আজ আমরা আপনাদেরকে নিয়ে যাব ঢাকা থেকে ৩৪০ কিঃমিঃ দক্ষিণে কর্ণফুলী লেক ও পাহাড় পর্বতে বেষ্টিত বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও একমাত্র রিক্সা বিহীন জেলা রাঙ্গামাটি। রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে যেতে যেতে আপনাদেরকে রাঙ্গামাটি সম্পর্কে কিছু প্রাথমিক তথ্য জানিয়ে দেই। এই জেলার আয়তন ৬,১১৬.১৩ বর্গ কিলোমিটার। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্যে ভরপুর এই রাঙ্গামাটি জেলা। বাংলাদেশের তিনটি পার্বত্য জেলার মধ্যে রাঙ্গামাটি সবচেয়ে প্রাচীন। চাকমা রাজার সদর দপ্তর এই জেলায় অবস্থিত। ১০ টি উপজেলা নিয়ে রাঙ্গামাটি গঠিত যেগুলো হল রাঙ্গামাটি সদর, বাঘাইছড়ি, লংগদু, নানিয়ারচর, বিলাইছড়ি, জুরাছড়ি, বরকল, কাপ্তাই, কাউখালী, রাজস্থলী । মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে রাঙ্গামাটি ছিল ১ নং সেক্টরের অধীনে। এবারের পর্বে আমরা আপনাদের রাঙ্গামাটিকে এক নতুন রূপে তুলে ধরার চেষ্টা করব।
অভিযানের শুরুতে একটি কথা জানিয়ে রাখি আপনাদের, আপনারা রাঙ্গামাটি বলতে যে শহরটিকে দেখেন বা দেখবেন এটি কিন্তু নতুন রাঙ্গামাটি। কাপ্তাই বাঁধের জন্য পুরাতন রাঙ্গামাটি ডুবে গেছে এবং নতুন রাঙ্গামাটির পত্তন হয়েছে। এই জেলায় চাকমা, তৎচঙ্গা, খ্যাং এবং লুসাই উপজাতির লোক বাস করে। একটি সহায়ক কথা বলে রাখি, যারা রাঙ্গামাটিতে ভ্রমন করতে যাবেন তারা রাঙ্গামাটি শহরের রিজার্ভ বাজার নামক জায়গায় অবস্থান করার চেষ্টা করবেন, এতে করে আপনি রাঙ্গামাটির সকল পর্যটন স্থানসমুহে অনায়াসেই যাতায়াত করতে পারবেন।
রাঙ্গামাটি লেক বেষ্টিত এলাকা হওয়াতে নৌকা বা ট্রলার যোগে আপনাকে সমস্ত রাঙ্গামাটি ঘুরে দেখতে হবে এবং এতে করে আপনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সর্বোচ্চ স্বাদ আস্বাদন করতে পারবেন। আপনি রিজার্ভ বাজার এলাকা থেকে সহজেই নৌকা ভাড়া করে নিতে পারবেন যার ভাড়া ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা হতে পারে। আপনি নৌকা যোগে যে সমস্ত স্থান ঘুরে দেখবেন এর মধ্যে প্রথমে আপনি যেতে পারেন চাকমা রাজা বিহার, মানিকছড়ির প্রধান বৌদ্ধবিহার ইত্যাদি। চাকমা রাজ বিহারে দেখতে পাবেন সম্রাট আকবরের আমলের কামান এবং সেই সাথে চাকমা রাজা ভুবন মোহন রায়ের ভাস্কর্য সহ আর অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। অন্যদিকে বৌদ্ধ বিহারে সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটি হল সপ্তম স্বর্গ।
তাছাড়া বৌদ্ধ মন্দির ও মূর্তির মত নানা আকর্ষণীয় জিনিসতো আছেই। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় জিনিসটি হল ‘পুজ্য বনভান্তে’ র মমি করা মৃত দেহ যার ছবি তোলার নিষেধাজ্ঞা থাকার কারনে আপনাদের দেখাতে পারলাম না। এর এই মন্দিরের আরেকটি সৌন্দর্য বর্ধনকারী উপাদান হল বানর। ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই, আপনার কোন ক্ষতি তারা করবে না। তবে খেয়াল রাখবেন আপনার দ্বারা কোন ক্ষতি যেন তাদের না হয়। তারপর এখান এখন আমরা চলে যাব সরাসরি বরকল উপজেলায়, যেখানে আপনি দেখতে পাবেন পাহাড় আর মেঘের আলিঙ্গন। তবে সেটা যদি হয় পূর্ণ বর্ষায়। আর আপনি যদি একটু কষ্ট করে পাহাড়ের চুড়ায় উঠতে পারেন তবে আর আপনাকে মেঘের ভালোবাসা প্রাপ্তিতে ঠেকায় কার সাধ্যি। এই অপরূপ সৌন্দর্য দর্শন শেষ করে চলে যান শুভলং জলপ্রপাত দেখতে। যার সৌন্দর্য মুখে বলে বা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না, আপনি নিজের চোখেই দেখে নিন। শুভলং দর্শন শেষ করে এখন আমরা চলে যাব মধ্যাহ্ন ভোজনে। এই এক মজার পর্ব। সৌন্দর্য ও বাহারি খাবার এক সাথে পাবেন ‘পেদা টিং টিং’ ও ‘চাং পাং’ রেস্টুরেন্ট এ। যা আপনারা গেলেই দেখতে পাবেন।
তারপর সেখান থেকে চলে যান রাঙ্গামাটি র প্রতিক ঝুলন্ত ব্রিজ দেখার জন্য। কাপ্তাই লেক ও ঝুলন্ত ব্রীজ দেখতে দেখতে সৌন্দর্যের তৃষ্ণা মিটিয়ে নিন। তারপর সেখান থেকে সূর্যাস্ত দেখে ফিরে যান আপনার নির্ধারিত হোটেলে। এর পাশাপাশি বলে রাখি আপনারা চাইলে ডিসি বাংলো ও ঘুরে দেখে আস্তে পারেন। রিজার্ভ বাজার থেকে পায়ে হেঁটে যেতে পারেন, অন্যথায় আপনাকে সিএনজি চালিত অটোরিক্সা নিয়ে যেতে হবে। আপনি এই শহরে চাইলেই কোন রিক্সা পাবেন না, যেহেতু এই শহরে কোন রিক্সা নেই। আজ এই পর্যন্তই। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন এবং পর্যটনলিপি র সাথেই থাকবেন। আর আপনাদের মতামত আমাদেরকে অবশ্যই লিখে জানান। ধন্যবাদ।
[…] নিবিড় আলিঙ্গনে বাঁধা রূপের রানি রাঙ্গামাটির পথে পথে রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। […]