বাংলাদেশ শুধু সবুজে শ্যামলেই সমৃদ্ধ নয় বরং এর রয়েছ অনেক অতীত ঐতিহ্যের সমৃদ্ধতাও যা আমাদের দেশকে করে তোলে অনন্য। পর্যটনলিপির এই আয়োজনে আমরা চেষ্টা করবো মদ্ধযুগে নির্মিত একটি মসজিদের সমৃদ্ধতা কে তুলে ধরার। এটি বাগেরহাট এর সিঙ্গাইর মসজিদ।
ঐতিহ্যবাহী সিঙ্গাইর মসজিদ
সিঙ্গাইর মসজিদ এর গঠন শৈলী
এই মসজিদটির সাধারণ বৈশিষ্ট ষাট গম্বুজ মসজিদ এর অনুরূপ। মসজিদের সামনের দেয়ালে নির্দিষ্ট দূরত্ব পর পর তিন টি দরজা রয়েছে এবং চার কোনায় রয়েছে বাইরের দিকে গোলাকার বর্ধিত চারটি বুরম্নজ যা মসজিদের কার্নিশ উঠান পর্যন্ত। এটি মূলত একটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। মসজিদের বাইরের দিকের আস্তরবিহীন দেয়ালগুলোর পুরুত্ব গড়ে প্রায় ২.১ কিলোমিটার। পূর্বদিকের দেয়ালে খিলান দরজা রয়েছে ৩ টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রতিটিতে খিলান দরজার সংখ্যা ১ টি। পূর্ব দেয়ালের মাঝখান বরাবর যে খিলান দরজা রয়েছে তার আকার অন্যগুলোর থেকে বড়। আর ভিতরে প্রবেশ করলে দেখা যাবে পশ্চিম দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে দুপাশে দুটি কুলংগী সহ একটি অবতল মিহরাব। অনুরূপ কুলঙ্গী উত্তর ও দক্ষিণের দরজা গুলোর দুপাশে ও আছে।
অবস্থান
সিংগাইর মসজিদ টি বাগেরহাট জেলার সদর উপজেলায় খুলনা বাগেরহাট মহাসড়কের পাশে অবস্থিত। এটি ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় ২ কি. মি. দক্ষিণ পূর্বে এবং খান জাহান আলী এর সমাধি বরাবর প্রায় দেড় কিলমিটার উত্তরে সুপারি এবং অন্যান্য গাছ গাচালিতে ঘেরা এই ঐতিহাসিক মসজিদ।
ইতিহাস
বাংলাদেশের পুরাতন এক গম্বুজ মসজিদ গুলোর মধ্যে এটিই সবচেয়ে বড় এক গম্বুজ মসজিদ।গঠন শৈলী বিচারে এটিকে নিঃসন্দেহে খান জাহান আলী এর সময়ের স্থাপত্য হিসেবে গণ্য করা যায়। এটি প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো স্থাপত্য। অর্থাৎ এই মসজিদ টি নির্মিত হয়েছে মূলত মুঘল আমলে, আনুমানিক ষোলশ শতাব্দীতে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
দুর্গাপুরের বিভিন্ন রং এর মাটি এবং পানি সাথে সাথে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য যেকারো মন কে বিমোহিত করতে পারে। সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নীলাভ বিভিন্ন রং এর মাটি এর পাহাড় চোখ কে জুড়িয়ে দেয়। এজেনো এক বিরল সৌন্দর্য। এছাড়া সাদা মাটির পাহাড়ের গা ঘেঁষে রয়েছে সবুজ ও নীল পানির লেক। আরো রয়েছে রানিক্ষ মিশনারী খ্রিস্টান ক্যাম্প ও বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প, আরও দেখতে পাবেন বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেসা উঁচু গারো পাহাড, কমলা বাগান, সোমেশ্বরী নদী, ফান্দা ভালী ও বিরিশিরি কালচার একাডেমী।
কিভাবে যাবেন সিঙ্গাইর মসজিদ
ঢাকা থেকে দুর্গাপুর যেতে হলে সবথেকে ভালো হবে যদি নাইট কোচ সার্ভিস বেছে নেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ এরপর ময়মনসিংহ ভায়া শামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোনা, নেত্রকোনা থেকে দুর্গাপুর এরপর সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিক্সা বা মটরবাইক যোগে আধা কাঁচা আধাপাকা রাস্তা দিয়ে বিজয়পুর এর সাদা মাটির অঞ্চলে যাওয়া যায়।এর যদি ট্রেন এ করে যেতে চান,তবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোর ৪.৪৫ মিনিটে বলাকা কমিউটার ছেড়ে যায় ময়মনসিংহ হয়ে জারিয়ার উদ্দেশ্যে। ট্রেন থেকে নেমে পেয়ে যাবেন সি এন জি, লেগুনা, মহিন্দ্রা কিংবা ভাড়ায় চলা মোটর সাইকেল যাতে করে আপনি অতি সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন দুর্গাপুর।
আর এখানে থাকার মত ভালো মনের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজও রয়েছে ৷ এখানকার থাকার হোটেল গুলোর ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ৷
অনুরোধ
এই দেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে এমন হাজারো পুরাকীর্তি যা শত শত বছরের প্রাচীন ইতিহাস কে ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে এই বাংলার বুকে। কিন্তু দুঃখজক হলেও সত্য যে, এসকল নিদর্শনের অধিকাংশ সম্পর্কে আমরা হয়তো জানিও না, জানলে ও এর ইতিহাস কে আমরা লালন করতে পারছি না। আর এসব পুরাকীর্তির যত্ন ও সংস্কার এর অভাব তো আছেই। কিন্ত আমাদের উচিত এই সমস্ত ঐতিহাসিক স্থান সমূহ সম্পর্কে জানা এবং এর ইতিহাস কে ধারণ করা।
কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর তাসমিয়া তাহারাত সৌখিন
Add comment