আজ আমরা আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছি বগালেক ভ্রমণ উপাখ্যান। বাংলাদেশের পার্বত্য ৩ জেলার অন্যতম সুন্দর ও রহস্যময় জেলা বান্দরবান। সেই বান্দরবান এর আর এক রহস্যময় ও আকর্ষনীয় পর্যটন স্থান হচ্ছে বগালেক। রহস্যময় বলছি এই কারণে যে, বগালেকের উৎপত্তি নিয়ে আছে নানারকম উপকথা, যা সেখানে গেলেই শুনতে পারবেন আদিবাসিদের মুখে মুখে। বগাকাইন হ্রদ বা বগা হ্রদ( স্থানীয় নাম বগালেক) বান্দরবন জেলার রুমা উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উচ্চতায় অবস্থিত একটি স্বাদু পানির হ্রদ। বান্দরবন থেকে ৭০ কিমি দূরে রুমা উপজেলায় কেওক্রাডাং এর কোল ঘেষে এর অবস্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা প্রায় ২,৪০০ ফুট (কেওক্রাডাং-এর উচ্চতা ৩,১৭২ ফুট)। ফানেল বা চোঙা আকৃতির আরেকটি ছোট পাহাড়ের চূড়ায় বগা লেকের অদ্ভুত গঠন অনেকটা আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখের মতো।
বগালেক ভ্রমণ উপাখ্যান
বগালেক সম্পর্কিত কিছু তথ্য
রুমা উপজেলার পূর্ব দিকে শঙ্খ নদীর তীর থেকে ২৯ কিলোমিটার অভ্যন্তরে অবস্থিত একটি মৌজার নাম ‘নাইতং মৌজা’। এই মৌজার পলিতাই পর্বতশ্রেণীর অন্তর্গত একটি পাহাড়ের চূড়ায় হ্রদটি অবস্থিত। এই হ্রদটি তিনদিক থেকে পর্বতশৃঙ্গ দ্বারা বেষ্টিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪৫৭ মিটার ও ৬১০ মিটার উচ্চতার মধ্যবর্তী অবস্থানের একটি মালভূমিতে অবস্থিত। এর গভীরতা হচ্ছে ৩৮ মিটার (১২৫ ফুট)। এটি সম্পূর্ণ আবদ্ধ হ্রদ এবং এর থেকে পানি বের হতে পারে না এবং কোনো পানি ঢুকতেও পারে না। এর আশেপাশে পানির কোনো দৃশ্যমান উৎসও নেই। তবে হ্রদ যে উচ্চতায় অবস্থিত তা থেকে ১৫৩ মিটার নিচে একটি ছোট ঝর্ণার উৎস আছে যা বগা ছড়া নামে পরিচিত। হ্রদের পানি কখনও পরিষ্কার আবার কখনওবা ঘোলাটে হয়ে যায়। কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন এর তলদেশে একটি উষ্ণ প্রস্রবণ রয়েছে। এই প্রস্রবণ থেকে পানি বের হওয়ার সময় হ্রদের পানির রঙ বদলে যায়।
বাংলাদেশের ভূতাত্ত্বিকগণের মতে বগাকাইন হ্রদ মৃত আগ্নেয়গিরির জ্বালামুখ কিংবা মহাশূন্য থেকে উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে আবার ভূমিধ্বসের কারণেও এটি সৃষ্টি হতে পারে বলে মত প্রকাশ করেছেন। এটি ভুবন স্তরসমষ্টির (Bhuban Foundation) নরম শিলা দ্বারা গঠিত। বগালেকের অধিকাংশ আদিবাসিই বম উপজাতির অন্তর্ভুক্ত। বগালেকের মোট ঘর সংখ্যা ৩০ টি। জনসংখ্যা ১৫৫জন (পুরুষ ৬৯জন এবং নারী ৮৬ জন)।
অপরূপ বগালেক ভ্রমণ
সকাল, বিকেল, রাত তিনটি ভিন্ন ভিন্ন সময় বগা লেকের দৃশ্য ভিন্ন ভিন্ন, তবে রাতের বগালেক এক অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশের সৃষ্টি করে। পূর্নিমায় দেখবেন এক রূপ আর অমাবস্যায় দেখবেন আর এক রূপ। অমাবস্যায় হারিয়ে যাবেন তারার রাজ্যে। আকাশ ভরা তারার মেলার নিচে বসে বগালেকের অপূর্ব মনোরম সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করার অনুভুতি ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। যদি আকাশ পরিষ্কার থাকে এবং আপনার ভাগ্য ভাল থাকে তাহলে দেখতে পাবেন মিল্কিওয়ে। বলে রাখা ভাল বগালেকে আপনি রাত ১০ টা পর্যন্ত ঘুরাফেরা, গান বাজনা করতে পারবেন। বারবিকিউ যদি করতে চান তাও করতে পারবেন কিন্তু সব কিছু রাত ১০ টা পর্যন্ত (আপনার নিরাপত্তার কারনে আর্মিরা এ ব্যবস্থা গ্রহন করেছে যদিও বগালেকের মানুষদের ব্যবহার বা তাদের জীবন যাত্রার চিত্র দেখে টুরিস্টদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা করার কোন কারনই নেই)।
বগালেকে যাবেন আর বগালেকের পানিতে দাপাদপি করবেন না তাকি হয়। কিন্তু সব সময় মনে রাখবেন যে আপনার জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি। সাতারে পারদর্শি হলে ও বেশি দূর যাবন না কারন লেকের নিচে পাথর আছে, পাথারে আঘাত লেগে আপনি আহত হতে পারেন (প্রায় প্রতি বছরই বগালেকের পানিতে ডুবে টুরিস্ট মারা যায়)। তাই পানিতে নামা নিয়ে খুব সাবধান থাকবেন। যারা সাতার পারেন না কিন্তু পানিতে নামতে চান তারা চাইলে পাড়ের কাছে হাটু পানিতে নেমে গোসল করে নিতে পারেন। পানিতে নেমে একটু স্থির হলেই দেখতে পারবেন কিছু ছোট মাছ আপনার পায়ের কাছে চলে এসেছে। ভয় পাবেন না, এই মাছ গুলো শরীরের ময়লা খায় সুতরাং বলা যায় এই মাছ গুলো আপনার কোন ক্ষতি করবে না। যারা কেওক্রাডাং যেতে চান তারা এই বগালেক থেকেই যেতে পারবেন।
কিভাবে যাবেন বগালেক
বগালেক ভ্রমণ করতে হলে ঢাকা থেকে বান্দরবানের রাতের বাসে উঠে চলে যাবেন বান্দরবানে। সকালের নাস্তা বান্দরবান শহরে করে নিন। এর পর সিএনজি বা অটো রিজার্ভ করে বা লোকাল সিএনজি নিয়ে চলে যান রুমা বাস স্ট্যান্ডে। বলে রাখা ভাল বাস দিনে ৪ টা সময়ে চলে, ৮.৩০, ১০.৩০, ১২.৩০, ২.৩০। বাসে রুমা যেতে সময় লাগবে দুই থেকে আড়াই ঘন্টা। রুমায় নেমে গাইড সমিতি থেকে গাইড যোগার করে চলে যান রুমার আর্মি ক্যাম্পে। আর্মি ক্যাম্প থেকে পারমিশন নিয়ে চলে যান বগালেক। চাইলে রুমা থেকে বগালেক পুরোটা পথ ট্রেক করে যতে পারবেন। আর যদি হাটতে না চান তাহলে চান্দের গাড়ি ভাড়া নিয়ে যেতে পারবেন। বগালেক এর আগে কমলা বাজার নেমে গেলে ভাড়া এক আর বগালেক পর্যন্ত গেলে আর এক ভাড়া (বর্ষা কালে গেলে কমলা বাজার পর্যন্ত যেতে পারবেন গাড়িতে বাকিটা পথ হেটে যেতে হবে তবে এখন রাস্তার কাজ চলছে রাস্তার কাজ শেষ হয়ে গেলে সারা বছরই যেতে পারবেন গাড়ি দিয়ে)।
বগালেকে নেমেই বগালেক আর্মি ক্যাম্প রিপোর্ট করতে হবে। তার পর গাইড আপনাদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবে। বেশ কিছু রিসোর্ট আছে বগালেকে। যদি বারবিকিউ করতে চান তবে রুমা থেকে মুরগি কিনে আনাই ভাল। আপনার প্রয়োজনীয় সকল ঔষধ ঢাকা থেকে কিনে আনাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস রুমাতে পাবেন। বগা লেকে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই কিন্তু মোবাইল বা ক্যামেরার ব্যাটারি টাকা দিয়ে চার্জ দিয়া যাবে।
খরচ
ঢাকা – বান্দরবান ৬২০ (হানিফ)
সিএনজি দিয়ে রুমা বাস স্টেন্ড ২০-৩০ (পার পার্সন)
রুমার বাস ভাড়া ১০০
গাইড ভাড়া ৬০০ (পার ডে)
চান্দের গাড়ি ভাড়া কমলা বাজার পর্যন্ত ২৫০০-৩০০০ আর বগালেক পর্যন্ত ৩০০০-৩৫০০
বগালেকে থাকা পার পার্সন পার নাইট ১০০
খাওয়া দাওয়া পার ডে ২২০ – ৩০০ টাকা।
কন্টেন্ট রাইটারঃ মাসুম রাব্বানী
Thanks for your information. It’s really helpful
[…] চোখে পড়ল জুম চাষ করা পাহাড়। এইসব প্রাকৃতিক দৃশ্য থেকে চোখ ফেরানো দায়। প্রাকৃতিক […]
[…] রুট ব্রিজের ঠিক পাশেই আপনি একটি প্রাকৃতিক সুইমিং পুল পাবেন। আমাদের সাথে আমাদের সাঁতারের […]
[…] সাঁতার কেটে আপনি সহজেই তা ভুলে যাবেন। বগা লেকের মত এই লেকে কোন জলজ উদ্ভিদ না থাকায় […]