Porjotonlipi

বান্দরবান জেলার ঝর্ণা ও রোমাঞ্চকর অনুভূতি

বান্দরবান জেলার ঝর্ণা নিয়ে পর্যটকদের রয়েছে এক অন্যরকম অনুভূতি। নীলগিরি, নীলাচলের পাশাপাশি এই বান্দরবানে রয়েছে কিছু দুর্গম ঝর্ণা, যেগুলো এখনও অনেকের কাছে অজনা। আজকে আমরা অল্পবিস্তর সেই ঝর্ণা গুলো সম্পর্কেই জানব। 

বান্দরবান জেলার দুর্গম কিছু ঝর্ণা 

বরইতলী ট্রেইল

বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ধুমধুম ইউনিয়নের বরইতলী-মংজয় পাড়াগ্রাম থেকে ৫ কিলোমিটার পূর্বে বেশ কয়েকটি ঝর্ণার আবির্ভাব হয়েছে, যেগুলোকে বরইতলী ট্রেইল বলে একনামে পরিচিত, স্থানীয়ভাবে একে বরইতলী ফাত্রাঝিরি ঝর্ণা  বলা হয়। এই বরইতলীর পূর্বপ্রান্তে রয়েছে বেশ কয়েকটি পাহাড়, যেগুলোর নীচ থেকে সৃষ্টি হয়েছে বেশ কয়েকটি ঝর্ণা যার মধ্যে বরইতলী ট্রেইল অন্যতম। এই ট্রেইলে রয়েছে ৩ টি পৃথক ঝর্ণা, যেগুলোর দুইটি ছোট, এবং পরেরটি বড়, যেটিই মূলত বড় আকর্ষণ। 

তুইনুম ঝর্ণা 

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলার তুইনুম ঝিরিতে এই তুইনুম ঝর্ণার আবাস। ম্র উপজাতিয় ভাষায় এই ঝর্ণার নাম “তুইনুম অ”। ম্র ভাষায় ‘তুই’ অর্থ পানি, ‘নুম’ অর্থ কালো, ‘অ’ অর্থ ঝিরি, অর্থাৎ, তুইনুম অ হচ্ছে কালো পানির ঝিরি। পোয়ামুহুরী বাজার থেকে মাতামুহুরী ধরে আরও কিছু পথ আগালে হাতের বাম পাশে পরবে তুইনুম ঝিরি। ঝিরি থেকে ১৫/২০ মিনিট হাটার পথ পাড়ি দিলেই মিলবে তুইনুম ঝর্ণা। 

ওয়াং-পা ঝর্ণা  

বান্দরবানের বেশ গহিনে এই ওয়াং-পা জলপ্রপাতের অবস্থান, যেখানে রয়েছে মনমাতানো সৌন্দর্য। এই ঝর্ণাটি এখনও লোকচক্ষুর আড়ালে রয়ে গেছে, কারণ অগণিত পর্যটক শুধু দামতুয়া ঝর্ণা দেখে ফিরে আসেন, কিন্তু এই দামতুয়া ঝর্ণার থেকে খানিকটা দুরেই এই ঝর্ণার অবস্থান। দামতুয়া থেকে ফিরে আসয়ার পথে এই ওয়াং-পা তে গিয়ে একটু ঢুঁ মেরে আসা যায়। 

লাংলোক ঝর্ণা 

বান্দরবানের গহিনে অবস্থিত আরেকটি ঝর্ণা, লাংলোক ঝর্ণা যেটি বেশ কিছুদিন আগে মানুষের নজরে এসেছে। দুর্গম পথ, গভীর জঙ্গল এবং লোকালয় থেকে বেশ দূরে এই ঝর্ণার অবস্থানের জন্য মানুষের নিজরে আসতে বেশ সময় লেগেছে। বান্দরবানে বর্ষা মৌসুমের সিজনাল যেসব ঝর্ণা রয়েছে, তার মধ্যে এই লাংলোক ঝর্ণাই সর্বোচ্চ, যেটির উচ্চতা ৩৮৮.৯ ফুট। মারমা ভাষায় একে ‘লাংলোক’ বলা হয়, যার অর্থ বাদুড় কারণ এই ঝর্ণার কাছে একটি বাদুড়গুহা আছে। এই ঝর্ণার পাশেই আরেকটি ঝর্ণা পাওয়া গিয়েছে যেটির নাম ‘বাদুড়ছড়া’ অথবা লাংলোক-২। 

শীলবান্ধা ঝর্ণা 

বান্দরবানের কচ্ছপতলী ইউনিয়নে এই শীলবান্ধা ঝর্ণা। কচ্ছপতলী থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা পাড়ি দিলে দেখা মিলবে শীলবান্ধা পাড়ার, সেখান থেকে মিনিট দশেকের রাস্তা পরেই ঝর্ণা। দূরত্ব কম, যাওয়া-আসার পথ সহজ হওয়ায় অনেক পর্যটক শীলবান্ধা এবং দেবতাকুম এর সৌন্দর্য দেখতে ছুটে যাচ্ছেন। 

প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী এবং সতর্কতা 

বান্দরবানের ঝরনাগুলো বছরের যেকোনো সময়তে গিয়েই ঘুরে আসা যায়। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে ঝর্ণা গুলো পরিপূর্ণ রূপ ধারণ করে। তবে বর্ষাকালে জায়গাগুলো বেশ বিপজ্জনক আকার ধারণ করে, সুতরাং খেয়াল রাখতে হবে যাতে কোন দুর্ঘটনার সম্মুখীন না হতে হয়। সাথে কিছু প্রয়োজনীয় ফার্স্ট এইড কিট রাখা আবশ্যক। 

বান্দরবান জেলার অনেক জায়গায় আর্মি বাহিনীর চেকপোস্ট দেখা মিলবে, তারা নিরাপত্তার জন্য কিছু কাগজপত্র পরীক্ষা করেন। সেক্ষেত্রে নিজের সাথে নিজের পরিচয় শনাক্তকরণ যেকোনো কাগজ যেমন পাসপোর্ট, জাতীয় পরিচয়পত্র কিংবা নিজের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড এর ফটোকপি সাথে রাখা বাধ্যতামূলক। 

বান্দরবানে যেহেতু অনেক পর্যটকের আনাগোনা, সেজন্য বিভিন্ন টুরিস্ট স্পট গুলোতে অনেক সিএনজি, অটোরিকশা চালক পাওয়া যাবে, ভ্রমনের পূর্বে ভালভাবে দরাদরি করে নিতে হবে, সুরক্ষার জন্য সাথে ট্যুর গাইড রাখা যেতে পারে। 

 

ফাতেমা নজরুল স্নেহা

Add comment