রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের গল্প – পর্ব ১

আজ বলছি রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের গল্প। প্রাচীন পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ রাজশাহীর জনবসতি হাজার বছরের ঐতিহ্য বহন করছে। মৌর্য, গুপ্ত, পাল, সেন, মোগল, ইংরেজরা এ অঞ্চলে শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।

রাজশাহীর পদ্মা ও তার গল্পের প্রথম পর্ব

এ অঞ্চলে রাজারাজড়াদের অবাসস্থলকে কেন্দ্র করে নাম হয়েছে রাজশাহী। পদ্মা পাড়ের জেলা রাজশাহীর কিছু অজানা গল্প নিয়ে আজকের আয়োজন।

রাজশাহীর পদ্মা পাড়ের পূর্ব গল্প

পঞ্চদশ শতকে ভাতুরিয়া দিনাজপুরের জমিদার রাজা কংস বা গনেশ এ অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন। তিনি রাজা শাহ নামে পরিচিতি ছিলেন। মনে করা হয় ‘রাজা’ আর ‘শাহ’ মিলে রাজশাহী নামকরণ হয়েছে। শহরের নিচ দিয়ে বয়ে গেছে একদা প্রমত্তা পদ্মার প্রাণলীলা। শহরের দক্ষিণে পদ্মার বিশালতা হাতছানি দেয়।

বরেন্দ্র জাদুঘরের গল্প

দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ প্রত্নতাত্ত্বিক সংগ্রহশালা বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর রাজশাহী শহরের কেন্দ্রস্থল হাতেম খাঁন মহল্লায় অবস্থিত। বঙ্গীয় শিল্পকলার অপূর্ব সমাহারে সমৃদ্ধ এই সংগ্রহ শালাটি রাজশাহী তথা বাংলাদেশের গর্ব এবং অহংকার। বরেন্দ্র অঞ্চলের রাজন্যবর্গ, সমসাময়িক জ্ঞানী, গুণী ও পন্ডিতজন এখানকার নিজস্ব ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সংরক্ষণের জন্য ১৯১০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর। ১৮৬০ সালের ভারতীয় সমিতি আইন অনুযায়ী ১৯১৪ সালে বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর নিবন্ধন লাভ করে। ভারতবর্ষে প্রাচীনকাল থেকেই শিল্পকলার একাধিক ঘরানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে বিখ্যাত হচ্ছে গান্ধারা, সারনাথ, মথুরা, মগধ এবং বরেন্দ্র ঘরানা।

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘর বরেন্দ্র ঘরানাকে প্রতিনিধিত্ব করছে। বরেন্দ্র অঞ্চলের যশস্বী ভাস্কর ধীমান ও তার পুত্র বীতপালের নেতৃত্বধীনে পাল আমলে এই অঞ্চলের বিশেষ ঘরানার প্রতিনিধিত্বশীল ভাস্কর শিল্পের একটি বিদ্যালয় ছিল। বরেন্দ্র অঞ্চলের উদ্ধার করা সিংহভাগ ভাস্কর্য এই বিদ্যালয় থেকে সৃষ্ট।

বরেন্দ্র জাদুঘরের প্রদর্শনী

বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে প্রদর্শিত সুষমামন্ডিত শত শত মূর্তি, রাজ্যপালের ভাতুরিয়া লিপি, প্রথম মহিপালের রাজভিটালিপি, দেওপাড়া প্রশস্তি এবং লক্ষণ সেনের বাগবাড়ী প্রশস্তিতে বরেন্দ্রের নিজস্ব শিল্প ঘরানার যথার্থতা উন্মোচিত হয়েছে। বরেন্দ্র গবেষণা জাদুঘরে রয়েছে সমৃদ্ধশালী একটি পুঁথি সংগ্রহশালা। এছাড়াও রয়েছে প্রায় পনেরো হাজার দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ ও পত্রিকা সমৃদ্ধ একটি গ্রন্থাগার। জাদুঘরে রক্ষিত প্রত্ননির্দশনগুলো নিয়ে সম্যক জ্ঞান লাভের জন্য সংশ্লিষ্ট বই পুস্তক জাদুঘরের গ্রন্থাগারে রয়েছে। জাদুঘরে মুসলিম ঐতিহ্য ও আবহমান বাংলা কক্ষের সংযোজন ঘটেছে। এছাড়াও জাদুঘরে সংরক্ষিত জৈব্য ও অজৈব্য পুরাবস্তু পরিচর্যার জন্য একটি আধুনিক সংরক্ষণশালা নির্মিত হয়েছে। প্রতিদিন শত শত বিদ্যার্থী, পর্যটক এবং জ্ঞানান্বেষীগণ এই প্রাচীন জাদুঘরটির বিশাল ও বৈচিত্র্যময় সংগ্রহ দেখে মুগ্ধ হন।

কিভাবে যাবেন

রাজশাহী জিরোপয়েন্ট থেকে আনুমানিক ৮০০ মিটার পশ্চিমদিকে প্রধান সড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত বরেন্দ্র জাদুঘর। রিক্সাতে কিংবা অটোতে চড়েই চলে যাওয়া যায় সেখানে।