Porjotonlipi
সেরা ৫টি সিনেমা

ট্রাভেলিং নিয়ে সেরা ৫টি সিনেমা

ট্রাভেলিং নিয়ে নির্মিত সেরা ৫টি সিনেমা নিয়ে আজ কথা বলবো। মুভি দেখতে ভালোবাসেন না বর্তমান যুগে খুব কম মানুষই আছেন। আর ভ্রমণপিপাসু মানুষ যদি মুভির কীট হয়ে থাকে, তাহলে তো কোনো কথায় নেই ; যেখানে যাবে, সঙ্গে করে দু-একটা মুভি ডাউনলোড করে সাথে যাবে। আজ ভ্রমণ কাহিনীর উপর নির্মিত পাঁচটি সিনেমার উপর রিভিউ লেখার চেষ্টা করেছি। 

ভ্রমণ নির্ভর কাহিনীর উপর নির্মিত সেরা ৫টি সিনেমা

আশা করি ভ্রমণপিপাসু এবং মুভিপোকাদের উদ্দেশ্যে আমার নির্বাচিত মুভিগুলো সকলের ভালো লাগবে। তাই ধৈর্য্যের সহকারে পড়বেন, কারণ আজকের রিভিউটি একটু বড় হতে যাচ্ছে। রিভিউ পোস্টটি পড়তে গিয়ে স্পয়লার পেলে দুঃখিত। 

চেষ্টা করেছি নিজের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে মুভির ভালো লাগার বিষয়গুলো তুলে ধরার। চলুন তাহলে শুরু করা যাক ট্রাভেলিং নিয়ে নির্মিত সেরা ৫টি সিনেমা এর রিভিউ। 

১. দ্যা মোটরসাইকেল ডায়েরিজ 

সেরা ৫টি সিনেমা নিয়ে রিভিউ যার মধ্যে দা মোটরসাইকেল ডায়েরিজ

প্রতিটি প্রজন্মের এমন একটি গল্পের প্রয়োজন; যা ভূগোল, সংস্কৃতি এবং মানুষের জীবনাচরণ দ্বারা অনুপ্রাণিত হবে। ঠিক তেমনই একটি গল্প মোটরসাইকেল ডায়েরিজ। 

মোটরসাইকেল ডায়েরিজ মূলত মার্ক্সবাদী বৈপ্লবিক নেতা আর্নেস্তো চে গুয়েভারার স্মৃতিচারণমূলক গল্প।আর সে গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে ২০০৪ সালে নির্মিত হয়েছে দ্যা মোটরসাইকেল ডায়েরিজ সিনেমা টি। ১৯৫২ সালে আর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না এবং তার বন্ধু আলবার্তো গ্রানাডোর আর্জেন্টিনা থেকে পেরু পর্যন্ত মোটরসাইকেল করে এবং পায়ে হেঁটে ৮,০০০ মাইল ভ্রমণের পথ পাড়ি দেয়ার গল্পই মূলত মোটোরসাইকেল ডায়েরিজে গৃহীত হয়েছে।

গল্পের শুরুতে গুয়েভারাকে দেখা যায় “ফুসার” নামে , তিনি একজন মেডিকেল ছাত্র এবং তার এক বছর বাকি মেডিকেলের পড়াশোনা শেষ করতে। অন্যদিকে তার বন্ধু আলবার্তো একজন বায়োকেমিস্ট। তারা কেউই কখনও আর্জেন্টিনার বাইরে ভ্রমণ করেনি। তাই একদিন তারা দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, তারা মোটরসাইকেল দাপিয়ে  দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ করবে।

গল্পের প্রথম যাত্রার স্টপে, আর্নেস্তোর বান্ধবী চিচিনা কে দেখানো হয়। তারা চিচিনার ফার্মহাউজে থাকে।সেখান থেকে বিদায়ের সময়  চিচিনা ফুসারকে বলে সে তাকে ভালোবাসে। ফুসার না আসা পর্যন্ত সে তার জন্যে অপেক্ষা করবে।পরবর্তীতে বেশ কিছু অভিযানে তারা থামে।তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গুয়েভারা এবং গ্রানাডা আদিবাসী কৃষকদের দারিদ্র্যের সম্মুখীন হয়। চিলিতে,এক দরিদ্র এবং নির্যাতিত দম্পতির সাথে দেখা হয়, যারা তাদের কমিউনিস্ট বিশ্বাসের কারণে নিপীড়িত ছিলো এবং সেই সময় পালিয়ে বেড়াচ্ছিলো।

আগুন জ্বালানোর দৃশ্যে গুয়েভারা এবং গ্রানাডো লজ্জিতভাবে দম্পতির কাছে স্বীকার করেছেন যে তারা কাজের সন্ধানে বাইরে নেই। তারা ভ্রমণের জন্যেই ভ্রমণ করছেন। এরপর দুজনে দম্পতির সাথে চিলির চুকুইকামাতা তামার খনিতে যান, যেখানে গুয়েভারা শ্রমিকদের চিকিৎসা দেখে রীতিমতো হতাশ হন।

তারা পরবর্তীতে পেরুর প্রাচীন ইনকান ধ্বংসাবশেষ পরিদর্শন করে যা গুয়েভারার মনে নাড়া দেয়। গ্রানাডো সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনার এবং আধুনিক দক্ষিণ আমেরিকায় রূপান্তরের কথা জানালে,তৎক্ষণাত গুয়েভারা পাল্টা জবাব দেয়: “বন্দুক ছাড়া একটি বিপ্লব? এটা কখনই কাজ করবে না।”

তাদের যাত্রার অন্যতম একটি উদ্দেশ্য ছিলো কুষ্ঠরোগীদের জন্যে কাজ করা।তাই লিমার একজন ডাক্তার, তাদের কুষ্ঠরোগীর কলোনিতে থাকার আমন্ত্রণ জানান। কলোনীতে নার্স এবং কর্মচারীরা  সকলে রাবারের গ্লাভস পড়লেও, ফুসার এবং গ্রানাডো  রাবারের গ্লাভস পড়েননি। কুষ্ঠরোগীরা স্বাভাবিক মানুষের চেয়ে ও  আলাদা কেউ নয় তা ফুসার আর গ্রানাডোর আচরণ থেকে বুঝা যায়। এক রাতে যেদিন আর্নেস্তোর জন্মদিন ছিলো, গুয়েভারা রাতে তার বিপদ এবং তার হাঁপানি সত্ত্বেও, তিনি নদী পার হয়ে সাঁতার কাটেন, নদীটি ছিলো প্রতীকীস্বরুপ চূড়ান্তযাত্রা  যা কুষ্ঠ কলোনির দুই সমাজকে পৃথক করে। ফুসার ডাক্তারদের কেবিনের পরিবর্তে একটি কুষ্ঠঝুপড়িতে রাত কাটানোর জন্য ঠিক করেন।

সিনেমার শেষে, যখন তারা একটি বিমানবন্দরে একে অপরকে বিদায় জানায়, গ্রানাডো তখন প্রকাশ করে তার জন্মদিন ২ এপ্রিল নয়, বরং ৮ আগস্ট ছিল, এবং  গুয়েভারা উত্তরে জানান, তিনি তা সব সময় জানতেন কিন্তু কখনো তাকে এই বিষয়ে অবহিত করেননি। চলচ্চিত্রটি শেষ হয় প্রকৃত ৮২ বছর বয়সী আলবার্তো গ্রানাডোর উপস্থিতির সাথে, প্রকৃত যাত্রার ছবি এবং বলিভিয়ার জঙ্গলে চে গুয়েভারার শেষ পর্যন্ত সিআইএ-সহায়ক মৃত্যুদণ্ডের সংক্ষিপ্ত উল্লেখ সহ। চূড়ান্ত শিরোনামে বলা ছিলো, তিনি কিউবার বিপ্লবে কাস্ত্রোর সাথে যোগ দেবেন,  তারপর কঙ্গো এবং বলিভিয়ায় তার উদ্দেশ্য সফলের জন্য লড়াই করবেন।

এই মুভিটি তরুণ চে গুয়েভারার জীবন থেকে নেয়া। দক্ষিণ আমেরিকা ভ্রমণ থেকে তিনি যে দারিদ্র‍্য,  ক্ষুধা এবং রোগের সাক্ষ্য বহন করেছেন,সেই  উপলব্ধি  তাকে পরবর্তীতে একজন মার্ক্সবাদী বিপ্লবী নেতা হতে সহায়তা করেছিলো।

ভ্রমণসংক্রান্ত মুভিগুলোর মধ্যে এই মুভিটিকে আমি এগিয়ে রাখবো।কারণ এটি একটি বাস্তবধর্মী মুভি,যা কেবল ফুসারের কিউবার গেরিলা নেতা চে হয়ে উঠার পেছনের কাহিনীটিকে আলোকপাত করেনি, দুই বন্ধুর মধ্যকার গভীর সম্পর্ককেও আলোকপাত করেছে। তাই আর দেরী না করে দেখে ফেলুন লাতিন আমেরিকা ভ্রমণের এই অসাধারণ মুভিটি।

IMDb রেটিং -৭.৮/১০

ব্যক্তিগত রেটিং  –  ৯/১০

২. কাঞ্চনজঙ্ঘা 

ভ্রমণ ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে রিভিউ যার মধ্যে সত্যজিৎ রায়ের কাঞ্চনজঙ্ঘা

 বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলা চলচ্চিত্র জগতে সত্যজিৎ রায় মানে চমৎকার কিছু ।অস্কারপ্রাপ্ত কালজয়ী এই চলচিত্রকারের এক অনবদ্য ছবি হলো “কাঞ্চনজঙ্ঘা “। ছবিটি ১৯৬২ সালে  নির্মিত প্রথম বাংলা রঙিন ছবি।ভাবতেই ভীষণ অবাক লাগে,একটা ছবি যুগের চেয়ে কতোটা অগ্রসরমান হলে,  ৫০ বছর পরে এসে ও দর্শকের মনে জায়গা করে নিতে পারে।

মূলত একটি ধনাঢ্য পরিবারের হিমালয়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা পর্বতের পাদদেশে অবস্থিত একটি হিল স্টেশন দার্জিলিং এ ছুটির দিনে বেড়াতে আসা এবং  জীবনের প্রতি অপরুপ সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে গল্পটি শুরু হয়।দার্জিলিং পাহাড়ের  মনোরম সৌন্দর্য পুরো সিনেমার চরিত্রগুলির উপরে গুরুত্বপূর্ণ  প্রভাব ফেলে। ধনাঢ্য পরিবারের ছোট মেয়ে, প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রী মনিষা এবং সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্র ব্যানার্জির  মধ্যে একটি সম্ভাব্য বিবাহ জোট কে কেন্দ্র করে সিনেমার মূল দৃশ্য এবং সংলাপগুলো আবর্তিত হয়। পরিবারের প্রধান কর্তা ইন্দ্রনাথ রায়, অন্যান্য সব ব্যাপারের মতোই মেয়ের বিয়ের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে  বদ্ধপরিকর। তার বিশ্বাস মেয়ের জন্যে নেয়া তার সিদ্ধান্ত কখনো ভুল হতে পারে না।

অন্যদিকে,এই বিয়ের ব্যাপারে ইন্দ্রনাথ রায়ের স্বয়ং স্ত্রী লাবণ্য নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেন।সিনেমায় ২৪ বছর বয়সী অশোক নামের তরুণ যুবকের আবির্ভাব ঘটে। সিনেমার একটি দৃশ্যে যখন ইন্দ্রনাথ রায় তাকে লোভনীয় অঙ্কের চাকরির প্রস্তাব দেয়,  অশোক তা সসম্মানের সাথে প্রত্যাখ্যান করে।অশোকের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার সাহসিকতা, নিজের বোনের বিয়ের ব্যর্থতা, মুক্ত পাহাড় সব কিছু মনিষাকে বিয়ে না করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে।আর সেই সাথে কুয়াশা পরিষ্কার হওয়ার লগ্নে  কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখরটি পূর্ণ গৌরবে প্রকাশিত হওয়া শুরু করে।

সিনেমার একটি দৃশ্যে অমিয়া ঠাকুরের কণ্ঠে একটি গান ছিলো

এ পরবাসে রবে কে হায়!

কে রবে এ সংশয়ে সন্তাপে শোকে ॥

হেথা কে রাখিবে দুখভয়সঙ্কটে–

তেমন আপন কেহ নাহি এ প্রান্তরে হায় রে ॥

প্রকৃতির সন্নিকটে এসে পরবাস দার্জিলিং শহরের সকল সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি লাভ করে কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গের মতো স্বগৌরবে প্রকাশিত হওয়ার গল্পই যেনো কাঞ্চনজঙ্ঘা।

 

IMDb রেটিং -৭.৯/১০

ব্যক্তিগত রেটিং  – ১০/১০

৩. জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা 

ভ্রমণ ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে রিভিউ যার মধ্যে জিন্দেগি না মিলেগা দোবারা

ফারহান আখতারের তার কবিতায় বলেছিলেন ঃ

” দিলো মে তুম আপনি বেতাবিয়া লেকে চাল রাহে হো,

 তো জিন্দা হো তুম 

নাজার মে খোয়াবো কি বিজলিয়ান লেকে চাল রাহে হো, তো জিন্দা হো তুম, “

যার অর্থ  যদি আপনার হৃদয়ে উদ্বেগ থাকে, তাহলে আপনি বেঁচে আছেন, 

যদি আপনার দৃষ্টি স্বপ্ন নিয়ে আলোকিত হয়, তাহলে আপনি বেঁচে আছেন।

জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিকে দেখা এবং বাঁচতে শেখা এই দুটি বিষয় সিনেমা দেখে সম্ভব কিনা ; যদি আমার থেকে জানতে চান, তাহলে আমি বলবো তা সম্ভব। জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা ঠিক তেমনই একটি সিনেমা। হিন্দি সিনেমাগুলোর মধ্যে আমার বেশ প্রিয় একটি সিনেমা জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা। 

যারা স্বপ্ন দেখতে চান, যারা জীবনের প্রতিটি শ্বাসে উড়তে চান এবং বাঁচতে চান তাদের জন্য এই সিনেমাটি একটি অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে। ভ্রমণ নিয়ে নির্মিত সিনেমায় এই ফিল্মটিকে আমি সাজেস্ট করবো, কেননা গভীর সমুদ্রে ডাইভিং, স্কাই ডাইভিং এবং স্প্যানিশ ষাঁড়ের সাথে দৌড়ানো থেকে শুরু করে আনন্দদায়ক অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসগুলো মুভিটিতে এক অনন্য মাত্রা যোগ করেছে, যা দেখে আপনার জীবনে একবার হলেও স্পেনে ঘুরতে যাওয়ার ইচ্ছে জাগবে।

জোয়া আখতার পরিচালিত এই সিনেমায়  অভিনয় করেছেন হৃতিক রোশন (অর্জুন), ফারহান আখতার (ইমরান), অভয় দেওল (কবির) এবং ক্যাটরিনা কাইফ (লায়লা),কালকি (নাতাশা)। চলচ্চিত্রটির বিষয়বস্তু হল “জীবনে পূর্ণভাবে বাঁচুন কেননা আপনি বেঁচে থাকার জন্যে জীবন পাবেন একবারই”।বিষয়বস্তুটিকে নিখুঁত লেখা এবং নিখুঁত চরিত্রায়নের সাহায্যে সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে সিনেমাটিতে। উদ্বোধনী দৃশ্যে, কবির তার মেয়ে বন্ধু নাতাশার (কালকি কোয়েচলিন) সাথে বাগদান করেন এবং বিয়ের আগে তার শৈশবের বন্ধু অর্জুন এবং ইমরানের সাথে ব্যাচেলর ট্রিপে যেতে চান। কবির কোনোভাবে তার প্রিয় বন্ধুদের  তিন সপ্তাহের ছুটিতে স্পেনে যাওয়ার জন্যে রাজি করান তবে একটি আকর্ষণীয় শর্তে যা তিনজনই সম্মত হন। শর্তটি হলো প্রত্যেককে  একটি অ্যাডভেঞ্চার এক্টিভিটি করতে হবে এবং অন্য দুজনকে সে এডভেঞ্চারে যোগ দিতে হবে, সেটা তারা পছন্দ করুক বা না করুক।মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের শ্বাসরুদ্ধকর শটের পিছনে যিনি রয়েছেন তিনি হলেন কার্লোস কাতালান।তার অসাধারণ সিনেমাটোগ্রাফি পুরো ছবিটিকে দেখে খুব রঙিন মনে হবে। পরিচালক জোয়া আখতারের নিখুঁত লেখা সত্যিই ছবিটির মূল থিমকে বের করে আনতে সহায়তা করেছে।

তিন বন্ধুর চরিত্র টি আমরা আমাদের বাস্তব জীবনের কারো না কারোর সাথে মিল পাই।সিনেমার অর্জুনকে দেখে মনে হবে ওয়ার্কহোলিক, কবির সবসময় বিভিন্ন কারণে তার বিয়ের কথা  চিন্তা করেন, ইমরানের সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক দেখানো হয়  এবং অতীতে অর্জুনের সাথে তার ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ছিলো । এই সমস্ত পিছনের গল্পগুলি সুন্দরভাবে স্ক্রিপ্টে বাঁধা ছিল আর অ্যাডভেঞ্চার এক্টিভিটিগুলো  প্রতিটি ব্যক্তির ভয়ের ফ্যাক্টরটিকে ভেঙে ফেলতে সক্ষম ছিলো, যা চিত্রনাট্যে অতি নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছিল। কীভাবে চরিত্রগুলো একে অপরের পক্ষে পাশে এসে দাঁড়ায়, তা সুন্দরভাবে চিত্রিত করা হয়।তিনটি চরিত্রই পর্দায়  সমান গুরুত্ব পাই। এরপর লায়লার সাথে অর্জুনের প্রেমকাহিনী রোমান্টিকভাবে  উপস্থাপন করা হয়।সিনেমায় হাইওয়ে ড্রাইভের দৃশ্য এবং শঙ্কর -এহসান – লয় এর গানগুলো ছিলো খুবই মনোমুগ্ধকর। 

সামগ্রিকভাবে, জিন্দেগি না মিলেগি দোবারা একটি অবশ্যই দেখার মতো ফিল্ম। বন্ধুদের সাথে রোড ট্রিপ কি পরিমাণ আনন্দঘন হয় তা এই মুভিটি না দেখলে বুঝা যাবে না।এই মুভির প্রতিপাদ্যের সাথে ২০০১ সালে নির্মিত “দিল চাহতা হ্যায়” মুভির কিছুটা মিল পাওয়া যায়।কেননা দুটি মুভিই বন্ধুত্বের দিকটাকে আলোকপাত করে। 

তবে জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা মুভিটি জীবনকে ভিন্ন আঙ্গিক দেখা, ভয়কে জয় করা, স্বপ্নগুলোকে ছোঁয়া এবং অবশ্যই স্পেনে ঘোরার মতো কিছু সুন্দর স্পট নিয়ে তৈরি করার জন্যে সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে। তাই আমার প্রিয় ভ্রমণকাহিনীর মুভির তালিকায় এটি সবসময় থাকবে। 

 

IMDb রেটিং -৮.২/১০

ব্যক্তিগত রেটিং  –  ৯/১০

 

৪. দ্যা বাকেট লিস্ট

ভ্রমণ ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে রিভিউ যার মধ্যে দা বাকেট লিস্ট

মৃত্যুর দোরগোড়ায় পৌঁছে ও মানুষ তার মনের কোণে লুকিয়ে থাকা স্বপ্নের কথা আর শখগুলি পূরণ করতে যেনো ভুলে না যায়, সেই কথায় যেনো “দ্যা বাকেট লিস্ট ” মুভি বারবার জানান দিচ্ছে।

গল্পের শুরুতে দুইজন  বয়স্ক পুরুষ, নীল-কলার অটোমোটিভ এর মেকানিক কার্টার চেম্বারস এবং বিলিয়নেয়ার এডওয়ার্ড কোলের প্রথমবারের মতো দেখা হয় যখন তারা উভয়ে টার্মিনাল ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।তারা হাসপাতালের একই কেবিনে থাকা শুরু করেন। এরপর তাদের পরস্পরের মধ্যে গভীর বন্ধুত্ব হয়।মুভিতে লক্ষণীয়, প্রচুর অর্থ থাকা সত্ত্বেও কোলের জন্যে আলাদা রুমের কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি, অথচ যিনি কিনা হাসপাতালের মালিক।

হাসপাতালে থাকাকালীন, কার্টার এবং কোল একটি বাকেট লিস্ট এর তালিকা লিখতে শুরু করেন। বেঁচে থাকার জন্য এক বছরেরও কম সময় আছে শুনে, কার্টার হতাশাগ্রস্থ হয়ে তার তালিকাটি বাতিল করেন। কোল পরবর্তীতে কোল তাকে রাজি করায়।আর

সেই বাকেটলিস্ট অনুসারে তারা কখনো স্কাইডাইভিং করতে যায়, ক্যালিফোর্নিয়া স্পিডওয়ের চারপাশে একটি ভিন্টেজ শেলবি মুস্তাং এবং ডজ চ্যালেঞ্জার চালায়, উত্তর মেরুর উপর দিয়ে উড়ে যায়, চেভ্রে ডি’অর-এ রাতের খাবার খায়, তাজমহল পরিদর্শন করে, চীনের গ্রেট ওয়ালে মোটরসাইকেল চালায়, তানজানিয়ায় একটি সিংহ সাফারিতে যোগ দেয় এবং মাউন্ট এভারেস্ট পরিদর্শন করে।আরো কতো রোমাঞ্চকর ইচ্ছে পূরণ করে একসাথে ।

জীবনের একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এসে, অবশ্যম্ভাবী মৃত্যু এবং বয়সের কাছে হার না মেনে ও দুজন বয়স্ক পুরুষ দেশ-বিদেশ ভ্রমণ করে নিজের শখ এবং ইচ্ছে পূরণ করছে,তা দেখে আমাদের সত্যিই অনেক কিছু শেখার আছে।আমরা অনেকেই অনেক ছোট্টো কিছুতে হার মেনে নিই।অথচ কতোটুকু সাহস আর মনের শক্তি থাকলে একটা বাকেট লিস্ট তৈরি করে তা পূরণ করা সম্ভব তা এই মুভি না দেখলে বুঝা সম্ভব হতো না।

মুভির কার্টার চরিত্রে অভিনয় করে মরগ্যান ফ্রীম্যান। দ্যা শশাঙ্ক রিডেম্পশন যারা দেখেছেন  তাদেরকে মরগ্যান ফ্রীম্যানের অভিনয় সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই।আর মুভির এডোয়ার্ড কোল চরিত্রে অভিনয় করেছেন জ্যাক নিকলসন।এই মুভিটি কেনো দেখবো তা যদি জানতে চান তাহলে বলবো শুধুমাত্র ভ্রমণের বিষয়গুলি যে এখানে উঠে এসেছে তা নয় এখানে এক চমৎকার বন্ধুত্বের সম্পর্কের কথা ও বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যান্য সব বন্ধুত্বের গল্পের মতো কার্টার আর কোলের ভুল বোঝাবুঝি হয়।পরে মৃত্যুর আগে তাদের সম্পর্ক ঠিক হলে কার্টার তাকে ছাড়াই বাকেট লিস্ট শেষ করার জন্য অনুরোধ করে। এরপর কার্টারের অস্ত্রোপচার করা হলে সে অপারেটিং টেবিলে মারা যায়।কোল কার্টারের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতে বলেন,  কার্টারের জীবনের শেষ তিন মাস ছিল তার  জীবনের সেরা তিন মাস।

মুভির শেষ উপসংহার থেকে জানা যায় যে কোল ৮১ বছর বয়স পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন এবং  কোলের ভ্যালেট ম্যাথু তার চিতাভস্ম হিমালয়ের একটি শিখরে নিয়ে যান। ম্যাথিউ যখন অন্য ক্যানের পাশাপাশি একটি চক ফুল ও’নাটস কফি ক্যান রাখে, তখন বাকেট তালিকার শেষ আইটেমটি সম্পন্ন হয় এবং সেখানে লিস্টটি গুঁজে দেন।

আর এভাবে একটি অসাধারণ মুভির সমাপ্তি ঘটে।

IMDb রেটিং -৭.৪/১০

ব্যক্তিগত রেটিং  –  ৯/১০

৫. ইন টু দ্যা ওয়াইল্ড

ভ্রমণ ভিত্তিক সিনেমা নিয়ে রিভিউ যার মধ্যে ইনটু দা ওয়ার্ল্ড

এতোক্ষণ আমি খুব সুন্দর কিছু মুভির রিভিউ করেছি যা দেখে আপনার মনে হবে এই বুঝি পৃথিবীটা কতো সুন্দর। জীবন তো একটাই আর শেখার জন্যে প্রতিটা প্রান্তরে ভ্রমণ করা উচিত। আচ্ছা এমন যদি হতো, একজন তরুণ যুবক যার সব ছিলো সে যদি তার সকল কিছু যেমন অর্থ সম্পদ, পারিবারিক সম্পর্ক ইত্যাদি ত্যাগ করে শুধুমাত্র বনে নির্জনে কাটানোর জন্যে যায় তাহলে ব্যাপারটিকে আপনি কি ভাববেন?

আমি বা আপনি তাকে পাগলই বলবো হয়তো। ঠিক তেমন কাজটি করেছিলেন এক কলেজ গ্র‍্যাজুয়েট।

১৯৯৬ সালে জন ক্রাকাউয়ারের বই ইনটু দ্য ওয়াইল্ড শহরতলির কলেজ গ্র্যাজুয়েট ক্রিস্টোফার ম্যাকক্যান্ডেলসের সত্য কাহিনী তুলে ধরেছিল, যিনি জ্যাক লন্ডন এবং হেনরি ডেভিড থোরোর প্রান্তরের গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আলাস্কার প্রান্তরের গভীরে চলে গিয়েছিলেন। ম্যাকক্যান্ডেলস পুরোপুরি অপ্রস্তুত ছিলেন সেই জায়গার জন্যে এবং ১০০ দিন পরে অনাহার এবং খাদ্যে বিষক্রিয়ার কিছুটা সংমিশ্রণে একসময় মারা যান। 

ক্রাকাউয়ারের বইটি ম্যাকক্যান্ডেলসকে অমর করে দেয় এবং শন পেন পরিচালিত ২০০৭ সালের  “ইন টু দ্যা ওয়াইল্ড ”  চলচ্চিত্র তার কিংবদন্তিতে অবদান রেখেছিল।

১৯৯০ সালের মে মাসে, ম্যাকক্যান্ডেলস এমোরি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চ সম্মান নিয়ে স্নাতক হন, কিন্তু দেখা যায় যে  যখন তার বাবা অন্য এক মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তখন তিনি আধুনিক সমাজের প্রতি বিমুখ হয়ে পড়েছিলেন। কিছুদিন পরে, তিনি তার সমস্ত ক্রেডিট কার্ড এবং সনাক্তকরণ নথি ধ্বংস করে তার প্রচলিত জীবন প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি তার সঞ্চয়ের প্রায় সমস্ত  দান করেন এবং যাত্রা করেন অজানার উদ্দেশ্যে। ম্যাকক্যান্ডেলস যাত্রার সময়ে কারো সাথে যোগাযোগ রাখেনি।ফলশ্রুতিতে তার পরিবারের সকলেই উদ্বিগ্ন। এরপর সিনেমায় ম্যাকক্যান্ডেলস এর বিভিন্ন জায়গায় ভ্রমণ করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে দেখানো হয়।

এভাবে ১৯৯২ সালের এপ্রিলে একসময়ক্রিস্টোফার ম্যাকক্যান্ডেলস হিলি নামে একটি প্রত্যন্ত এলাকায় আসেন, যা ছিলো আলাস্কার ডেনালি জাতীয় উদ্যান এবং সংরক্ষণের ঠিক উত্তরে। যে অপরিচিত ব্যক্তি তাকে ফেলে দেয় সে তাকে কেবল একজোড়া গামবুট দেয়। ম্যাকক্যান্ডেলস একটি পরিত্যক্ত শহরের বাসে একটি ক্যাম্পসাইট স্থাপন করে, যেটার তিনি নাম রাখেন “দ্য ম্যাজিক বাস”। প্রথমে, ম্যাকক্যান্ডেলস তার চারপাশের বিচ্ছিন্নতা, প্রকৃতির সৌন্দর্য নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট। তিনি একটি ০.২২ ক্যালিবার রাইফেল দিয়ে শিকার করতেন,  বই পড়তেন এবং বন্য অবস্থায় নিজেকে একটি নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুত করার সময় তার চিন্তা সংরক্ষণ করার জন্য একটি ডায়েরি রাখতেন।

কিন্তু বেশ কয়েকমাস পরে এরকম বন্য পরিবেশে বেঁচে থাকাটা তার জন্যে দুরুহ হয়ে পড়ে। একসময় খাদ্যের অপ্রতুলতা দেখা দেয়। খাদ্য সংরক্ষণের অভাবে বেঁচে থাকা যখন কঠিন হয়ে পড়ে তখন তিনি উপলব্ধি করেন  সত্যিকারের সুখ তখনই পাওয়া যায় যখন অন্যদের সাথে ভাগ করে নেওয়া হয়। একসময় ম্যাকক্যান্ডেলস শিকড় এবং উদ্ভিদ খেয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য হয়। ভুলবশত একদিন একটি বিষাক্ত গাছ খেয়ে ফেলেন, যার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। 

ধীরে ধীরে মারা যাওয়ার সময়, তিনি তার আত্ম-উপলব্ধিগুলোকে লিপিবদ্ধ করেন  এবং কল্পনা করেন যদি তিনি তার পরিবারের কাছে ফিরে যেতেন তবে এটি কেমন হতে পারত। তিনি বিশ্বকে একটি বিদায়ী নোট লিখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ার জন্যে প্রস্তুত হন।

সিনেমার শেষে দুই সপ্তাহ পরে, তার দেহ মুজ শিকারিরা খুঁজে পায়। 

IMDb রেটিং -৭.৮/১০

ব্যক্তিগত রেটিং  –  ৭/১০

ভ্রমণ তখনই আনদন্দঘন হয়ে উঠে যখন পরিবার  আর বন্ধুবান্ধব সকলে পাশে থাকে। আশা করি আপনারা কেউই ম্যাকক্যান্ডেলস এর মতো উদ্ভট চিন্তে করবেন না। প্রিয়জনদের সাথে করোনায় ঘুরতে পারছেন না!! কোনো সমস্যা নেই। প্রিয়জনদের সাথে  যেনো আপনারা ঘরে বসে ভ্রমণের আনন্দ নিতে পারেন তার জন্য আপনাদের খুব সুন্দর পাঁচটি ভ্রমণকাহিনী নিয়ে সিনেমা।পরিবারের সাথে অবশ্যই দেখবেন।

 

ফারহাত ইসলাম

Add comment