আজ পাঠকদের জন্য থাকছে সিলেটের মনোমুগ্ধকর লক্ষণছড়া নিয়ে আয়োজন। নাগরী বর্ণমালার সিলেট কিংবা পীর-দরবেশ বা মাজারে ঘেরা সিলেট, হাজার পরিচয় আছে এই নগরীর।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের আধার সিলেটের লক্ষণছড়া
লক্ষণছড়া সিলেট শহর থেকে বেশখানিক পথ দূরে যা সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত। পান্থুমাই ঝর্ণা থেকে বেশি দূর নয় কিন্তু বিছানাকান্দি থেকে খানিকটা দূরে। তাই পান্থুমাই থেকে ফেরার পথে কিংবা পান্থুমাই ঝর্ণা যাওয়ার আগে ঘুরে আসুন লক্ষণছড়া থেকে। বড়হিল / পান্থুমাই ঝর্ণা ফেরার পথে কাছের গ্রামের ঘাটে নৌকা রেখে হাটা শুরু করুন লক্ষণছড়ার খোঁজে। গ্রামের ভিতর দিয়ে ভারতীয় সীমানা ঘেষে সারি সারি ফসলের পাঠ পেরিয়ে ছুটে চলুন। প্রায় ২০ মিনিট হাটাঁর পর পেয়ে যাবেন লক্ষণছড়া।
মূলত এটি ভারতের মেঘালয় পাহাড় থেকে বাংলাদেশে প্রবাহিত হওয়া পাহাড়ি ঝিরি। পিয়াইন নদীতে নৌকা নিয়ে যেতে যেতে পান্থুমাই পেছনে ফেলে বিছানাকান্দি যাওয়ার পথেই পড়ে এই লক্ষণছড়া ঝিরিটি।
এই জায়গাটি অনেকটা বিছনাকান্দির মত তবে এখানে ছোট পরিসরে আরো সুন্দর দেখতে পাথুরের ঝিরি পথ যা ভারতের ঝর্ণা থেকে নেমে এসেছে। এখানেও ভারতীয় সীমানায় রয়েছে চলাচলের জন্য একটি ব্রিজ। এই ব্রিজের নিচেই ছোট বড় অসংখ্য পাথর এসে জমে এক অন্যরকম অদ্ভুত সুন্দর ঝিরি পথের তৈরি করেছে যা দেখতে খুবই দৃষ্টিনন্দন। এর এই পাথুরে পথের সৌন্দর্য দেখতে পর্যটকের ভীড়।
সিলেটের লক্ষণছড়া যাওয়ার উপযুক্ত মৌসুম
সিলেট নগরীর সৌন্দর্য্যটা আসলে বর্ষাকালেই বেশী উপভোগ করা যায়। আর তা ছাড়া বর্ষার সময়ে লক্ষণছড়া পূর্ণযৌবন ফিরে পায়। তাই বর্ষার মৌসুমেই লক্ষণছড়ার আসল সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন লক্ষণছড়া
সিলেট থেকে লক্ষণছড়া যেতে হলে সর্বপ্রথম আপনাকে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে প্রথমে সিলেট নগরীর আম্বরখানা পয়েন্ট যেতে হবে। সেখানে বিমানবন্দর রোডের দিকে সিএনজি স্টেশন আছে। সিএনজি রিজার্ভ করে হাদারপাড় নামক জায়গা পর্যন্ত গেলে ভাল হয়। পাঁচজন মিলে ১০০০ টাকায় সাধারণত ভাড়া নেওয়া হয়।
তবে মানুষ কম থাকলে ৮০-১৫০ টাকা জনপ্রতিও যাওয়া যায়। হাদারপার বাজারটি খুব একটা বড় না আবার ছোটও না। মোটামুটি সবকিছুই পাবেন। খাবার, পানি, কাপড় সবই কিনতে পাওয়া যায়। হাদারপার বাজারেই বিছানাকান্দি – পান্থুমাই – লক্ষনছড়া যাওয়ার নৌকা পাওয়া যায়।
নতুন মানুষ ভেবে মাঝিরা ২০০০টাকা চেয়ে বসতে পারে। ভুলেও রাজি হবেন না। নৌকা ভাড়া আসা-যাওয়া সর্বোচ্চ ১১০০-১৫০০ টাকা হলে ভাল। দর কষাকষি করে এর চেয়ে কমে পেলে ভাল তবে অবশ্যই এর বেশি দামে যাবেন না। শুকনো মৌসুমে হেঁটে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে সময় লাগবে ৩০-৪০ মিনিট। বর্ষাকালে নৌকায় যাওয়াই উত্তম।
রাত্রিযাপন
যেতে আসতে সময় না লাগার কারনে আপনাকে আর থাকার চিন্তা করতে হবে না। সিলেটে থাকার মত অনেকগুলো হোটেল আছে, আপনি আপনার প্রয়োজন ও সামর্থ্য অনুযায়ী যে কোন ধরনের হোটেল পাবেন। কয়েকটি পরিচিত হোটেল হলো হোটেল হিল টাউন, গুলশান, দরগা গেইট, সুরমা, কায়কোবাদ ইত্যাদি। লালা বাজার এলাকায় কম ভাড়ায় অনেক মানসম্মত রেস্ট হাউস আছে৷ হোটেল অনুরাগ – এ সিঙ্গেল রুম ৪০০টাকা (দুই জন আরামসে থাকতে পারবেন), তিন বেডের রুম ৫০০টাকা (নরমালই ৪জন থাকতে পারবেন)। রাত যাপনের জন্য দরগা রোডে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। রুম ভাড়া ৫০০/- টাকা থেকে ৫০০০/- টাকা পর্যন্ত।
সব সময়ের মত এবারও বলছি ভ্রমণের সময় পরিবেশ বা প্রাণী জগতের ক্ষতি সাধিত হয় এমন কোন কাজ করবেন না। এই প্রকৃতি দূষণমুক্ত রাখার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
Add comment