Porjotonlipi

নয়নাভিরাম ফটিকছড়ি উপজেলা

ফটিকছড়ি, বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিভাগ এর একটি উপজেলা। আপনি যদি ভ্রমণপিপসু হয়ে থাকেন, এই ফটিকছড়ি উপজেলা আপনাকে হতাশ করবে না। মোট ৭৭৩.৫৬ কিলোমিটার আয়তনের, ঢাকার উত্তর-পূর্ব দিকে অবস্থিত এই উপজেলায় দেখার মত উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলো কর্ণফুলী চা বাগান, মাইজভান্ডার দরবার শরীফ, নানুপুর বৌদ্ধ বিহার, রামগড় চা বাগান এবং রাঙামাটিয়া রাবার বাগন। বাংলাদেশের ১৬৩ টি চা বাগানের মধ্যে মোট ১৭ টি রয়েছে চট্টগ্রামের এই ফটিকছড়ি উপজেলায়।

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা

চট্টগ্রাম জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা ফটিকছড়ি। এটি সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাকস এর মধ্যবর্তী একটি উর্বর ভ্যালি। ফটিকছড়ি উপজেলায় ফটিকছড়ি নাম এর নির্দিষ্ট কোনো এলাকা নেই। এর দক্ষিণে ত্রিপুরা ও হাটহাজারী, উত্তরে কাউখালী উপজেলা, রামগড়, লক্ষ্মীছড়ি ও মানিকছড়ি, পূর্বে রাউজান উপজেলা এবং দক্ষিণে মিরসরাই ও সীতাকুণ্ড উপজেলার দ্বারা বেষ্টিত।

এর আয়তন প্রায় ৭৭৩.৫৬ বর্গকিলোমিটার। এর মোট  ইউনিয়নের সংখ্যা ২০ টি থাকলেও বর্তমান ইউনিয়নের সংখ্যা ১৮ টি। এইগুলো হচ্ছেঃ বাগানবাজার, দাঁতমারা, নারায়ণহাট, ভূজপুর, পাইন্দং, সুয়াবিল, কাঞ্চননগর, হারুয়ালছড়ি, সুন্দরপুর, লেলাং, জাফতনগর, বক্তপুর, সমিতিরহাট, নানুপুর, ধর্মপুর, আবদুল্লাহপুর, রোসাংগিরী, ও খিরাম।

প্রায় প্রতিবছরই এই উপজেলা ভারী বৃষ্টিপাত এর কারণে বন্যা কবলিত হয়। এই বন্যার আর একটি কারন হলো হালদা নদী থেকে আগত বন্যার ড্রেনেজ পানি। এই এলাকার অধিবাসীদের মধ্যে দেখা যায় এক ব্যাপক বৈচত্র্য। এখানে রয়েছে বাঙালি মুসলিম, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সম্প্রদায়। বৌদ্ধদের মধ্যে সকলেই বড়ুয়া। ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরা, চাকমা ও মঘ যাদের সংখ্যা দিন দিন এই উপজেলা থেকে কমে যাচ্ছে কারণ তারা চটগ্রাম হিল ট্র্যাক এলাকায় বসতি স্থাপন করছে। এছাড়াও রয়েছে মণিপুরী ও উড়িয়া জনগোষ্ঠীর লোকজন, যারা মূলত চা বাগানের কাছে থাকে।

কিভাবে যাওয়া যায় ফটিকছড়ি উপজেলা

ঢাকা থেকে ফটিকছড়িতে যাওয়ার জন্য বাস ভাড়া মোটামুটি ৫০০ টাকা থেকে শুরু। এই রাস্তায় যাতায়াত করে এমন অনেক বাস অপারেটর রয়েছে যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো গ্রীন লাইন পরিবহন, দিগন্ত পরিবহন, শ্যামলী পরিবহন আরো অনেক। সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টার মতো। অনলাইনে টিকিট কেনার জন্য রয়েছে বেশকিছু টিকেটিং সাইট।

আকাশপথে যাতায়াত এর জন্য, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে খরচ হয় মোটামুটি ৩৭০০ টাকা থেকে ১২৫০০ টাকার মতো। সময় লাগে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার মতো, এরপর সেখান থেকে সড়ক পথে পূর্ব ফটিকছড়িতে যেতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা থেকে একটু বেশি এবং খরচ হবে প্রায় ১ থেকে ২ হাজার টাকা।

ফটিকছড়ি উপজেলার দর্শনীয় স্থান

মাইজভান্ডার দরবার শরীফঃ

চট্টগ্রাম শহর থেকে নাজিরহাট বা খাগড়াছড়ি বাস যোগে ঝংকার নেমে, এরপর সেখান থেকে সিএনজি যোগে দরবার শরীফ।

ফটিকছড়ি উপজেলার মাইজভান্ডার দরবার শরীফ
ফটো ক্রেডিটঃ M. Shah Alam

 

কর্ণফুলী চা বাগান

চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড় থেকে খাগড়াছড়ি, হেয়াকো বা ফটিকছড়িগামী যে কোনো বাসে উঠে ফটিকছড়ির বিবিরহাট বাস স্ট্যান্ডে নামুন। ভাড়া জনপ্রতি ৪০/- টাকা। যাত্রী ছাউনির ডান দিকের রোড ধরে হেঁটে সামনে যেতে থাকুন। একটু সামনে সিএনজি পাবেন, জনপ্রতি ভাড়া ৩০ টাকা, রিজার্ভ নিলে ১৫০ টাকা।

ফটিকছড়ি উপজেলার কর্ণফুলী চা বাগান
কর্ণফুলী চা বাগান

 

নানুপুর বৌদ্ধ বিহার

চট্টগ্রাম শহর থেকে নাজিরহাট বা খাগড়াছড়ির বাস যোগে ঝংকার নেমে সিএনজি যোগে নানুপুর গৌতম বিহার যাওয়া যাবে।

রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগান

চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলায় ১৩৫৬.৬২ একর বিশিষ্ট রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগান ২০১২ সালে কাঞ্চননগর রাবার বাগান থেকে পৃথক হয়, যা মূলত ১৯৭৮-৭৯ সালে স্থাপিত হয়। বাগানটি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলা সদরের ০৩(তিন) কিলোমিটার উত্তর পূর্ব দিকে কাঞ্চননগর রাস্তার উভয় পার্শে অবস্থিত। উক্ত বাগানে মোট গাছের সংখ্যা ১০১৮৮৫টি, উৎপাদনশীল গাছ ৬২১৮৪টি, জীবনচক্র হারানো গাছ ২১০৭১টি। ফটিকছড়ি উপজেলায় উত্তর-পূর্ব দিকে প্রায় ০৩ (তিন) কিলোমিটার দূরে রাঙ্গামাটিয়া গ্রামে বাগানটি অবস্থিত। এটিতে সিএনজি/রিক্সা যোগে যাওয়া যায়।

ফটিকছড়ি উপজেলার রাঙ্গামাটিয়া রাবার বাগান (সেলফি রোড)
রাবার বাগান (সেলফি রোড)

রামগড় চা বাগান

রামগড় চা বাগানটি  ফটিক ছড়ি এলাকার  ১নং বাগান বাজার। ফেনী থেকে বারোইয়ারহাট হয়ে বাস অথবা সিএনজি চালিত অটো রিক্সা করে যেতে পারেন।

অনুরোধ

সবশেষে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, ভ্রমণপিপাসু হিসেবে এবং সর্বোপরি একজন মানুষ হিসেবে পর্যটনলিপির আপনার কাছে একটি ছোট্ট অনুরোধ, আমরা যেখানে সেখানে চিপস এর প্যাকেট, জুস এর বোতল বা কাগজ ও পলিথিন জাতীয় কিছু ফেলে আসবো না। প্রকৃতিকে সুন্দর রাখার দায়িত্বটা আমাদের সকলের। ফটিকছড়ির কথা বলতে গেলে, হাজারিখিলে অভয়ারণ্যের ভেতরে খাবার জায়গা, ক্যাম্প সাইট এর আশেপাশে ময়লা ফেলার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে ডাস্টবিন এর ব্যবস্থা করা আছে। আমরা যদি প্যাকেটজাত ময়লা ও অন্যান্য বর্জ যথাস্থানে ফেলি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হয়তো একটি সুস্থ ও বসবাসযোগ্য সুন্দর প্রকৃতি দেখতে পাবে। আশা করি আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে প্রকৃতিকে হয়রানির সম্মুখীন করবো না।

আর একটি অনুরোধ, আপনি যদি ফটিকছড়ি সম্পর্কে আরো কিছু জেনে থাকেন, আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে ভুলবেন না। আসুন, সবাই একসাথে মিলে বাংলাদেশের প্রকৃতি, পরিবেশ ও পর্যটনশিল্প কে দেই পর্যাপ্ত সম্মান ও চর্চা, এবং বিশ্বের মানচিত্রে আমাদের পর্যটন শিল্প কে তুলে ধরি এর যথাযথ মর্যাদায়।

কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর ফাতিহা তাহিয়াত 

 

 

 

 

 

 

Porjotonlipi

Add comment