মুড়াপাড়া রাজবাড়ি এর মত বাংলাদেশের অনেক জেলাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে হাজারখানেক রাজবাড়ি। ধ্বংসপ্রায় প্রত্যেকটি ভবনেরই রয়েছে আলাদা ইতিহাস।
সম্ভ্রান্ত মুড়াপাড়া রাজবাড়ি
বাংলাদেশে যে কয়টি জমিদার বাড়ি রয়েছে, তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলার এই মুড়াপাড়া জমিদার বাড়িটি অন্যতম। একসময়কার জমিদার বাড়িতে বর্তমানে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালিত হয়ে থাকে।
রাজকীয় ইতিহাস
মুড়াপাড়া রাজবাড়ি নারায়ণগঞ্জ জেলার রুপগঞ্জ উপজেলার মুড়াপাড়া গ্রামে অবস্থিত। গ্রামের নামানুসারেই মহলের নামকরণ করা হয়েছে। ১৮৮৯ সালে জমিদার রামরতন ব্যানার্জী একটি একতলা মহল গড়ে তোলেন। তার মৃত্যুর পর পুত্র প্রতাপচন্দ্র ব্যানার্জী মূল প্রাসাদের পিছনে আরেক্যি মহল নির্মাণ করেন এবং সপরিবারে বসবাস শুরু করেন। তার পুত্র বিজয়চন্দ্র ব্যানার্জী ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দে প্রাসাদের সামনে একটি ভবন এবং ২টি পুকুর খনন করান, যার একটি মহলের সামনে এবং অপরটি মহলের পিছনে রয়েছে। তার দুই পুত্র জগদীশ চন্দ্র ব্যানার্জী এবং আশুতোষ চন্দ্র ব্যানার্জী মূল প্রাসাদের দ্বিতীয় তলার কাজ শেষ করেন।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময়ে জমিদার জগদীশ চন্দ্র সপরিবারে ভারত গমন করেন, যে কারণে মহলটি পরিত্ত্যাক্ত অবস্থায় পরে থাকে। পরে ১৯৪৮ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার একটি হাসপাতাল ও কিশোরী-সংশোধন কেন্দ্র স্থাপন করেন। তারও কয়েক বছর পর ১৯৬৬ সালে সেই ভবনে চালু হয় স্কুল-কলেজের কার্যক্রম।
১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাড়িটির দায়িত্ব নিয়ে বাড়িটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপনা হিসেবে ঘোষণা করে। বর্তমানে ভবনটি সরকারি মুড়াপাড়া কলেজ নামে পরিচিত, এবং সেখানে এখনও শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।
মুড়াপাড়া রাজবাড়ি এর মহল অবকাঠামো এবং চতুর্পাশ
৬২ বিঘা জমির ওপর বিশাল মহল এলাকা কয়েকটি থাকার ভবন, পুকুর, ভাণ্ডার এবং ১টি আস্তাবল রয়েছে। মূল ভবনে রয়েছে ৯৫টি কক্ষ, যার সবকয়টিই কারুকার্যময়। আরও আছে কাচারিঘর, অতিথিশালা, নাচঘর, পূজামণ্ডপ, বৈঠকখানা ইত্যাদি। রাম রতন ব্যানার্জী এর নাতি বিজয়চন্দ্র ব্যানার্জী ভবনের সামনে এবং পিছনে দুইটি পুকুর খনন করান, যার মধ্যে সামনের পুকুরটি বড় এবং পিছনের পুকুরটি তুলনামুলক ছোট।
মূল ভবনে মহাবিদ্যালয়ের কার্যক্রম চালু থাকলেও কালের পরিক্রমায় পিছনের ভবনগুলো ক্ষয় হতে শুরু করেছে। মহল প্রাঙ্গনে রয়েছে মন্দির যেগুলো এখনও রঙিন রঙে সেজে রয়েছে।
সতর্কতা
রাজবাড়ি ভ্রমনে গেলে একটি দল করে যাওয়া ভাল, এবং দিনটি কোন ছুটির দিন হওয়াই ভাল। ছুটির দিনে জায়গাটি বেশ নির্জন হয়ে যায়, যে কারণে এলাকায় বখাটের উৎপাত দেখা যায়, যেখানে একা গেলে ঝামেলায় পরার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে।
কিভাবে যাবেন মুড়াপাড়া রাজবাড়ি
ঢাকার সায়েদাবাদ, গুলিস্তান এবং যাত্রাবাড়ী থেকে বেশ কয়েকটি নারায়ণগঞ্জগামী বাস রয়েছে। এছাড়া নরসিংদী- ভৈরবগামী যেকোনো বাসে করে রুপসী বাসস্ট্যান্ড, জনপ্রতি ভাড়া পরবে ৩০/৪০ টাকা। বাসস্ট্যান্ড থেকে সিএনজি বা অটোতে করে যাওয়া যাবে রাজবাড়িতে, ভাড়া পরবে ২০/৩০ টাকা।
Add comment