাস থাকে পানির নিচে। বর্ষা মৌসুমে এ বনের গাছপালা থেকে ১০ ফুট নীল স্বচ্ছ পানি। শুকনো মৌসুমে বনের পানি পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে সবুজ এ বনের গাছপালা মাথাতুলে দাঁড়ায়। শীত মৌসুমে বেড়ে যায় অতিথি পাখিদের আনাগোনা। এ সময় রাতারগুলের সৌন্দর্য হয়ে যায় অন্যরকম। এ বনটি মূলত সাপের জন্য বিখ্যাত। ডিঙ্গিতে ঘুরতে ঘুরতে হঠাৎই চোখে পড়ে যেতে পারে গাছে পেঁচিয়ে থাকা কোন সাপ। আবার কপাল ভাল থাকলে দেখা হয়ে যেতে পারে একদল বানরের সাথে। তাছাড়া টিয়া, বুলবুলি, পানকৌড়ির মতো নানান প্রজাতির পাখি বনের ভেতরে আপনার সঙ্গী হয়ে থাকবেই।
কিভাবে যাবেন রাতারগুল
রাতারগুল যেতে চাইলে প্রথমে সড়কপথে বা ট্রেনে করে সিলেটে পৌঁছাতে হবে এবং সেখান থেকে ১.৩০ – ২.০০ ঘণ্টার সড়কপথে রাতারগুল পৌঁছাতে পারবেন। রাতারগুল সিলেট জেলা সদর থেকে সড়ক পথে দূরত্ব মাত্র ৫৬ কিমি। সিলেট থেকে যাতায়াত সিলেট থেকে আপনি বাস/ মাইক্রোবাস/ সিনজি চালিত অটোরিকশায় যেতে পারেন জাফলং। সময় লাগবে ১ ঘণ্টা হতে ১.৩০ ঘণ্টা। ভাড়া জনপ্রতি ৫৫ টাকা বাসে, মাইক্রোতে ১৭০০- ২০০০ টাকা, সিনজি ৭০০ টাকা (ভাড়া পরিবর্তনযোগ্য)।
সিলেট শহর থেকে প্রায় ২৬ কিমি দূরে এই বন। প্রথমে গাড়ির পথ। তারপর ইঞ্জিন চালিত নৌকা দিয়ে বনের কাছাকাছি গিয়ে ডিঙ্গি নৌকায় করে বনে ঢুকতে হবে।
সাবধানতা
রাতারগুলে যেতে হলে আপনাকে বেশকিছু বিষয় মাথায় রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার ভ্রমণ সঙ্গী থাকলে তাকে। এই বন্যা বর্ষায় জোঁক আর সাপের প্রকোপ খুব বেশি থাকে। তাই সতর্ক থাকাটা জরুরি। যারা সাঁতার জানেন না, তারা সঙ্গে লাইফ জ্যাকেট রাখতে পারেন। বনে ঢুকে পানিতে হাত না দেয়াই ভাল। কারণ বিষাক্ত সব সাপ এখানে ঘুরে বেড়ায়। নৌকায় বসে কোন গাছের ডালে হাত দিতেও সতর্ক থাকুন। বনে পশু পাখিদের বিরক্ত করা উচিত না। ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে জলপথ ছেড়ে বনের ভিতরে প্রবেশের সময় সতর্ক থাকুন।
রাতারগুলে থাকা খাওয়ার কোন ব্যবস্থা নেই। যাওয়ার সময় হাল্কা পাতলা কিছু খাবার সাথে করে নিয়ে যেতে পারেন, কিন্তু খাবারের অবশিষ্ট অংশ দিয়ে পরিবেশের বারোটা বাজাবেন না। আর হ্যাঁ, থাকার জন্য আপনাকে সিলেটেই ফিরে আসতে হবে।
কন্টেন্ট রাইটার- দেবযানী দত্ত
[…] স্থানে। ওপারে উঁচু পাহাড়ে ঘেরা সবুজের মায়াজাল। সেখান থেকে নেমে আসা ঝর্ণার অশান্ত […]