Porjotonlipi

ময়নামতী ওয়ার সিমেট্রি

বাংলাদেশের কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত ময়নামতী ওয়ার সিমেট্রি একটি কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি। “যুদ্ধ” এক আতংকের নাম।  প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত বিশ্বে সংগঠিত হয়েছে অগণিত যুদ্ধ। নানান সমাধি, ধ্বংসস্তুপ এর চিহ্ন বহন করে যাচ্ছে যুগ যুগ ধরে।

কমনওয়েলথস ময়নামতী ওয়ার সিমেট্রি বা ইংরেজ কবরস্থান 

১৯৪১-১৯৪৫ সালে চলাকালীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যে কমনওয়েলথ সৈনিকেরা নিহত হন তাদের স্মৃতিতে গড়ে ওঠে ৯টি সমাধিক্ষেত্র কিংবা ওয়ার সিমেট্রি। এর মধ্যে দুটি রয়েছে বাংলাদেশে।একটি চট্টগ্রামে এবং অন্যটি কুমিল্লার ময়নামতিতে।

সুনসান নীরবতা চারদিকে, সবুজ ঘাসের ওপর পাথরে খোদাই করা নামফলক যেন এক একজন শহীদের যুদ্ধের ইতিহাস বর্ণনা করছে।

ময়নামতী ওয়ার সিমেট্রি নিয়ে কিছু কথা

কুমিল্লা জেলায় অবস্থিত কমনওয়েলথ যুদ্ধ সমাধি বা স্থানীয়দের ভাষায় “ইংরেজ কবরস্থান “। ১৯৪১-৪৫ সালে বার্মায় (বর্তমান মায়ানমার) সংঘঠিত যুদ্ধে যে ৪৫ হাজার সৈনিক নিহত হন। তাদের স্মৃতি রক্ষার্থে মিয়ানমার (তৎকালীন বার্মা), আসাম এবং বাংলাদেশে মোট নয়টি রণ সামাধিক্ষেত্র তৈরি করা হয়। বাংলাদেশ দুটি কমনওয়েলথ রণ সমাধিক্ষেত্র আছে।দেশ-বিদেশের বহু দর্শনার্থী যুদ্ধে নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসব রণ সমাধিক্ষেত্রে আসেন।

জানা যায়, ময়নামতি রণ সমাধিক্ষেত্র মূলত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে (১৯৩৯-১৯৪৫) নিহত ভারতীয় (তৎকালীন) ও ব্রিটিশ সৈন্যদের কবরস্থান। এটি ১৯৪৩-১৯৪৪ সালে তৈরি করা হয়েছে। কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের খুব কাছেই এই সমাধিক্ষেত্রের অবস্থান। সমাধিক্ষেত্রটি কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশন (সিডব্লিউজিসি) ওই সময়ে প্রতিষ্ঠা করেছিল। তাই তারাই এটি পরিচালনা করেন। প্রতি বছর নভেম্বর মাসে সব ধর্মের ধর্মগুরুদের সমন্বয়ে এখানে একটি বার্ষিক প্রার্থনাসভা অনুষ্ঠিত হয়।

তৎকালীন ময়নামতি একটি ছোট গ্রাম হলেও বর্তমানে সেনাবাহিনীর একটি বড় ঘাঁটিতে পরিণত হয়। এখানে বড় একটি হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। এছাড়াও কুমিল্লা ছিল যুদ্ধ-সরঞ্জাম সরবরাহের ক্ষেত্র, বিমানঘাঁটি আর ১৯৪৪ সালে ইম্ফলে স্থানান্তরিত হওয়ার আগে চতুর্দশ সেনাবাহিনী সদর দফতর।

এ সমাধিক্ষেত্রে মোট ৭৩৬টি কবর আছে। এরমধ্যে অধিকাংশই সেই সময়কার হাসপাতালে মৃত সৈনিক। তাছাড়া যুদ্ধের পর বিভিন্ন স্থান থেকে কিছু মরদেহ স্থানান্তর করে এখানে সমাহিত করা হয়। বাহিনী অনুযায়ী এখানে মোট ৩ জন নাবিক, ৫৬৭ জন সৈনিক এবং ১৬৬ জন বৈমানিক সমাহিত আছেন। সর্বমোট ৭২৩ জন নিহতের পরিচয় জানা সম্ভব হয়েছিল। এরমধ্যে যথাক্রমে দেশ অনুযায়ী কবর-

যুক্তরাজ্য – ৩৫৭, কানাডা – ১২, অস্ট্রেলিয়া – ১২, নিউজিল্যান্ড – ৪, অবিভক্ত ভারত – ১৭৮, পূর্বআফ্রিকা – ৫৬, পশ্চিম আফ্রিকা – ৮৬, দক্ষিণআফ্রিকা – ১, বার্মা – ১, বেলজিয়াম – ১, পোল্যান্ড – ১, জাপান – ২৪, রোডেশিয়া – ৩।

সমাধিক্ষেত্রটির প্রবেশমুখে রয়েছে একটি তোরণ ঘর। যার ভেতরের দেয়ালে সমাধিক্ষেত্রের ইতিহাস ও বিবরণ ইংরেজি-বাংলায় লিপিবদ্ধ রয়েছে। তোরণ ঘর থেকে সরাসরি সামনে প্রশস্ত পথ। যার দুই পাশে সারি সারি এপিটাফ আর তাতে নিহতের নাম, পরিচয়, মৃত্যু তারিখ লেখা রয়েছে। এপিটাফে নিহত সৈন্যদের ধর্ম অনুযায়ী ধর্মীয় প্রতীক লক্ষ্য করা যায়। যেমন খ্রিষ্টানদের এপিটাফে ক্রুশ আর মুসলমানদের এপিটাফে আরবি লেখা। আর এই প্রশস্ত পথ ধরে সোজা সামনে রয়েছে সিঁড়ি দেওয়া বেদি। বেদির উপরে রয়েছে খ্রিষ্টধর্মীয় প্রতীক ক্রুশ। বেদির দুই পাশে রয়েছে আরও দুটি তোরণ ঘর। এ দুটি তোরণ ঘর দিয়ে সমাধিক্ষেত্রের পেছনের অংশে যাওয়া যায়। সেখানে রয়েছে আরও বহু এপিটাফ। দুই কবরের মাঝে রয়েছে একটি করে ফুলগাছ। তাছাড়া পুরো সমাধিক্ষেত্র জুড়ে রয়েছে অনেক গাছ।

সমাধিক্ষেত্রের সামনের অংশের প্রশস্ত পথের পাশেই ব্যতিক্রমী একটি কবর রয়েছে। যেখানে একসাথে ২৩টি এপিটাফ দিয়ে এক স্থানকে ঘিরে রাখা হয়েছে। স্থানটি ছিল মূলত ২৩ জন বিমান সৈনিকের একটি গণকবর। যেখানে লেখা রয়েছে, ‘These plaques bear the names of twenty three Airmen whose remains lie here in on grave.’

যেভাবে যাবেন

দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে কুমিল্লা সেনানিবাস রোডে চলে আসবেন। এখান থেকে যেকোনো ব্যাটারি চালিত রিকশা কিংবা সিএনজি নিয়ে চলে যাবেন ময়নামতী ওয়ার সিমেট্রি কিংবা ইংরেজ কবরস্থানে।

যেখানে থাকবেন

কুমিল্লা শহরের বিভিন্ন ধরনের আবাসিক এবং অনাবাসিক হোটেল রয়েছে।চাইলে গিয়েই বুকিং করা যাবে।তবে আগে থেকে যোগাযোগ করে গেলে সুবিধা হয়।

 

  • পর্যটকের সুবিধার জন্যে নিম্নে কিছু হোটেলের ঠিকানা দেওয়া হলো। 

১। হোটেল রেড রুফ ইন- মোঃ মনিরুল হক সাক্কু, রেইস কোর্স, নিসা টাওয়ার, (সেবা হসপিটালের বিপরীত প্বার্শে)    ০১৭১৬১৬০০০৩    (বেসরকারী) 

২। ঢাকা হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট- মোঃ জহিরুল হক, ঢাকা হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট বিশ্বরোড, কুমিল্লা  (বেসরকারী) 

৩। কানন লেইক রিসোর্ট লিমিটেড- রেজাউল করিম,  কানন লেইক রিসোর্ট লিমিটেড, সুয়াগাজী (বেসরকারী) 

৪। হাইওয়ে ইন রেস্তোরা- হাইওয়ে ইন রেস্তোরা (আবাসিক) পদুয়ার বাজার, কুমিল্লা (বেসরকারী) 

৫।হোটেল বিলাস- নোয়াব আলী চৌঃ, পদুয়ার বাজার, বিশ্বরোড, কুমিল্লা (বেসরকারী) 

 

বিঃদ্রঃ পরিবেশ সংরক্ষণ করি, নিজেও সুস্থ থাকি অপরকেও সুস্থ থাকতে সহায়তা করি।

 

শাহীন সুলতানা

Add comment