Porjotonlipi

লালবাগ কেল্লা ও জানা অজানা তথ্য

লালবাগ কেল্লা পুরান ঢাকায় অবস্থিত। ঘিঞ্জি পরিবেশের পুরান ঢাকা নামে পুরনো হলেও দাপটের জৌলুস এখনও আগের মতই রয়ে গেছে। ঘোরাঘুরি এবং খাওয়াদাওয়ার তালিকায় পুরান ঢাকার বেশ কিছু জায়গা তালিকায় দখল করে নেয়।

জানা অজানার লালবাগ কেল্লা

বিভিন্ন পুরনো মসজিদ-মন্দিরের পাশাপাশি এখানে রয়েছে কয়েকটি পুরনো মুঘল স্থাপনা। তারই একটি লালবাগ কেল্লা। ছুটির দিনে সেখানে বেড়াতে যায় নানা বয়সের হাজারো মানুষ। সকাল থেকে বিকেলের সূর্যাস্ত পর্যন্ত এই কেল্লার রুপের দেখা মিলে। আজকে জেনে আসি লালবাগ দুর্গ সম্পর্কে অজানা, বিচিত্র কিছু তথ্য।


Lalbag-Fort

লালবাগ কেল্লা এর মুঘল ইতিহাস 

শুরুতে এই দুর্গের নাম ছিল কিলা আওরঙ্গবাদ । মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব এর তৃতীয় পুত্র মুঘল সুবেদার আজম শাহ্‌  ১৬৭৮ সালে ঢাকার দক্ষিন- পশ্চিমাঞ্চলে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে এই দুর্গ নির্মাণ করান এবং তার পিতার নামানুসারে দুর্গের নামকরণ করেন। দুর্গের নির্মাণকাজ চলাকালীন পিতা আওরঙ্গজেব পুত্রকে সেসময়ের মারাঠা বিদ্রোহ দমনের জন্য দিল্লী ডেকে পাঠান। মসজিদ এবং দরবার হল সমাপ্ত হওয়ার পরে নির্মাণকাজে বিরতি আসে। বছরদুয়েক পরে ১৬৮০ সালে আজম শাহ্‌ এর উত্তরসুরি সুবেদার শায়েস্তা খাঁ  পুনরায় এর নির্মাণকাজ চালু করেন। এর চার বছর পরে শায়েস্তা খাঁ-এর কন্যা ইরান দুখত রাহমাত বানু ওরফে পরী বিবি’র অকালমৃত্যু হয়। এইকারনে শায়েস্তা খাঁ দুর্গটিকে অপয়া মনে করেন এবং নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেন। সেই থেকে দুর্গটি একটি অসমাপ্ত মুঘল স্থাপনা।
Lalbag-Fort-Mosque

মুঘল অবকাঠামো অনুসরণে নির্মিত দুর্গ  

লালবাগ কেল্লা বলতে এখন শুধু পরী বিবি’র মাজারকেই বোঝানো হয়ে থাকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় যাবত মানুষ মনে করত এখানে তিন ধরনের স্থাপনার সমন্বিত প্রাঙ্গণ যেখানে রয়েছে পরী বিবি’র মাজার, দেওয়ান-ই-আম, এবং মসজিদ। শায়েস্তা খাঁ ঢাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার পর নানা কারণে লালবাগ দুর্গের গুরুত্ব কমতে থাকে। ১৮৪৪ সালে ঢাকা কমিটি নামে একটি আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠান দুর্গের উন্নয়ন কাজ শুরু করে। এ সময় দুর্গটি লালবাগ দুর্গ  নামে পরিচিতি লাভ করে। ১৯১০ সালে লালবাগ দুর্গের প্রাচীর সংরক্ষিত স্থাপত্য হিসেবে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এর অধীনে আনা হয়। অবশেষে নির্মাণের ৩০০ বছর পর গত শতকের আশির দশকে দুর্গের যথাসম্ভব সংস্কার করে এর আগের রূপ ফিরিয়ে আনা হয় এবং দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এখানকার স্থাপনার অন্তর্গতঃ পরীবিবির সমাধি বেশ উল্লেখযোগ্য।


Lalbag-Fort-Poribimazar

কেল্লার চত্বরে তিনটি স্থাপনা রয়েছে কেন্দ্রস্থলের দরবার হল ও হাম্মাম খানা, পরীবিবির সমাধি, উত্তর পশ্চিমাংশের শাহী মসজিদ। এছাড়া দক্ষিণ-পূর্বাংশে সুদৃশ্য ফটক, এবং দক্ষিণ দেয়ালের ছাদের উপরে বাগান রয়েছে।বর্তমানে রবিবার পূর্ণ দিবস ও সোমবার অর্ধদিবস বন্ধ থাকে। সপ্তাহের বাকী ছয়দিন এই কেল্লা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে।

এই কেল্লায় এখনও টিকেট কেটে ঢোকার নিয়ম প্রচলিত আছে। স্থানীয় দর্শনাথীদের জন্য টিকেট মূল্য জনপ্রতি ২০ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি টিকেট মূল্য ১০০ টাকা, এবং অন্যান্য দেশের পর্যটকদের জন্য জনপ্রতি টিকেট মূল্য ২০০ টাকা।

 

 

Porjotonlipi Desk

3 comments