Porjotonlipi

বগুড়ার পোড়াদহ মেলা (জামাই মেলা)

” বগুড়ার পোড়াদহ মেলা ” ছোটবেলা থেকেই এই নামটির সাথে আমি বেশ পরিচিত। কারণ কোনো অনুষ্ঠান কিংবা খুশির খবর আসলেই বাসায় পোড়াদহের চমচম হাজির হয়ে যেত। কিন্তু পোড়াদহ নিয়ে যে আরো মজার মজার বিষয় আছে তা জানতে আমার বিশটি বছর লেগে গেল! তাই হাজির হয়ে গেলাম আপনাদের কাছেও সেই বিষয়টি উপস্থাপন করার জন্য।

৪০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী পোড়াদহ মেলা

আজ আপনাদের বলছি ৪০০ বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী বগুড়ার পোড়াদহের “জামাই মেলার” কথা যা লোকমুখে  “মাছ মেলা” কিংবা “পোড়াদহ মেলা” নামেও পরিচিত।

বগুড়ার পোড়াদহ মেলার দৃশ্যপটঃ

প্রায় ৪০০ বছর আগের ঘটনা (মতভেদে ২৫০ বছরও বলা হয়ে থাকে) মেলাস্থলে ছিল একটি বিশাল বটবৃক্ষ। সেখানে একদিন হঠাৎ এক সন্ন্যাসীর আবির্ভাব ঘটে। পরে সেখানে আশ্রম তৈরি করেন সন্ন্যাসীরা। একপর্যায়ে স্থানটি পূণ্যস্থানে পরিণত হয় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে। প্রতিবছর মাঘের শেষ বুধবার উক্ত স্থানে সন্ন্যাসী পূজার আয়োজন করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। সমাগত হন দূর-দূরান্তের ভক্তরা। কালের বিবর্তনে স্থানটিতে লোকজনের উপস্থিতি বাড়তেই থাকে। এভাবে গোড়াপত্তন ঘটে পোড়াদহ মেলার। ধর্মের গণ্ডি পেরিয়ে সব ধর্মের মানুষের উৎসবে পরিণত হয় এই মেলা। মেলাটি একদিনের, তবে উৎসবের আমেজ থাকে সপ্তাহব্যাপী। জামাই-বউ ও স্বজনরা মিলে এ উৎসব করেন। জামাই-বউ ও স্বজনদের নিমন্ত্রণ জানানো কিংবা নিমন্ত্রণ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন-পুরনো বিবেচনা করা হয় না। কারণ, মেলা বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। সেই ঐতিহ্য ধারণ করে সবাই মেতে ওঠেন বাঁধভাঙা উৎসব-উচ্ছ্বাসে ঈদ-পুজোর মাঝে এটি হয়ে ওঠে অন্য আরেক উৎসব।

মেলার মূল আকর্ষণঃ

রকমারি জাতের মাছ এ মেলার প্রধান আকর্ষণ। বুধবার ভোররাতের আগেই আড়তে আনা হয় বড় আকারের মাছগুলো। আর ভোররাত থেকেই আড়তে আড়তে ছুটে যান খুচরা ব্যবসায়ীরা। চাহিদা অনুযায়ী তারা মাছ কেনেন। পরে মাছের পসরা সাজিয়ে দোকানে দোকানে জেঁকে বসেন এসব ব্যবসায়ীরা। দিনভর দোকানগুলোয় চলে ধুমছে কেনাকাটা।

বাঘাইড়, রুই, কাতলা, মৃগেল, বোয়াল, সিলভার কার্প, বিগহেড, কালবাউস, পাঙ্গাসসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যায় এ মেলায়। মেলায় দুই থেকে আড়াই মণ ওজনের বাঘাইড়ও পাওয়া যায়। পাওয়া যায় পনেরো থেকে বিশ কেজি ওজনের রুই, কাতলা, পাঙ্গাস।

 

বাহারি মিষ্টান্ন সামগ্রী এ মেলার আরেক আকর্ষণ। মাছ আকৃতির মিষ্টি, রসগোল্লা, সন্দেশ, জিলাপি, নিমকি, তিলের নাড়ু, খই, বারোভাজা, শুকনা মিষ্টি পাওয়া যায়।মাছের নামেই নামকরণ করা হয় এসব মিষ্টির। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের মিষ্টি পোড়াদহ মেলার অন্যতম আকর্ষণ। বারোভাজাও এই মেলার খাবার গুলোর মধ্যে অত্যন্ত প্রিয়। বগুড়ার মানুষ কিন্তু ঝাল খাওয়ার জন্যও বিখ্যাত!

এছাড়াও মেলার বাহারি ডিজাইনের কসমেটিকস, খেলনা, গিফট সামগ্রী, চুড়ি, কানের দুল, মালা, কাজল, মেকআপ বক্স, ব্যাট, বল ভিডিও গেমসসহ নানা ধরনের প্রসাধনী ও খেলনা সামগ্রী পাওয়া যায়। এছাড়া এ মেলায় পাওয়া যায় কাঠের, স্টিল ও লোহার বিভিন্ন আসবাবপত্র।

যম, জামাই ভাগনা কেউ নয় আপনা!

প্রবাদে যতই এটি পরিচিত হোক না কেন পিতৃতান্ত্রিক এই বাঙালি সমাজে জামায়ের কদর বুড়ো বয়সেও ষোলআনা!

আগে জানতাম জামাই আপ্যায়নে নোয়াখালীর মানুষের তুলনা হয়না তবে পোড়াদহের এই মেলার আয়োজন যেন জামাই আদর কিংবা আপ্যায়নের আরেক নতুন সংযোজন!
পাঠক সময় বের করে অবশ্যই ঘুরে আসবেন পোড়াদহ! বন্ধুবান্ধব কিংবা পরিবার-পরিজন হাতের কাছে যাকেই পাবেন ছুট দিবেন ঘুরতে আর যদি সদ্য বিবাহিত হোন তবে তো কথাই নেই!  শ্বশুরবাড়ির আদর পেতে কার না ভালো লাগে?
নিয়ে যান একটি তাজা মাছ কিংবা আপনার প্রিয় মানুষটির হাত ধরে এবার মেলার ভিড়ে তাকে রেশমি চুড়ি না দেখিয়ে ভিন্ন ভিন্ন জাতের মাছের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিন।

মাছে ভাতেই তো মোর বাঙালিয়ানা!

কন্টেন্ট রাইটারঃ শাহীন সুলতানা

 

Porjotonlipi

Add comment