Porjotonlipi

বরথলির রাইক্ষং লেক

বরথলির রাইক্ষং লেক , রাইক্ষিয়াং কিংবা পুকুরপাড় এই তিনটি নামেই বেশ জনপ্রিয় বিলাইছড়ির ৩০একরের এক লেক। যা সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ২৫০০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। এটি প্রায় ২০০০ বছর পূর্বে সৃষ্ট এক আগ্নেয়গিরির লাভামূখ বলে শুনতে পাওয়া যায়। এটি রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলাধীন বড়থলি ইউনিয়নে অবস্থিত।

রাইক্ষং লেক এর রূপ এতটাই ভয়ানক সুন্দর যে সব কষ্ট দূর হয়ে যায় এটির কাছে গেলে।

অপরূপ বরথলির রাইক্ষং লেক

এই হ্রদের পানি এতটাই স্বচ্ছ যে সূর্যের আলো, আবহাওয়া ও মেঘের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রুপ ধারণ করে। তবে, মাঝে মাঝে এই হ্রদের পানি আকস্মিকভাবে লাল রং ধারণ করে। এই হ্রদের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ভ্রমণপিপাসু যে কাউকেই আকৃষ্ট করবে।লেকে পৌছাতে সারাদিন যে পরিশ্রম হবে, লেকের পানিতে সাঁতার কেটে আপনি সহজেই তা ভুলে যাবেন। বগা লেকের মত এই লেকে কোন জলজ উদ্ভিদ না থাকায় আপনি সহজে সাঁতার কাটতে পারবেন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে এই লেকের বিকল্প নেই। হতাশা, ব্যর্থতা সব একনিমিষে ভূলে যাবেন এই লেকে এসে।লেকের চারপাশে জুড়েই রয়েছে অনেক পাহাড়। প্রায় অর্ধেক লেকের পানি মানুষ ব্যবহার করে না কারন লেকের সেই অংশে মানুষ যাতায়াত করে না। এই কারনে লেকের ঐ অংশ আপনার কাছে চারপাশের তুলনায় অনেক সুন্দর মনে হবে। পুকুরপাড়া সেনাক্যাম্পে একটি হেলিপ্যাড রয়েছে। এখানকার উঁচু স্থান থেকে আপনি পাখির চোখে ছবির মত সুন্দর এই লেকটিকে দেখতে পাবেন।যতবারই পাঠক এই লেকে গিয়ে থাকুন না কেন, বারবার ফিরে যেতে ইচ্ছে করবে এমন স্বর্গীয় সৌন্দর্যে। সৃষ্টিকর্তা যেন সকল রূপ দিয়ে তৈরি করেছে এই লেক। একইসাথে আপনি বগালেক, প্রাঞ্জলপাড়া, পুকুরপাড়, বরথলি, থানচি সবারই সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন।

যেভাবে যাবেন রাইক্ষং লেক 

রাঙ্গামাটিতে অবস্থিত হলেও ভৌগলিক অবস্থানের কারনে রাইক্ষং লেকে আপনাকে বান্দরবানের মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। রাঙ্গামাটি জেলার শেষপ্রান্তে অবস্থিত রাইক্ষং লেকে রাঙ্গামাটি দিয়ে পৌছাতে হলে আপনাকে জলপথ পাড়ি দিতে হবে তাই বান্দরবান দিয়ে যাওয়াই হবে সবচেয়ে সহজ।

বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়ন থেকে রাইক্ষং লেক পায়ে হেঁটে যেতে ৩ দিন সময় লাগে। আর বিলাইছড়ি উপজেলা সদর থেকে ফারুয়া হয়ে রাইক্ষং লেক যেতে সময় লাগে ৪ দিন। সাধারণত ওই এলাকার অধিবাসীরা বড়থলী থেকে ১ দিনে পায়ে হেঁটে বান্দরবানের রুমায় এসে থেকে পরদিন ওখান থেকে সড়ক পথে চন্দ্রঘোনা নতুবা রাঙামাটি হয়ে বিলাইছড়ি এসে ১ দিন পর ফারুায় যায়। এভাবে তাদের আসতে ৩-৪ দিন সময় লাগে।

যেখানে থাকবেন

আর্মি বা বিডিআর- এর রেফারেন্স থাকলে তিন্দু ও রেমাক্রিতে বিডিআর-এর আতিথেয়তা পেতে কষ্ট হবেনা। আর বিডিআর-এর আতিথেয়তা পেলে থাকা-খাওয়ার সম্ভাব্য সর্বোত্তম ব্যবস্থা-টা সহজেই মিলে যাবে। বিডিআর ক্যাম্পে থাকার ব্যবস্থা না করতে পারলেও কোন অসুবিধা নেই। মারমাদের বাঁশ-কাঠের বাড়ীতে অনায়াসে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে আপনাদের। এ ছাড়া গাইডের সহযোগিতায় আদিবাসী গ্রামেও থাকা যেতে পারে।

 কেউ যদি তিন্দু থাকতে চান তবে সেখানেও কিছূ উপজাতী ঘর ভাড়া পাবেন থাকার জন্য।

 রেমাক্রীতে বাজারে থাকতে পারেন। রেমাক্রি চেয়ারম্যানের নাম আফ্রো মং, তাঁর একটা রেস্ট হাউজ আছে এখানে, একটা পাহাড়ের মাথায়। এক রুমের ভাড়া ৫০০ টাকা, ১০-১২ জন থাকা যায়। এটা ভাড়া নিতে পারেন। মারমাদের প্রায় প্রতিটি বাড়ীতেই খুব অল্প টাকায় এমন থাকা-খাওয়ার সুবিধে রয়েছে। তিনবেলা খাওয়ার খরচ পরবে জনপ্রতি ২০০ টাকা; এক্ষেত্রে থাকার জন্যে কোন খরচ দিতে হবে না।এছাড়াও থানচিতে রয়েছে থানচি কুটির নামে একটি রেস্ট হাউজ আপনি চাইলে তাদের সাথে যোগাযোগ করেও সেখানে থাকতে পারবেন।

থানচিতে থাকার জন্য একটি সরকারী রেষ্টহাউজ আছে। তাছাড়া এখানকার নৌকা ঘাটে কয়েকটি থাকার ঘর আছে। এসব ঘরে থাকার জন্য কোন পয়সা দিতে হয় না। ৩ বেলা খেলে থাকা ফ্রি। পর্যটন মৌসুমে এসব থাকার জায়গাগুলো বুক হয়ে গেলে আপনি স্থানীয় চেয়াম্যান এর সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। তিনি আপনাদের একটা না একটা ব্যবস্থা করে দেবেন।

 

 

শাহীন সুলতানা

Add comment