Porjotonlipi

মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ – নারায়ণগঞ্জের তীর্থস্থান

আজ আমরা জানবো ব্রহ্মপুত্র নদের পাড়ে এক মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ সম্পর্কে। ঢাকা থেকে ১৬ কিলোমিটার পূর্বদক্ষিনে বাংলাদেশের ষষ্ঠ বৃহত্তম জেলা নারায়ণগঞ্জের অবস্থান। শীতলক্ষ্যা এবং ব্রহ্মপুত্র নদের উপস্থিতি রয়েছে এই জেলায়।

লাখো পুণ্যার্থীর মিলনমেলা মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ 

বন্দর উপজেলায় অবস্থিত এই ব্রহ্মপুত্র নদ, যার পাড়ে অবস্থিত এই তীর্থস্থান। মূলত ব্রহ্মপুত্রের পবিত্র জলে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে নিতে লাখো ধর্মানুসারী ভিড় করেন তিথি মোতাবেক সময়ে, যে কারণে একে বলা হয় লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান উৎসব। কথিত আছে, চৈত্রের শুক্লাষ্টমীতে জগতের সকল পুণ্য এই ব্রহ্মপুত্রে এসে সম্মিলত হয়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এই পবিত্র জল ছোঁয়া মাত্রই অতীতের সকল পাপ মোচন হয়ে যায়। স্নানে ব্যস্ত সকল ধর্মানুরাগীদের কণ্ঠে একই মন্ত্র, “হে মহাভাগব্রহ্মপুত্র, হে লৌহিত্য, আমার পাপ হরণ কর।” 

যেরকম দেখতে লাঙ্গলবন্দ তীর্থঘাট

ত্রেতাযুগ থেকেই এই লাঙ্গলবন্দ হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে এই নমস্যরূপ, যেখানে বর্তমানে ১৬ টি ঘাট রয়েছ। পাশাপাশি, সেখানে আছে ১০ টি মন্দির আর কয়েকটি আশ্রম। ২০১৩ – ১৪ সালে বাংলাদেশ পর্যটনবোর্ড কর্তৃক ১৬ টি ঘাটে বরাদ্দকৃত প্রায় দেড় কোটি টাকা দিয়ে সুন্দর করে টাইলস বসানো হয়েছে। আরও করা হয়েছে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ, তৈরি করা হয়েছে চেঞ্জিংরুম। 

অষ্টমীস্নানের সকল কার্যক্রম যাতে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়, তার জন্য তৈরি করা হয়েছে ৩৭ সদস্য বিশিষ্ট একটি ব্যবস্থাপনা কমিটি যাদের আওতায় লাঙ্গলবন্দ স্নানঘাটের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বসানো হয়েছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা, রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। স্নানঘাটে যেন কোন প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সরবদা প্রস্তুত আছে স্বেচ্ছাসেবী ডুবুরী এবং ফায়ার সার্ভিস ইউনিট। সাথে আছে তীর্থযাত্রীদের জরুরী সেবা প্রদানে প্রয়োজনীয় মেডিকেল টিম ও অ্যাম্বুলেন্স। তবে চুরি, ছিনতাই থেকে বাঁচতে সব সময় সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবেন।

বিশুদ্ধ পানির জন্য আছে সেখানে রয়েছে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ঘাট এবং আশেপাশের স্থানসমূহ পরিষ্কার, সংস্কার, মেরামত, কচুরীপানা অপসারণ এবং মাছ ধরার স্থাপনা সরাতে এবং পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের জন্য নিযুক্ত রয়েছে কর্মী। 

লাঙ্গলবন্দের অবস্থান

মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ উপজেলার গা ঘেঁষে প্রবাহিত ব্রহ্মপুত্র নদের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। অন্যান্য তীর্থের মত এই তীর্থেরও জন্মস্থান ও তারিখ নির্ণয় করা অসম্ভব। একসময়ে লাঙ্গলবন্দের উপর দিয়ে প্রবাহিত আদি ব্রহ্মপুত্র ছিল খরস্রোতা, যা কালের পরিক্রমায় ক্ষীণকায় আকার ধারণ করেছে। কিন্ত তাতে ব্রহ্মপুত্রের সৌন্দর্য এতটুকু ম্লান হয়নি। প্রতিবছর এই লাঙলবন্ধে লাখো তীর্থযাত্রী অষ্টমী তিথীতে অবস্থান করেন, যাদের সকলেরই এক উদ্দেশ্য, পবিত্র পানিতে স্নান নিয়ে নিজের অতীত, বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ জীবনকে পাপমুক্ত করা। 

 

ফাতেমা নজরুল স্নেহা

Add comment