Porjotonlipi

বিক্রমপুর এর বিশেষ খাবার – খুদের ভাত বা বউয়া ভাত

বিক্রমপুর এর বিশেষ খাবার – খুদের ভাত বা বউয়া ভাত এর কথা শুনেছেন? বিক্রমপুরের মিষ্টির সুনাম, মাওয়াঘাটের পদ্মার ইলিশের গপ্পো কমবেশি আমরা সকলেই জানি এবং শুনেছি। বিক্রমপুরের মানুষ আথিতেয়তায় বেশ পটু। আর বিক্রমপুরের সংস্কৃতির বিভিন্ন খাবার এবং পিঠাপুলির স্বাদ অপূর্ব। আজকে আমরা জানব বিক্রমপুরের একটি বহুল পরিচিত এবং বিলুপ্তপ্রায় খাবার – খুদের ভাত এবং ভর্তা সম্পর্কে। অনেকে একে বউয়া ভাত ও বলে থাকেন। 

বিক্রমপুর এর খুদের ভাত এর রন্ধনশৈলী 

আগেই বলেছি এই খাবারটি এখন বিলুপ্তপ্রায়। কারণ, এই খাবারের মূল উপকরন হচ্ছে চালের খুদ। আগের দিনে গ্রাম বাংলায় চাল ভাঙা এবং ঝাড়া সম্পূর্ণ হাতে করা হত। শুকনো ধান থেকে চাল আলাদা করার সময়তে চালের বেশ ছোট ছোট টুকরো জমা হত, যেগুলোকে খুদ বলা হয়ে থাকে। বর্তমানে চাল ঝাড়ার মেশিনের কারণে এই খুদ পাওয়া যায় না, যে কারণে খুদের ভাত এখন রান্না হয় না বললেই চলে। তবে অনেকে শুধু ভাত অথবা পোলাওয়ের চাল দিয়ে খুদের ভাত রান্না করে থাকেন। উল্লেখ্য, খুদ দিয়ে রান্না করা খুদের ভাত এবং শুধু চাল দিয়ে রান্না করা খুদের ভাতের মধ্যে স্বাদের ক্ষেত্রে বিস্তর পার্থক্য রয়েছে। খুদের ভাতের সত্যিকার স্বাদ পেতে হলে খুদ যোগার করে রান্না করাই উত্তম। 

খুদের ভাত মূলত একরকমের ভাত, যেটি শুকনা মরিচ বাগাড় দিয়ে, ঝাল করে রান্না করা হয়। এজন্য অনেকে এটাকে ঝালভাত ও বলে থাকে। সাথে থাকে অল্প পরিমাণের আদা কুচি। যদি কেও ঝাল খেতে না পারেন, তবে মরিচ কম পরিমাণে দেয়া যেতে পারে, তবে ঝাল ছাড়া এই খাবার খেয়ে মজা পাবেন না। 

এবার আসি ভর্তার কথায়। এই খাবার শুধু এবং শুধু ভর্তা দিয়েই খাওয়া হয়, অনেকে ডিম ভাজি দিয়েও খেয়ে থাকে। ভর্তা এই ভাতে যে স্বাদ যোগ করে থাকে, ডিম ভাজি সেটা সম্পূর্ণ করে না। সুতরাং, ভর্তা দিয়ে খেলেই এটা বেশি উপভোগ করা যায়। গ্রামের মানুষজন এই খুদের ভাত খাওয়ার জন্য ২০ থেকে ২৫ পদের শুধু ভর্তাই তৈরি করেন। ভর্তার তালিকায় থাকে আলু, ডাল, ডিম, চিংড়ি, বেগুন, করলা, শাক, ইলিশ মাছের কাঁটা, বরবটি, কালোজিরা, বিভিন্ন পদের শুটকি, ইত্যাদি আরও অনেক। ঢাকার মানুষজন ৬ থেকে ১০ পদের ভর্তা দিয়েই ভোজন সম্পন্ন করে থাকেন। 

রন্ধনপ্রণালী

ইন্টারনেট এর অন্তরজালে এই খাবারের অনেক রেসিপি পাওয়া যায়, যেগুলোর বেশিরভাগ বিক্রমপুর কায়দা অনুসরন করে না। আসল বিক্রমপুরের খুদের ভাত রান্না করা বেশ সহজ। পরিমাণমত চাল এবং খুদ শুরুতে ধুয়ে ঝরা দিতে হবে। পাশাপাশি, গরম করাইতে তেল গরম দিয়ে সেই তেলে পেয়াজ কুচি, শুকনা মরিচ কুচি দিয়ে কিছুক্ষন ভাজতে হবে। তারপর ঝরা দেয়া চাল দিতে হবে এবং কিছুক্ষন ভেজে রান্না করতে হবে এবং কিছু সময় পরে পরিমাণ মত পানি দিতে হবে। পানি শুকানো শুরু হলে আদা এবং রসুন কুচি সামান্য পরিমাণে দিতে হবে। পানি শুকিয়ে গেলে কিছুক্ষন দম দিতে হবে। পরিবেশনের আগে কাঁচামরিচ এবং ধনেপাতা দিয়ে পরিবেশন করতে হয়। ভর্তা আপনি চাইলে ঝালের বেশকম করতে পারেন। 

এই খুদের ভাত যেকোনো সময়ে রান্না করে ফেলা যায়। ভর্তার উপস্থিতি থাকার কারণে খাবারটি বেশ উপাদেয়। রমজান মাসে অনেকেই এই খাবারটি রান্না করে থাকেন। শহরের মানুষ ঝামেলার কারণে এটি খুব বেশি রান্না না করলেও গ্রামের মানুষ এখনও এই খুদের ভাত রান্না করে অতিথি আপ্যায়ন করে থাকেন। শহরের খুদের ভাতের চেয়ে গ্রামের খুদের ভাতে এক অন্যরকম স্বাদ রয়েছে। বিক্রমপুরের এই খাবারের সুনাম ছড়িয়ে পড়তে পড়তে অন্যান্য জেলার মানুষজন এখন এই খাবারটি নিজেদের মত করে রান্না করে থাকেন।  

 

ফাতেমা নজরুল স্নেহা

Add comment