Porjotonlipi
Mumbai, India

ভারতবর্ষ ভ্রমণে, ইতিহাসের সন্ধানে (পর্ব ৭)

সিনেমার শহর মুম্বাই ভ্রমনের দ্বিতীয় দিন আমরা গিয়েছিলাম বলিউড রাজ্যে। সেই রাজ্যের নাম ফিল্ম সিটি যার প্রাতিষ্ঠানিক নাম দাদাসাহেব ফালকে চিত্রনগরী

সিনেমার শহর মুম্বাই এর বাকি কথা

এই সিনেমার শহর মুম্বাই এর গোরেগাঁও’র কাছে অবস্থিত একটি ফিল্ম স্টুডিও কমপ্লেক্স। এই নগরী ১৯৭৭ সালে রাজ্য সরকার দ্বারা চলচ্চিত্র নির্মাণের সুবিধার্থে বানানো হয়েছিল। নগরীর ভিতরে রয়েছে কয়েকটি স্টুডিও রেকর্ডিং কক্ষ, বাগান, হ্রদ, থিয়েটার – যেগুলো সিনেমা এবং ধারাবাহিক নাটক বানানর কাজে বহুল ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

ইতিহাস এবং নামকরণ

ভি শান্তরামের নির্দেশনায় চিত্রনগরীর পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং নির্মাণকাজ কার্যকর করা হয়েছিল।  দাদাসাহেব ফালকে – যিনি ভারতীয় চলচ্চিত্রের পথিকৃৎ, তাঁর স্মরনে ২০০১ সালে এই স্টুডিও কমপ্লেক্সের নামকরণ দাদাসাহেব ফালকে নগর  করা হয়। প্রায় ৫২০ একর জমির ওপর এই পুরো চিত্রনগরী নির্মাণ করা হয়েছে। এই বিশাল জায়গার মধ্যে কিভাবে বছরের পর বছর এত সিনেমা, অনুষ্ঠান আর ধারাবাহিক নাটকের কাজ করা হয়, সেই সম্পর্কেই আমরা জানতে পারব।

ধারাবাহিক নাটকের গুপ্তকথা

ফিল্ম সিটি মূলত বাংলাদেশের এফডিসি এর মত। নির্মিত সেটের ভিতরে চলছে শুটিং, দেখা যায় তারকাদের মেলা। ভারতীয় নাটক – সিনেমাগুলোতে যেসব বিশাল বিশাল মহল দেখা যায়, তার পুরোটাই দৃষ্টিভ্রম। কার্ডবোর্ড আর রঙ দিয়ে বানানো এই সেট গুলো যেন ক্যামেরার সামনে ধারণ করে পুরো ভিন্নরূপ। নগরীর ভিতরের ভবন গুলোতে হাতে বানানো এই সেট গুলো দিয়ে বানানো হয় হসপিটাল, আদালত, পাহাড় – পর্বত, বন – জঙ্গল, গ্রাম, ঝর্ণা ইত্যাদি।

ধারাবাহিক নাটক ছাড়াও এসব ভবন গুলোতে বানানো হয় বিভিন্ন রিয়েলিটি শো এবং অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের মঞ্চ।

চলচ্চিত্র গপ্পো

বলিউডের বড় বাজেটের সিনেমা থেকে শুরু করে অনেক জনপ্রিয় সিনেমার সেট এই ফিল্ম সিটির ভিতরেই। পুরো ফিল্ম সিটি ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট বাস এবং সাথে থাকে একজন করে ট্যুর গাইড, যিনি ফিল্ম সিটির আদ্যপান্ত বর্ণনা করেন। সেই বর্ণনার মধ্যে উঠে আসে বিভিন্ন সিনেমার নির্মাণ গল্প। সিটির ভিতরে রয়েছে একটি মন্দির যেটি অধিকাংশ হিন্দি সিনেমা এবং ধারাবাহিক নাটকে দেখা যায়। রয়েছে একটি পুকুর – যার পিছনে আছে একটি আকর্ষণীয় কাহিনী। সঞ্জয় লীলা বানসালীর ২০০২ সালে নির্মিত দেবদাস  সিনেমাতে শাহরুখ খানকে একটি পুকুরের মধ্যে দেখা যায়। বলা হয়ে থাকে শুটিং এর জন্য সেই পুকুরের পানি সেঁচে পুরো পুকুরকে bisleri মিনারেল পানি দিয়ে পূর্ণ করা হয়েছিল।

পুরো ফিল্ম সিটি ঘুরে দেখতে ঘণ্টা দুয়েক সময় লেগেছিল। চিত্রনগরী ঘুরে জানা গিয়েছে সিনেমা সম্পর্কে অনেক বিচিত্র তথ্য, ঘুরে দেখা হয়েছে জনপ্রিয় সব সিনেমার নির্মাণস্থল। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য ছিল জুহু বীচ।

বলিউডের ‘বেভারলি হিলস’ জুহু

Juhu Beach, Mumbai

জুহু মুম্বাইয়ের উপনগরগুলোর মধ্যে একটি। এই জুহু বিখ্যাত চিত্রশিল্পীদের বাসস্থান এবং জুহু সৈকতের জন্য প্রসিদ্ধ।

আরব সাগরের এর সৈকত মুম্বাইয়ের অন্যতম পর্যটন স্থল। সৈকতটি প্রায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ। এই সৈকতের বিভিন্ন খাবারের স্টলে পাওয়া যায় মুখরোচক স্ট্রিট ফুড – দই ফুচকা, পানিপুরি, ভেলপুরি, সেভপুরি, রঙ বেরঙের বরফ গোলা আরও কত কি! গনেশ চতুর্থীর সময়ে এই জুহু সৈকত ধারণ করে এক উৎসবমুখর চিত্র। সেপ্টেম্বর থেকে মে পর্যন্ত জুহু সৈকত ভ্রমনের সর্বোত্তম সময় কারণ সে সময় সমুদ্রে ভাটা পরে, যেটা পর্যটকদের জন্য নিরাপদ।

ভারতীয় নাগরিকদের দর্শনীয় স্থান গুলোকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য সচেতনতার কথা এর আগেও বলেছি। জুহু সৈকতেও সেই একই চিত্র। তবে এখানে পরিষ্কার কর্মীর পাশাপাশি আছে পুলিশি পাহারা। নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম যেন না করা হয়, সেজন্য মিনিট দুয়েক পর পর পুলিশ টহল দেখা যায়।

বলিউডের অনেক সিনেমায় জুহু সৈকতের সৌন্দর্য তুলে ধরা হয়। ভারতের অনেক তারকাদের বসবাস এই জুহু এবং বান্দ্রা তে। সেই জন্য জুহুকে বলিউডের ‘বেভারলি হিলস’ বলা হয়।

রাতের আধারে ভিক্টোরিয়ান স্থাপনা ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস

Chatrapati Shibaji Terminus

রাতে মুম্বাই শহর ধারণ করে এক আলোকিত রূপ। ছত্রপতি শিবাজী টার্মিনাস কে রাতে সাজানো হয় বর্ণিল আলো দিয়ে। ব্যস্ত কোলাহলপূর্ণ মুম্বাই যখন রাতে জনাকীর্ণ হয়ে যায়, তখন ঠাণ্ডা বাতাসে দাঁড়িয়ে সেই আলোকসজ্জা দেখার আনন্দ বেড়ে যায় অনেক গুণ।

 

কন্টেন্ট রাইটারঃ ফাতেমা নজরুল স্নেহা

 

Porjotonlipi

Add comment