কোন বাঙালী ঘরোয়া রান্না খেতে ভালোবাসে না? আর সেই ঘরোয়া রান্না যদি বাঙালী রান্না হয় তাহলে তো প্রশ্নই ওঠেনা। ঘরোয়া রান্না পছন্দ করেনা এরকম মানুষ খুঁজে পাওয়া বিরল। কিন্তু এই ঘরোয়া এই খাবার কম বা বেশি খাওয়ার ইচ্ছা নির্ভর করে এর স্বাদের ওপর। তেমনি সেই খাবারের স্বাদ নির্ভর করে রাঁধুনির রন্ধনশিল্পের ওপর।
মায়ের হাতে বাঙালী ঘরোয়া রান্না
আমাদের জীবনের শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি আমাদের মা। মায়ের হাতের নিখুঁত বাঙালী রান্নায় সবরকম মশলার পাশাপাশি অন্যরকম একটি মশলা রয়েছে। সেটি হলো ভালোবাসা। একজন মা তার সন্তান ও পরিবারের বাকি সদস্যের জন্য যেরকম আবেগ ও ভালোবাসা নিয়ে যে খাবার তৈরি করবে তা কোনো ৫ তারকা হোটেলের নামি-দামি শেফ শত বছর সাধনা করেও পারবে না।
আমার মায়ের রান্না
আমার মায়ের হাতের প্রত্যেকটি পদ অসাধারন সুস্বাদু হয়। কিন্তু আম্মুর রান্নার অগণিত বাঙালী পদের মধ্যেও আমার সবথেকে প্রিয় পদ হচ্ছে মুরগির মাংস দিয়ে বাঁধাকপির ভাঁজি। আমি মূলত মুরগির মাংস খেতে একটু বেশিই ভালোবাসি। কিন্তু এই ভেজালের যুগে শুধুমাত্র মুরগির মাংস খেলে অসুস্থ হবার ও আশঙ্কা রয়েছে। তাই আম্মু একদিন এই সবজি-মাংসের পদটি রান্না করে।
খাবার টেবিলে মুরগি ব্যাতিত অন্য কোনো বাঙালী রান্নার পদ দেখলে আর ৪-৫ টা দুস্টু ছেলের মতো আমিও রাগ করে খেতে চাই না। এই পদটি প্রথম যেদিন রান্না হলো সেদিনও ঠিক এমনটিই হলো। আমি খাবনা বলে নিজের ঘরে চলে গেলাম। আমাকে ছাড়াই খেয়ে নিতে বললাম। কিন্তু সে তো মা। সন্তান না খেলে তার তৃপ্তি নেই। আমাকে আদোর করে টেবিলে বসালো এবং সবজি দিয়ে ভাত খাইয়ে দিল। তখন আমার যানা নতুন সেই বাঙালী রান্নাটির অসাধারন স্বাদে মুগ্ধ হয়ে নিজের বোকামির জন্য নিজের উপরই বিরক্তবোধ করলাম। সব্জির পদটি সুস্বাদু হলেও মায়ের মমতা তাকে আর সুস্বাদু করে তুলেছে।
রন্ধনপ্রণালী
আম্মুর কাছে রান্নার রেসিপির ব্যাপারে জানতে চেলে বলে প্রথমত বাঁধাকপি কুঁচি করে কেটে কড়াইয়ে হালকা নাড়াচাড়া করে নিতে হয়। তারপর স্বাদমতো লবণ ও প্রয়োজনীয় সব মশলা দিতে হয়। তারপর মুরগির বুকের মাংসের ছোট ছোট টুকরা সবজিটির মধ্যে দিয়ে হালকা নাড়াচাড়া করে মিলিয়ে নিতে হয়। তারপর উপরে ঢাকনা দিয়ে ভালমতো সিদ্ধ হলেই প্রস্তুত বাঙালী রান্নার সুস্বাদু সেই সব্জির পদ।
পদটিতে বাঁধাকপির স্বাদের পাশাপাশি মাংসের হালকা ছোঁয়া জিভে অতুলনীয় স্বাদের পরিচয় দেয়। তার সাথে হালকা একটু ঝাল ঝাল স্বাদ খাবারের রুচিও বৃদ্ধি করে। আমি মূলত একজন খাদ্যরসিক মানুষ। তাই খাবারের দিক থেকে অনেক রেস্টুরেন্টের খাবারের স্বাদ আমার জানা। কিন্তু এতো যায়গায় এত খাবার খাওয়া সত্তেও মায়ের হাতের সেই বাঙালী রান্নার অতুলনীয় স্বাদ আর কোথাও খুঁজে পেলাম না। হয়তো মায়ের হাতে সত্যিই যাদু রয়েছে। আর হয়তো সেই যাদুর নামই ভালোবাসা বা আবেগ। মায়ের হাতের খাবার খেয়ে যেই তৃপ্তি ও আনন্দ রয়েছে তা হয়তো অন্য কোনো খাবারে আমি খুঁজে পাবোনা। আর সত্যি কথা কি, আমি খুঁজে পেতেও চাইনা।
কন্টেন্ট রাইটারঃ মাহবুব হায়দার সিদ্দিকী
Add comment