সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ বিন্দু কালা পাহাড়ের অবস্থান মৌলভীবাজারের কুলাউরা উপজেলার কারমাদহ ইউনিয়নের বেগুণছড়া পুঞ্জিতে। এর উচ্চতা ১০৯৮ ফিট। গ্লোবাল লোকেশন N 24°24.586’ E 092°04.792’. এক দিনের ট্যুর হিসেবে আদর্শ একটি ট্যুর।
সিলেটের পাহাড় ভেবে কালা পাহাড় কে ছোট করবেন না। এই পাহাড়ের পরিবেশ অনেক বন্য, এই বন্য পরিবেশ আপনার সামর্থের যথেষ্ট পরীক্ষা নিবে।
সিলেটের কালা পাহাড়

মিশন কালা পাহাড়
সিলেটের কালা পাহাড়ে যাবার ট্রেকিং পথটি অনেক সুন্দর। পাহাড়ে উঠার পথ একটা (পাহাড়ি পথ) কিন্তু নামার পথ দুইটা, ঝিরি পথ ও পাহাড়ি পথ ( ঝিরি পথে গেলেও আপনাকে বেশ কিছুটা পাহাড়ি পথ দিয়ে হাটতে হবে)। বেগুণছড়া পুঞ্জি থেকে গাইড নিতে হবে সেই আপনাদের পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে কালা পাহাড়ের চূড়ায়। মোটামোটি দুই থেকে আড়াই ঘন্টা লাগে। উঠতে নামতে মোট পাচ সারে পাচ ঘন্টা লাগে। আগেই বলেছি এই পাহাড়ের পরিবেশ বেশ বন্য, এর চূড়ার পরিবেশ ও ঠিক তেমনি বন্য। অন্যান্য পাহাড়ের চূরা থেকে যেমেন আসে পাশের পরিবেশ পরিষ্কার দেখা যায়, এর চূড়া থেকে তেমনটা দেখতে পারবেন না। মোট কথা আপনি যদি ভিউ চান তবে এই পাহাড় আপনার জন্য নয়, তবে যারা এডভেঞ্চার প্রিয় তাদের জন্য এ পাহাড় আদর্শ। কেন আদর্শ তা একটু পরেই বুঝতে পারবেন।
যেভাবে যাবেন কালা পাহাড়
কালা পাহাড় যেতে হলে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে মৌলভীবাজারের কুলাউরা উপজেলায়। ঢাকা থেকে বাসে অথবা ট্রেনে যেতে পারবেন কুলাউরাতে (যদি একদিনের ট্যুর হয় তবে রাতের বাস বা ট্রেনে যাওয়া ভাল)। কুলাউরা আসার পর হালকা পাতলা নাস্তা করেনিন। তারপর সিএনজি নিয়ে চলে যান আজগরাবাদ টি স্টেট। আজগরাবাদ নেমে যে কাউকে জিজ্ঞাসা করলেই দেখিয়ে দিবে বেগুণছড়া পুঞ্জির পথ। ভয় পাবেন না পথ খুবই সোজা চাইলেও পথ ভুল করতে পারবেনা। বেগুণছড়া পুঞ্জির পথটা অসাধারন সুন্দর। যেতে পথে আপনাকে পাড়ি দিতে হবে ৫টা বাশের সাকু। সাকুর কথা শুনে চিন্তা করবেন না, যথেষ্ট মজবুত এবং খুব সহজেই পার হওয়া যায়। বেগুণছড়ার যাওয়ার শেষের দিকে দেখতে পাবেন একটা সুন্দর মাঠ (পুরাটা পথ আকা বাক এবং অমসৃণ কিন্ত মাঠ টা পুরাই তার বিপরীত)। মাঠটা দেখে আমাদের মনে হয়েছিল এ যেন রূপকথার তেপান্তরের মাঠ। যখন মাঠ দেখবেন তখন বুঝে নিবেন যে বেগুণছড়া পুঞ্জির খুব কাছে চলে এসেছেন আপনি।
চলতি পথে
বেগুণছড়া গেয়ে লেম্বুদার বাড়ি খোজ করবেন। যে কাউকে বলেই দেখিয়ে দিবে। লেম্বুদা এই পুঞ্জির হেডম্যান টাইপ কিছু একটা তাই সবাই ওনাকে চিনেন (01951649881লেম্বুদার ফোন নাম্বার )। উনার বাড়িতে গিয়ে বলেই হবে কালা পাহাড় যাবেন। উনি গাইড ম্যানেজ করে দিবেন, যদি উনি না থাকে তবে উনার ছেলে এই ব্যবস্থা করে দিবে। লেম্বুদা খুবই আন্তরিক এবং ভাল মানুষ। লেম্বুদা গাইড ঠিক করে দিয়ার পর গাইডের সাথে আলাপ করে নিবেন টাকার ব্যাপারে। তারপর যাত্রা শুরু করবেন কালা পাহাড় জয়ের উদ্দেশ্যে।

কালা পাহাড় অভিযান
আগেই বলেছিলাম পরিবেশ খুব বন্য। একটু হাটলেই দেখতে পারবেন হাতির মল, এই জায়গায় কি পরিমাণ হাতি আছে তা এদের মল দেখলেই বুঝতে পারবেন। মনে রাখবেন পাহাড়ের সুন্দর্য্য পাহাড়ের বাকে বাকে। এই পাহাড়ের বাক গুলোও আপনাকে নিরাস করবেনা। পাহাড়ি উচু নিচু পথে কিছুক্ষন হাটার পরেই আপনার সামনে হাজির হবে বেশকিছু খাড়া ঢাল যাদের বৈশিষ্ট হচ্ছে এক একটার থেকে বেশি খাড়া। সর্বশেষ ধাপটি আপনার চরম পরীক্ষা নিবে। তবে ভয় পাবেন না এই পরীক্ষায় সচারাচর কেউ ফেল করেনা। তবে অবশ্যই খুব সতর্ক থাকেবেন। শেষ ধাপের কিছু আগে এক পাহাড়ি বাকের শেষে আপনি দেখতে পারবেন এক সবুজের দেয়াল, এইটাই কালা পাহাড়।
রূপ বৈচিত্র্য
পাহাড়ের চুড়ার পরিবেশ আপনাকে একটু হতাশ করবে কারণ পুরো চুড়ার সীমানা জুরে রয়েছে বাঁশঝাড়ের । এই বাঁশঝাড়ের জন্য আপনি আশে পাশের পরিবেশ পরিষ্কার দেখতে পারবেন না। তবে হতাশ হবেন না, নামার সময় চুড়ার একটু নিচে বেশ বড় একটা খোলা জায়গা পাবেন যেখান থেকে আশে পাশের পরিবেশ সুন্দর দেখতে পাবেন। যারা কালা পাহাড় যাবেন তারা অবশ্যই কাগজ কলম নিয়া যাবেন(সামিট নোট লেখার জন্য)।
আগেই বলেছি নামার দুইটা রাস্তা, সিদ্ধান্ত আপনার তবে আমি বলব ঝিরি পথ দিয়ে আসার জন্য তাহলে পাহাড়ি পথ ও ঝিরি পথ এই দুই পথেরই অনুভূতি পাবেন। ঝিরিপথ দিয়ে নেমে রাজকি চা বাগান দিয়ে বের হয়া যায়, ওই দিক দিয়ে বের হলে হাটতে হবে বেশি। যদি রাজকি দিয়ে বের হন তবে বের হবার পর সিএনজি নিয়ে চলে আসবেন কুলাউরাতে। আমরা ঝিরি পথ ধরে নেমে পাহাড়ি পথে বেগুণভছরাপুঞ্জিদিয়ে বের হয়ে আজগরাবাদ টি স্টেট এর সামনে থেকে সিএনজি নেই কুলাউরার উদ্দেশ্য।

খরচপাতি
বাস = ঢাকা থেকে কূলাঊড়া = ৫০০ X ২ = ১০০০ টাকা
বাস স্ট্যান্ড থেকে আজগরাবাদ চা বাগান সিএনজি ভাড়া ৩০০ টাকা(রিজাভ)
রাজকি চা বাগান থেকে কুলাউরা বাস স্ট্যান্ড ৫০০ টাকা
গাইড কে দিতে হবে ৪০০/৫০০ টাকা।
যারা কালা পাহাড় যাবেন তারা অবশ্যই সাথে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিয়ে নিবেন( মাথা পিছু ১.৫ লিটার)
আর সাথে কিছু শুকণা খাবার
যেমন খেজুর, স্নিকারস, ম্যানগোবার ইতাদি। একটা কথা মাথায় রাখবেন ঘুরতে গেলে ভুলেও কোন সময় খাবারের পেকেট, চকলেটের পেকেট,
সিগেরেট এর ফিলটার ঘুরার স্থানে ফেলবেন না।
এই সব আবর্জনা নিজের সাথে রাখবেন, লোকালয়ের নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন।
কন্টেন্ট রাইটার- মাসুম রাব্বানী
Add comment