ভ্রমণ করতে কে না ভালোবাসে? সারাদেশ ঘুরে বেড়ালেন, ঘুরে বেড়ালেন বিদেশও। তাহলে একটু সময়করে নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গনে আবারও হেঁটে আসতে বাঁধা কিসের?
ঘুরে আসুন নিজের ক্যাম্পাস থেকে
প্রিয় বন্ধুর ডাক, ছায়ার মায়ায় সেই যে কথা কাটাকাটি, আবার চায়ের আড্ডায় কত স্বপ্নবোনা। বন্ধুকে নিয়ে এদিক সেদিক ট্যুর প্ল্যান করার ফাকে চলুন ফিরে যাওয়া যাক নিজের ক্যাম্পাসে।
বর্তমানে বাঁচুন
“বর্তমানে বাঁচুন” কথাটা সবার জন্য অনুপ্রেরণা। বিশেষ করে যারা নতুন নতুন ক্যাম্পাসে যাবে, ভিন্ন পরিবেশে খাপ খাওয়াবে, মিশ্র এলাকার সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবে।
“যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ” কথাটা কখনো ভেবে দেখেছেন? আজকের দিনটা যতই খারাপ লাগুক, আগামীকালকে আমরা এই দিনটার জন্যই আফসোস করি। তাহলে কেন আমরা আজকের দিনটাই উপভোগ করি না, গতকালকের জন্য আফসোস না করে?
প্রতিটা মুহূর্ত মূল্যবান
এই মুহুর্তে আপনি যা অপছন্দ করেন বলে আক্ষেপ করছেন সেটাই একসময় সবচেয়ে ভালো মনে করে নিজে চেয়ে নিয়েছেন। এই মূল্যবান মুহূর্তগুলোয় যার সাথে আপনার পথচলা নির্ধারিত থাকবে ঘুরেফিরে এদিকসেদিক করেও আপনি তার সাথে এক টং এ বসে জীবনের গল্প শখ স্বপ্ন নিয়ে গভীর আলোচনা করবেন। হয়ত দেরিতে তবুও বুঝতে পারবেন আপনারা আলাদা টং এ আলাদা ভাবে আড্ডা দিলেও জীবনের মোর আপনাদের একই টং এর আড্ডায় নিয়ে এসেছে। কথাটা স্বল্প সময়ের মনে হলেও রাস্তাটা কঠিন, বিশ্বাস তৈরি হতেও সময় আর ধৈর্য্য লাগে। এজন্যই যাদের জন্য এক টং থেকে উঠে অন্য টং এ বসতে বাধ্য হওয়া লাগে, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আসে। কারন তাদের জন্যই আজকের এই টং এর মানুষগুলোকে চিনতে পারা আর ক্যাম্পাস জীবনের শেষ দিনগুলো সত্যিকার অর্থেই মূল্যবান মুহূর্তে পরিনত হয়েছে।
কথাগুলো আমার ক্যাম্পাস লাইফ নিয়ে উপলব্ধি কেবল। যে মুহুর্তে আমি বশেমুরবিপ্রবি তে চান্স পেয়ে উৎফুল্ল হয়ে ন্যাশনাল ভার্সিটি থেকে চলে আসি আমার মনে হয়েছিল এটাই আমার জন্য উত্তম। কিন্তু পরবর্তীতে আমি এই ক্যাম্পাস নিয়েই শত অভিযোগ কমতি ভেবেছি। কিন্তু একবারও মনে করিনি এই ক্যাম্পাসের আসার সুযোগটাই একসময় আমার জন্য সবচেয়ে ভাল রাস্তা ছিল আর আমি সেই রাস্তাতেই আছি।
ক্যাম্পাসের দিনগুলো সব শেষের দিকে। ২০১৬-২০২২ এর দীর্ঘ পথচলার পর একে একে সবাই বিদায় নিচ্ছে। থিসিস সাবমিশনের জন্য গুটিকয়েক জন বাদে আর কেউ নাই। এই যে বিদায়বেলা, এতবছরের কমতি অভিযোগ ঘেরা ক্যাম্পাসের প্রতি হুটহাট মায়া কাজ করে, যেদিকেই তাকাই পুরান সব স্মৃতি, নতুন সব স্থাপনা, সম্ভাব্য সব আনন্দ ঘিরে এক অদ্ভুত জাল তৈরি হয়, তখন মনে হয় ভালই ত ছিল দিনগুলা। ওই যে, যায় দিন ভালো আসে দিন খারাপ। অথচ ক্যাম্পাসের অফুরন্ত দিনগুলোতে অভিযোগ কমতি আর আক্ষেপের শেষ ছিল না। অনেকসময় নিজেদের আনন্দ উৎসাহের মাঝে প্রধান বাধা ভাবতামই এই ক্যাম্পাসের সীমিত সুযোগ সুবিধা। এতকিছুর মধ্যেও সেই দিনগুলোই প্রিয়। তাহলে যদি সকল বাধা আক্ষেপ কমতি ভুলে তখন নিজেদের বর্তমান যদি উপভোগ করতাম তাহলে হয়ত এখন অতীত নিয়ে আরও ভাল স্মৃতি থাকতো, আর একবার যে বর্তমান উপভোগ করতে পারে তারজন্য অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই উপভোগ্য হয়ে যায়।
ভালবাসা ছড়িয়ে দিন
ভালবাসা ছড়িয়ে পথচলায় ভালবাসা অর্জনের তালিকাটাই দীর্ঘ। একটুকরো পরিবার গড়ে উঠবে আপনার আশেপাশে, ঠিক যেন শক্তি বলয়। একমাত্র ভালবাসা ছড়িয়েই মানুষকে কাছে আনা যায়, ধরে রাখা যায়, আর যারা দূরের তাদের নিজ থেকে সরে যাওয়ার সুযোগ দেয়া যায়। আপনি না থাকলেও আপনার এই পরিবার আপনাকে রেখে দিবে। এই ক্যাম্পাসের এত মানুষের সাথে পথচলায় সার্কেল ভাঙে গড়ে, নতুন করে যুক্ত হয় আবার চলে যায়। থেকে যায় শুধু তারাই যাদের একসাথে থাকাটাই নিয়তিতে বাঁধা থাকে। এই যে দিনশেষে যাদের একসাথে পথচলা, খুব অবাক লাগে যখন দেখি এরাই একসময় ভিন্ন এক টং এ বসত, অথচ আজ শেষ সময়ে একই টংএ কারন তারা ভিন্ন মানসিকতার, ভিন্ন জীবনের অথচ একে অপরের প্রতি পরিপূরক, শ্রদ্ধাশীল, দায়িত্ববোধ সম্পন্ন। বর্তমান আড্ডায় কখনো মনে হয় না; কিন্তু তারাই যখন ধীরে ধীরে একে একে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে, না থেকেও তারা আড্ডায় থেকে যায়। এমনও একজন আছে যে ক্যাম্পাস ছেড়ে তিনবছর আগে চলে গেলেও প্রত্যেক আড্ডায় কেউ না কেউ তাকে নিয়ে আসবে; কথায়, গল্পে, স্মৃতিতে, ভালবাসায়, বন্ধুত্বে আর তার উপস্থিতির কামনায়, কারন সে ভালবাসা ছড়িয়ে দিয়েছিল।
সব কিছুর শেষ মুহূর্তে হলের রুমের একচ্ছত্র আধিপত্য ছেড়ে যখন বের হয়ে এসেছেন মায়ায় ঘেরা আপনার প্রথম সংসার রেখে এসেছেন সেই রুমে। নির্ভরযোগ্য বন্ধুর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা বিরবির করে গল্প স্বপ্ন বাস্তব অবাস্তব পরিকল্পনা আবার হুট করে রুম কাপিয়ে হাসি সব কিছুই কেবল একান্তই আপনার ছিল। গভীর রাত পর্যন্ত হলের ছাদে কাটানো নির্ঘুম সময়গুলো সাক্ষী হয়েছিল সম্ভাব্য ভবিষ্যতের। আজকে আমরা সেই ভবিষ্যতে দাঁড়িয়ে। ফেরার বেলায় রুমের সেই আদুরে জুনিয়র কে শেষ আলিঙ্গনে আপন করে নিয়েছেন, কারন সে শেষ মুহূর্তে জীবন চলার মন্ত্র বলেছিল, “ভালবাসা ছড়িয়ে দিন। আর ভালবাসা ছড়িয়ে দিয়েই আকড়ে রাখা যায় প্রিয় যা ছিল, আছে আর থাকবে।
লুকানো সব আবেগ ঘেরা ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার আগের দিন গুলোতে প্রতিটা মুহূর্ত মনে করেছেন দুহাতে আকড়ে রেখে বসে থাকতে পারলে ভালোই হত। সেই লেকপারের আড্ডা, নির্ভরশীল বন্ধুর হাত, টং এ বসে খুনসুটি, গল্পে সাজানো জুটি, কারও অনুপস্থিতি আবার কারও উপস্থিতি।
ক্যাম্পাসের হাতছানি
আবেগ ঘেরা আপনার ক্যাম্পাস আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে আপনার স্মৃতিতে। প্রতিটা মূল্যবান মুহূর্ত যা নিয়ে এসেছেন সেগুলো সজীবতা চায় আবার। একবার ঘুরে আসুন আপনার পরিচিত মুখগুলো সাথে নিয়ে পুরানো রাস্তায় নতুন কিছু মুহূর্ত তৈরি করতে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শুধুই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দেয় না, শিক্ষা দেয় শ্রদ্ধা যত্ন দায়িত্ব এবং ভালবাসার। যে যেখানেই থাকি, যে প্রতিষ্ঠানেই থাকি আশেপাশের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধা যত্ন দায়িত্ব ও ভালবাসা অক্ষুণ্ণ রাখি, দেখবেন আপনার চারপাশে এক শক্তি বলয় তৈরি হয়েছে, যেমনটা তৈরি হয়েছিল আপনার ক্যাম্পাসে। রক্ষণাবেক্ষণ করুন প্রতিষ্ঠানের সম্পদের, এই প্রতিষ্ঠানই আপনার বর্তমান আশ্রয় আর শক্তি বলয়ের উৎস।
কন্টেন্ট রাইটার- সুমাইয়া নাসরিন তামান্না
Add comment