আমাদের এই বাংলার আনাচে কানাচে লাউচাপড়া অবকাশ কেন্দ্র এর মত ছড়িয়ে আছে নানান অপার সৌন্দর্য। আর হয়তো এই সকল সৌন্দর্যের সন্ধান এখনো অনেকের কাছেই অজানা। কিন্তু তাতে কি, পর্যটনলিপি তো আছেই। পর্যটনলিপি নিয়মিত বাংলার অবারিত সৌন্দর্য আপনাদের সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সবুজে ঘেরা লাউচাপড়া অবকাশ কেন্দ্র
প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ শহুরে মানুষদের বছরে খুব কম সময়ই ঘটে। আর তাই প্রকৃতি প্রেমিরা ছুটির দিনগুলোকে একান্ত প্রকৃতির সাথে বিলিন করতে যেতে পারেন জামালপুরের লাউচাপড়াতে। সেখানে ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠে যত দূরে চোখ যায় শুধুই সবুজের বিস্তীর্ণ বিস্তার কিন্তু মজার বিষয় হল থাকার জায়গাগুলো আটসাঁট হলেও মিলবে প্রকৃতির হিমেল ছোঁয়া। কাঠ ঠোকরা আর হলদে পাখির কলতানে কেটে যাবে ছুটির দিনগুলো। লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্রে বেড়াতে গেলে এমন কিছুরই সন্ধান আপনি সহজে পেতে পারেন।
কিভাবে যাবেন লাউচাপড়ায়
লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্র জামালপুর জেলার অধীনে হলেও যাওয়ার সহজপথ হলো শেরপুর হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুরে যায় ড্রীমল্যান্ড পরিবহনের বাস। শেরপুর থেকে বাসে বকশীগঞ্জ চলে যাবেন। সেখান থেকে রিকশা কিংবা ভ্যান ভাড়া করে চলে যাবেন লাউচাপড়াতে।
অপরূপ লাউচাপড়া
বকশিগঞ্জ ছেড়ে যতোই সামনে এগুতে থাকবেন চারিদিকটা যেন ততোই সবুজ হতে থাকবে। কোথাও কোথাও চলতি পথে সবুজের খেলা দেখতে দেখতে এক সময়ে এসে পৌঁছুবেন এক পাহাড়ের পাদদেশে। চারিদিকে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকা বাঁকা একটি সিঁড়ি উঠে গেছে একেবারে চূড়ায়। সেখানে আবার রয়েছে বিশাল এক ওয়াচ টাওয়ার। দশ থেকে বারোটি সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠলে চারিদিকে সবুজ ছাড়া অন্য কিছুই আর চোখে পড়েনা। দূরে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া সব পাহাড়।
চারিদিকটা কেমন যেন ছবির মতো মনে হয়। এই পাহাড়ি জঙ্গলে রয়েছে নানা জাতের পশু পাখি। ধান পাকার মৌশুমে আবার মেঘালয় থেকে চলে আসে বুনো হাতির দল। কাঠ ঠোকরা, হলদে পাখি, কালিম পাখি আরো কত ধরণের পাখি চোখে পড়বে এখানে এলে। লাউচাপড়ার এ পাহাড় বেড়িয়ে ক্লান্ত হলে নিচে নেমে একটু বসতে পারেন লেকের ধারে। কৃত্রিম এ লেকটি আপনার মনে সহজেই নিয়ে আসবে প্রশান্তি। আপনি চাইলে লেকের পাশে কোন গাছের ছায়ায় বসে কাটাতে পারেন কিছুটা সময়। পিকনিক মৌসুমে এখানে থাকে পিকনিক পার্টির ভীড়। জামালপুর জেলা পরিষদ পুরো জায়গাটি অবসর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে।
লাউচাপড়া অবকাশ কেন্দ্রের বৈচিত্র্য
আপনারা চাইলে দেখে আসতে পারেন এখানকার উপজাতিদের ছোট্ট একটি গ্রাম। গারো উপজাতিদের এ গ্রামের নাম দিকলাকোনা। এ গ্রামে বাইশ পরিবারে রয়েছে একশ জন গারো। তারা সবাই খৃষ্ট ধর্মাবলম্বী। গ্রামে প্রবেশের আগে কথা বলতে পারেন এ গ্রামের মাতুব্বর প্রীতি সন সারমার সাথে। ভীষণ সদালাপি এ লোকটির আতিথেয়তায় মুগ্ধ হবেন আপনি। প্রতিবছর বড়দিন, ইংরেজী নববর্ষ, ইস্টার সানডে উপলক্ষে এ গ্রামে হয় নানান উৎসব। দিকলাকোনা গ্রামের শুরুতেই রয়েছে ‘দিকলাকোনা সালগিত্তাল হোস্টেল’। লাউচাপড়ায় রাত কাটানো হতে পারে আপনার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রাতে যেন আরো শান্ত, আরো স্নিগ্ধ। রাতে এখানে থাকার জন্য দুটি রেস্ট হাউস অছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিসোর্ট।
আশা করছি আপনারাও এসে ঘুরে যাবেন এই অসম্ভব সুন্দর জায়গাটি থেকে। কিন্তু সবসময় মনে রাখবেন আপনার দ্বারা এখানকার প্রকৃতি কিংবা জীব বৈচিত্রের কোন ক্ষতি যেন না হয়।
Add comment