ত্রিপুরা, মারমা, চাকমাদের যথাক্রমে বৈসু, সাংগ্রাই, বিজু এই উৎসব এর অদ্যক্ষরের মিলিত রূপ বৈসাবি। এটিই এখানকার সবচেয়ে বড় উৎসব। বৈসাবির সূচনা পর্বে থাকে ফুল বিজু। নদীর জলে দেবি গঙ্গার উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মাধ্যমে সূচিত হয় নতুন বছরকে বরণ করার মহা আয়োজন। ক্ষুদ্রনৃগোষ্ঠি নারী-পুরুষ, শিশু সকলের অংশগ্রহণে পাহাড় সাজে উৎসবের বর্ণিল রঙে। আদিবাসী ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, পানিখেলা, ত্রিপুরাদের গরিয়া নৃত্য, ঘিলাখেলা, বর্ণাঢ্য শোভা যাত্রায় নতুন বছরকে বরণ করা প্রস্তুতি চলে। পুরাতন বছরের গ্লানি আর অপ্রাপ্তি ভু্লে নতুন বছরের ছন্দে পাহাড়ের উৎসবের বর্ণিতায় ফিরে আসে –বৈসাবি। সবুজ পাহাড় যেন রঙিন রূপে সেজে উঠে। পাহাড়ে সর্বত্র উৎসবের আমেজ।
করোনাকালীন বৈসাবি ২০২১
ভোরের আকাশে রক্তিম সূর্যের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ফুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। ফু্ল বিজু মূলত চাকমাদের উৎসব হলেও, সবার অংশগ্রহণে তা সার্বজনীন রূপ নেয়। বাংলা ঋতু চৈত্র মাসের শেষ দিনে আয়োজন করা হয় ফুল বিজুর। পুরাতন বছরে গ্লানি -দুঃখ ভুলে নতুন দিনের মঙ্গল কামনায় গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে নদীতে ভাসানো হয় নানা রঙের পাহাড়ি ফু্ল। বন থেকে সংগ্রহ করা বিজু ফুল ছাড়াও মাধবীলতা, অলকানন্দা, নিম পাতা, রঙ্গন, জবাফুলসহ বাহারি ফুল কলাপাতায় করে নদীর জলে ভাসানো হয়। দেবী গঙ্গা’র উদ্দেশ্যে নদির পাড়ে মোমবাতি জ্বালানো হয়।
আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাকে ফুল বিজুতে অংশ নেয় চাকমা,ত্রিপুরা তরুণ-তরুনীরা। থামি, পিনন, কবই, খাদি, খবং পরে তরুণীরা ফুলবিজুতে অংশ নেয়। ধুতি, ফতুয়া আর কুতুক রি (মাথায় ব্যবহৃত মাফলার) পরে ফুল বিজুতে অংশ নেয় তরুণের।
দল বেধে নদির জলে মোমবাতি জ্বালানো পর্ব শেষ করে কলাপাতায় করে ফুল ভাসায়। এর পাশাপাশি বৈশাবিকে বরণ করে নিতে প্রস্তুত গোটা পার্বত্য অঞ্চল।
আজ ফুল বিজুর মধ্যে দিয়ে শুরু হবে বৈসাবি উৎসব।
প্রতি বছর একই মাসের একই তারিখে বৈসাবি উৎসব পালন করা হয়।
১২ তারিখ ফুল বিজু,
১৩ তারিখ মূল বিজু, আর
১৪ তারিখ নূও বজর (নতুন বছর)
১১ তারিখ রাত ১২টা বাজার সাথে সাথেই সবাই দলবেঁধে হৈ চৈ করে পাড়ায় পাড়ায় ফুল তুলতে যায়।
ফুল তুলা শেষ করে সকাল হলেই সেজেগুজে হাতে ফুল নিয়ে সবাই দলবেঁধে যায় চেঙ্গীনদীর পাড়ে। একটি কলাপাতায় বিভিন্ন প্রকার ফুল সাজিয়ে মা গঙ্গা আর সকল প্রানীর মঙ্গল কামনার্থে করজোড়ে বন্ধনা করে ফুলগুলো নদীতে ভাসিয়ে দেয়। তারপর বাড়িতে এসে আবার শুরু হয় ফুল দিয়ে বাড়ির দরজা সাজানো।
কাল মূল বিজু। কালকেই রান্না করা হবে বিজুর মূল আকর্ষন “পাঁজন”
আজ সকালেই কথা হয় রাঙামাটির স্থানীয় কিছু উপজাতি নারীর সাথে তারা জানায় করোনার কারণে গতবছরের মতো এই বছরও তারা খুবই ছোট ছোট এলাকা ভিত্তিক আয়োজন করেছে, যেখানে শুধুমাত্র স্থানীয় লোকজনের সমাগম ঘটবে। ভোরবেলায় তারা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পিনন পড়ে নদীতে ফুল ভাসিয়ে আসে।এরপর শুরু হয় নানান ধরনের আয়োজন, যেমনঃ নানান রকমের খাবার, একে অপরের বাসায় মিষ্টান্ন নিয়ে যাওয়া ইত্যাদি। তবে করোনার কারণে এই বছরও তাদের বিশেষ আয়োজন “পানিখেলা” হচ্ছেনা।যেখানে যুবক-যুবতীরা একে অপরকে পানি মারার মধ্যদিয়ে আনন্দ উপভোগ করেন।
সবাইকে বৈসাবির শুভেচ্ছা। নতুন বছর সকলের জন্যে মঙ্গল বয়ে আনুক।
কন্টেন্ট রাইটারঃ শাহীন সুলতানা
Add comment