পর্যটনলিপির ভ্রমণ আয়োজনে আজকে আপনাদের জন্য থাকছে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন যা বিশ্ব ঐতিহ্য খেতাবপ্রাপ্ত স্থানগুলোর মধ্যে একটি।
ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন
বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম বন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন যার পরিমাণ ১৪০,০০০ হেক্টর এবং এটি বঙ্গোপসাগরের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা নদীর বদ্বীপে অবস্থিত। মূলত সুন্দরবনের অবস্থান বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলে। আমার সুন্দরবনের ৩ টি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য নিয়ে গঠিত বনাঞ্চলকে ইউনেস্কো ১৯৯৭ সালে বিশ্ব ঐতিহ্য ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর দেশ বিদেশ থেকে পর্যটকেরা আসে এই বনাঞ্চলের সৌন্দর্য দেখার জন্য। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুন্দরবন ভ্রমণ করেন ২ লাখ ৫১ হাজার ৯৬৯ জন পর্যটক। গত বছর পর্যটন খাত থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় হয় ২ কোটি টাকা।
সুন্দরবনের আকর্ষণ –
সুন্দরবন এবং তার রহস্যময়ী সৌন্দর্য বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে । আসুন জেনে নেওয়া যাক সেগুলো কি এবং কিসের জন্য এর খ্যাতি চারিদিক।
উদ্ভিদ-
ধারণা করা হয় সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবন নামকরণ করা হয় তবে শুধু সুন্দরবনের সুন্দরী গাছই নয়, রয়েছে শত শত প্রজাতির হাজার রকমের গাছ।বাংলাদেশের অংশে পড়েছে পুরো বনের বাষট্টি শতাংশ। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে এখানে। বাংলাদেশের এই অংশের গাছপালা এই দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রাখায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রাণী –
বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, স্তন্যপায়ী, উভচর ও সরীসৃপজাতীয় প্রাণী উপস্থিতি সুন্দরবনে। এদের মধ্যে বাংলার বাঘ, বন বিড়াল, চিত্রা হরিণ, লাল বানর, ছোট ভোঁদর, রাজগোখরা, বুনোশুকর, বিভিন্ন প্রজাতির মাছরাঙা, মদনটাক উল্লেখযোগ্য। লোনাপানির কুমির, বড় কাইট্টা ও ডলফিন দেখা যায় সুন্দরবনের জলজ অংশে । প্রায় ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর, ৩২০ প্রজাতির আবাসিক ও পরিযায়ী পাখি আর প্রায় ৪০০ প্রজাতির মাছ এর বসবাস সুন্দরবনে ।
জামতলা সৈকত-
জামতলার পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের কিছুটা অংশে একসাথে চোখ বুলানো যায়। আর ভাগ্য ভাল থাকলে এখান থেকে হরিণ কিংবা বাঘের দেখা পাওয়া যেতে পারে।
মান্দারবাড়িয়া সৈকত-
মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখা যায়। তবে মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকতের কিছুটা অংশ এখনো অনাবিষ্কৃত বলে মনে করা হয়।
করমজল –
এখানে কুমির, চিত্রা হরিণ, বানর এবং নানা ধরনের প্রাণী দেখার ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। কাঠের তৈরি একটা বিশাল পুল এর উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে দেখতে পাবেন সবুজময় চারিদিক আর দেখা পাবেন একটি ওয়াচ টাওয়ারের।
হীরন পয়েন্ট-
হীরন পয়েন্টের কাঠের তৈরি সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে প্রকৃতির এক অপরূপ সৌন্দর্য দেখার সুযোগ পাবেন এবং হরিণ, বানর, গুইসাপ ও কুমির দেখা পাওয়া যায়। এখানেও মাঝে মাঝে বেঙ্গল টাইগারের দেখা মিলে।
দুবলার চর-
দুবলার চর হচ্ছে সুন্দরবন এলাকার মধ্যে ছোট্ট একটি চর দুবলার চরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গিয়ে মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। এই চরের মোট আয়তন ৮১ বর্গমাইল। আলোরকোল, কোকিলমনি, হলদিখালি, কবরখালি,অফিসকিল্লা, ছোট আমবাড়িয়া, মেহের আলির চর এবং শেলার চর নিয়ে দুবলার চর গঠিত।
কটকা বিচ –
মংলা বন্দর থেকে কটকা সী বিচের দূরত্ব প্রায় ৯০ কিলোমিটার। ৪০ ফিট উপরে থাকা ওয়াচ টাওয়ারে হেঁটে বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। কাটকা থেকে কাচিখাল বাঘের জায়গা পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে বলে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে। এখানে প্রচুর জীবজন্তও দেখা যায়। কটকা সী বিচ অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। এখানে বেলাভূমি জুড়ে আঁকা থাকে লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম।
বাংলার বাঘ –
বাংলাদেশের জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘের অবস্থান সুন্দরবনে সুন্দরবনের অতন্দ্র প্রহরী নামে পরিচিত এই প্রাণীটিই এর জীববৈচিত্র্য, খাদ্য শৃঙ্খল ও পরিবেশ চক্রের প্রধান নিয়ন্ত্রক৷ অত্যন্ত বিপন্ন একটি প্রাণী হিসেবে বাঘ বেঁচে আছে আমাদের সুন্দরবনে৷ ২০১৫ সালে বন বিভাগ ক্যামেরা পদ্ধতিতে গণনা করে সুন্দরবনে ১০৬টি বাঘের সন্ধান পায়৷
মায়া হরিণ –
সুন্দরবনে খুবই কম পরিমাণে আছে মায়া হরিণ৷ গাঢ় বাদামি রংয়ের এ হরিণ বনের ভেতরে একা চলতে ভালোবাসে। অনেকটা ছাগলের মতো বলে অনেকে একে বন ছাগলও বলে থাকে৷
বানর –
সুন্দরবনে প্রাণীদের তালিকায় হরিণের পরই বানরের স্থান৷ সাধারণত এরা হরিণের সঙ্গে বসবাস করে থাকে৷ এজন্য হরিণকে বানরের সুহৃদও বলা হয়৷ সুন্দরবনের গাছে ডালেই তাদের বসবাস৷
গুই সাপ –
গুই সাপ দেখতে অনেকটা কুমিরের মতো৷ একটি পূর্ণবয়স্ক গুইসাপের ওজন পাঁচ থেকে ছয় কেজি পর্যন্ত হয়৷ এরা গড়ে লম্বায় এক মিটার পর্যন্ত হয়৷
নানান পাখি –
পাখির স্বর্গরাজ্য বলা যায় সুন্দরবনকে ৷ খাদ্যের প্রাচুর্য, অফুরন্ত গাছ আর জনমানবহীন পরিবেশের কারণে পাখিদের কাছে এই জায়গা খুবই নিরাপদ আশ্রয়স্থল৷ এ বনের অধিবাসী ৪০০ প্রজাতির পাখির মধ্যে ৩২০ প্রজাতির স্থানীয় বা আবাসিক, আর ৫০ প্রজাতিরও বেশি অনাবাসিক বা পরিযায়ী৷
সুন্দরবন কিভাবে যাবেন-
বাস, ট্রেন এবং লঞ্চ ব্যবস্থা রয়েছে ঢাকা থেকে সরাসরি খুলনা যাওয়ার জন্য । ঢাকা থেকে সোহাগ, হানিফ ও ঈগল পরিবহনের বাস নিয়মিতভাবে ভোর ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খুলনার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা যেতে প্রায় ৮ ঘন্টা লাগে।সুন্দরবনে যেতে হলে খুলনা থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে মংলায় যেতে হবে। খুলনা থেকে মংলা যাওয়ার প্রাইভেট গাড়ি ও বাস রয়েছে। মংলা ঘাট থেকে ট্রলার কিংবা লঞ্চ ভাড়া নিয়ে দুই ঘন্টায় সুন্দরবনের করমজল যাওয়া যায়। চাইলে সকাল বেলা খুলনা থেকে মংলা হয়ে সুন্দরবন দেখে সন্ধ্যায় খুলনা ফিরে আসা যাবে।
খরচ নিয়ে ধারণা-
প্রথমেই যদি অভয়ারণ্য এলাকার দিকে আলোকপাত করি তবে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতিদিনের জনপ্রতি ভ্রমণ ফি – ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য – ৩০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১৫০০ টাকা।
এরপরে আসে অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের ভ্রমণ ফি – ৭০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রী- ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ভ্রমণ ফি – ১০০০ টাকা ও গবেষকদের জন্য ভ্রমণ – ৪০ টাকা ।
মংলা থেকে সুন্দরবন কাছে হওয়ার কারণে করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ২০ টাকা, বিদেশিদের জন্য ৩০০ টাকা। হেলিকপ্টার/সী প্লেনের জন্য এককালীন ফি লাগে ৩০ হাজার টাকা, নবায়ন করতে ফি দিতে হয় ১০ হাজার টাকা।
কন্টেন্ট রাইটারঃ তাসনিয়া মাহবুব তৈশী
[…] থেকে সুন্দরবন কাছে হওয়ার কারণে করমজলে দেশি […]
[…] অভয়ারণ্য। ম্যানগ্রোভ বনের মধ্যে সুন্দরবনের পরে নিঝুম দ্বীপকে বাংলাদেশের […]
লেখাটি তথ্যবহুল এবং অনেক সুন্দর হয়েছে
মূল্যবান মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আশা করছি, পর্যটনলিপির সাথেই থাকবেন।
[…] দশটি জেলার বিভাগীয় সদর দপ্তর। সুন্দরবন, মংলা সমুদ্র বন্দর, গলদা চিংড়ি ছাড়াও […]