সন্দ্বীপ বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরের উত্তর – পূর্ব অঞ্চলের একটি উপজেলা। সন্দীপের পাশেই মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মিলন লক্ষ্য করা যায়।
অপরূপ সৌন্দর্যের সন্দ্বীপ
এই সন্দ্বীপের সৌন্দর্য মুগ্ধ করে ভ্রমণ প্রেমিকদের। এখানে রয়েছে প্রায় ৩,৫০,০০০ মানুষের বসবাস। প্রতি বছর অনেক মানুষের সমাগম ঘটে এর মুগ্ধতার কারণে।
নামকরণের ইতিহাস
লোকমতে বলা হয়, সন্দ্বীপ নামটি মুলত এসেছে স্থানীয় মানুষদের মুখ থেকেই। এছাড়া অনেক মানুষের মতে বাগদাদ থেকে ১২ জন আউলিয়া চট্রগ্রামে যাওয়ার পথে এটি আবিষ্কার করেন এবং তারাই এর নামকরণ করে। অন্যদিকে কিছু পন্ডিতদের মতে, পর্তুগিজরা এই দীপের নাম সন্দ্বীপ রাখে।
ইতিহাস ও বর্তমান অবস্থা
বলা হয়ে থাকে যে এই সন্দ্বীপ প্রায় ৩ হাজার বছর পুরনো একটি দ্বীপ। পূর্বে এটি চট্রগ্রামের সাথে থাকলেও পরে এক প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারনে আলাদা হয়ে যায়।
১৪শ শতাব্দীর দিকে আফগানিস্তান থেকে আগত সুলতান বলখি, যিনি ইসলাম ধর্মের একজন প্রবক্তা তিনি এই সন্দ্বীপে আসেন এবং এখানে কিছু বছর থাকেন।এর আসল চাহিদা লক্ষ করা যায় ১৫শ শতাব্দীতে, যখন এই অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে লবন পাওয়া যেত। ১৬০৫ সালে লবণের সন্ধানে এখানেই টিবাওরা আসে এবং শাসন করা শুরু করে। টিবাওদের শাসনের পর আসে মুঘল সাম্রাজ্যের শাসন। মুঘল সাম্রাজ্য চলাকালীন আব্দুল করিমকে তখন এই সন্দ্বীপের সেনাবাহিনীর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। এছাড়া এরপরে বৃটিশদের আমলে এই সন্দীপ ছিল একটি বিশেষ আকর্ষণ।
১৯৬৬ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ৬ ধারা আন্দোলন এই সন্দীপ থেকে শুরু হয়। ১৮২৫ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত অনেক বড় বড় সাইক্লোন এখানে আঘাত আনে। এই পর্যন্ত এখানে প্রায় পাঁচ বার এমন বড় আঘাত দেখা যার কারণে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটে।
সন্দ্বীপ এর দর্শনীয় স্থান
সন্দ্বীপে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য প্রায়শই পর্যটকদের মুগ্ধ করে থাকে। প্রতিবছর দেশের নানা প্রান্ত থেকে শত শত মানুষের আগমন সেখানে দেখা যায়। সন্দ্বীপের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- সবুজ চর, ভাঙ্গা জাহাজে কারখানা, মরিয়ম বিবি মসজিদ এবং মনপুরা দীপ। বিখ্যাত অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর মনপুরা সিনেমাটি এখানেই ধারণ করা হয়। সন্দ্বীপ যাওয়ার পথে কুমিরা ঘাটটিও দর্শনার্থীদের ব্যাপক নজরকাড়ে।
যেভাবে যাবেন সন্দ্বীপ
দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে চট্টগ্রামগামী বাসে উঠে কুমিরা বাস স্ট্যান্ড নেমে কুমিরা ঘাট থেকে স্পিড বোট কিংবা ট্রলারে করে আপনারা সন্দ্বীপে যেতে পারবেন। যেহেতু সন্দ্বীপ একটি দ্বীপ তাই সেখানে যাওয়ার জন্য নৌপথে একমাত্র উপায়। মনে রাখবেন ভ্রমণে গিয়ে স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন এবং পরিবেশ দূষণ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন।
কন্টেন্ট রাইটারঃ অলিয়া রহমান
Add comment