Porjotonlipi

ফেনীর প্রতাপপুর রাজবাড়ি

বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি জেলাতেই পাওয়া যায় একের অধিক রাজবাড়ি। যার অধিকাংশেই বর্তমানে রাজা কিংবা তার উত্তরসূরীদের পাওয়া যায়না। তবে রাজবাড়ি কিংবা রাজ্য নিয়ে বরাবরই মানুষের উৎসাহের কমতি নেই। আজ তবে চলুন পরিচয় করিয়ে দেই এক রাজবাড়ির সাথে।

রাজা যায় রাজা আসে,
ভিটেমাটি প্রহর গুনে

প্রতাপপুর রাজবাড়ি নিয়ে কিছু কথা

প্রতিটি জায়গাকে নতুন করে আবিষ্কার করতে কার না ভালো লাগে আর তা যদি হয় গ্রামের মামাতো খালাতো ভাই-বোনদের নিয়ে তাহলে তো আর কথাই নেই। দুয়েক বছর আগে নানুর বাড়ি ফেনীর দাগুনভূইঞা বেড়াতে যাই। গিয়েই খুঁজতে শুরু করি কোথায় ঘুরতে যাওয়া যায়। আর তখনি পেয়ে গেলাম ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নের প্রতাপপুর গ্রামে প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি। প্রতাপপুর জমিদার বাড়ি ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলার পূর্বচন্দ্রপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। এটি স্থানীয়ভাবে প্রতাপপুর রাজবাড়ি বা বড় বাড়ি হিসেবেও পরিচিত।

ইতিহাস

বাংলা ১২২৮ সালের ১৩ ফাল্গুন এটির নির্মান কাজ শেষ করেন রাজকৃষ্ণ সাহা কিংবা রামনাথ কৃষ্ণ সাহা। জমিদার বাড়িটির সীমানা প্রায় সাড়ে ১৩ একর। নিজ নামেই তিনি নির্মাণ করে যান রাজপ্রাসাদসম বাড়ি।

জানা যায়, ১৮৫০ মতান্তরে ১৮৬০ সালে জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা ৮শ’ শতক জায়গায় দৃষ্টিনন্দন করে বাড়িটি নির্মাণ করেন। রামনাথরা ছিলেন পাঁচ ভাই। তারা থাকতেন পাঁচটি দ্বিতল ভবনে।

প্রতাপপুর রাজবাড়ি
ফটো ক্রেডিটঃ শাহিন সুলতানা

বাড়িতে রয়েছে মোট ১৩টি পুকুর  যাতে মাছ চাষ হতো জমিদারের তত্ত্বাবধানে। বাড়ির ভেতরে পাঁচটি পুকুরের ৫টি পাকা ঘাটে স্নান করতেন বউ-ঝিরা। এতো পুকুর বাংলাদেশের আর কোন জমিদার বাড়িতে নেই। এখানকার পুকুরগুলো পুরো বাড়িকে করেছে আকর্ষণীয়। ওই সময়ে বাড়িটি ছিল আশপাশের এলাকার জন্য দর্শনীয়। অন্যান্য স্থানের তৎকালীন জমিদাররা এ বাড়িতে সফরবিরতি করতেন। একপর্যায়ে জমিদার প্রথার বিলুপ্তি ঘটলে ওই বাড়ির প্রভাব প্রতিপত্তি কমতে শুরু করে।

দাগনভূঞায় কয়েকটি চৌধুরী, ভূঞা এবং জমিদার বংশের মধ্যে প্রতাপপুর জমিদারদের অবস্থান ছিল শীর্ষে। তারা ছিল আশপাশের এলাকার জন্য প্রভাবশালী। ব্রিটিশ আমলে বাড়ির জমিদার রাজকৃঞ্চ সাহা এ বাড়িতে বসেই অত্র এলাকার শাসনকার্য পরিচালনা করতেন। তিনি এবং তার ৫ ছেলে জমির খাজনাদি আদায় করতেন।

প্রতাপপুর রাজবাড়ি
ফটো ক্রেডিটঃ শাহিন সুলতানা

বিস্তৃতিঃ

৬টি ঐতিহাসিক ভবন, ১৩টি পুকুর নিয়ে সবুজে শ্যামলে ভরা বাড়িটি যেন এক স্বর্গপূরী। প্রায় ১৫০ বছরের পুরনো পুকুরগুলোতে এখনো মাছ চাষ করা হয়। জমিদারের বংশধররা থাকায় এখনো এটি মালিকানাধীন। তথ্য মতে, অনেক কোম্পানি এই বাড়িটি কিনতে চাইলেও এটি বিক্রি করা হয়নি। বাড়িটির একমাত্র রক্ষণাবেক্ষণকারী দিনেশ বাবু থেকে জানা যায়, জমিদারী ক্ষমতা চলে যাওয়ার পরেও এখানে তাদের বংশধররা থাকত। কিন্তু ডাকাতের প্রবণতা বেশী থাকায় জমিদারের বংশধররা এই বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়। এখন তাদের বংশধররা কাজের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে (চট্টগ্রাম, ঢাকা,ভারতের কলকাতা, ত্রিপুরা রাজ্যে) অবস্থান করছেন। এছাড়াও প্রায় ৫০টিরও বেশী নারিকেল গাছ, সুপারি গাছসহ আম, কাঁঠাল এবং বহু প্রজাতির গাছ নিয়ে এখনো বিষম দাঁড়িয়ে আছে জমিদার বাড়িটি। আস্তে আস্তে এটি পরিত্যক্ত হতে শুরু করেছে, তবে এখনো এটির গুরুত্ব কমেনি। বাড়িটির অতীতকে ঢেলে সাজাতে এখনো প্রতি বছর ৯,১০,১১ ফাল্গুন তিন দিন ব্যাপি অনুষ্ঠান হয়। যেখানে তাদের বংশধররা একত্রিত হয়। আশপাশের গ্রাম থেকে অনেকেই আসেন এই অতীতের সাক্ষী হতে। আমরা যেদিন গিয়েছিলাম সেদিনও সেখানে ব্যাপক মানুষের সমাগম ছিলো। নানান প্রান্ত থেকে মানুষ এসেছিল ঘুরতে।

ছবিতে লেখিকাকে খুঁজে পাবার আপ্রাণ চেষ্টা

যেভাবে যাবেনঃ

দেশের যেকোনো জায়গা থেকে ফেনী মহিপাল কিংবা দাগুনভূঞা আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে সেবারহাটের সিএনজি যোগে সহজেই যেতে পারবেন। দাগুনভূইঞা থেকে সিএনজি ভাড়া পরবে ১৫০-২০০টাকা। এছাড়াও সেবারহাট নেমে লোকজন থেকে সাহায্য নিতে পারবেন, স্থানীয়ভাবে এটি বড়বাড়ি হিসেবে পরিচিত তবে জমিদারবাড়ি বলেও যেতে পারেন।

সতর্কীকরণঃ

অবশ্যই সন্ধার আগে ফিরতে চেষ্টা করবেন, কেননা কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে না থাকায় সন্ধ্যার পরই সেখানে বখাটেদের আড্ডা জমে। ঘটতে পারে ছিনতাই কিংবা চুরির মত ঘটনা।

কন্টেন্ট রাইটারঃ শাহীন সুলতানা

 

Porjotonlipi

2 comments

  • লেখিকার হাত যথেষ্ট ভালো।
    কাল গিয়েছিলাম।
    জায়গাটি অসম্ভব সুন্দর।

    • ধন্যবাদ। পর্যটনলিপির সাথেই থাকবেন…