পহেলা বৈশাখ মানেই “এসো হে বৈশাখ , এসো এসো “। চিরচেনা সেই সুমধুর গান দিয়ে প্রতিবছর ঘুরে আসে বাংলা বছরের প্রথম দিন পহেলা বৈশাখ। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর লেখা এই গান ,বাংলা বছরের প্রথম দিনটি আরও সুন্দর করে তোলে।
সকল গ্লানি মুছে দেয় এই পহেলা বৈশাখ
বছরের প্রথম দিন শুরু হয় রমনা বটমূলে ছায়ানটের আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দিয়ে। বিগত দুই বছর করোনা মহামারীর কারণে রমনা বটমূলের মূল অনুষ্ঠান অনলাইনে ঘরে বসে মানুষ উপভোগ করেছে। এই বছর করোনার প্রকট কম থাকায় ছায়ানট সীমিত পরিসরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে যা শুরু হয় সকাল বেলা। চারুকলা থেকে প্রত্যক বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। করোনা মহামারীর জন্য এই শোভাযাত্রা বন্ধ ছিল। এই বছর চারুকলা থেকে সীমীত আকারে এই শোভাযাত্রা আয়োজন করেছে । এটি টিএসসি চত্বর থেকে ঢাকা ইউনির্ভাসিটি ক্যাম্পাস ঘুরে আবার চারুকলা ফিরে আসে।
আনন্দ মুখর পহেলা বৈশাখ
দিনভর সব জায়গায় থাকে উৎসব মুখর পরিবেশ, সাথে থাকে অনেক জায়গায় মেলা এবং ছোট ছোট উংসব। এই উৎসব যে শুধু ঢাকাতে সীমাবদ্ধ থাকে তা নয়, গ্রামগঞ্জেও পালা করে চলে নানা রকম মেলা, যাত্রা, গানের আয়োজন। বসে নানা রকম পসরা। হরেক রকম মিষ্টি, বাতাসা, মুড়কী, নিমকী, ইত্যাদি। বসে চরকি, নাগরদোলা, বায়োষ্কোপ আরও অনেক রকম মজার সব খেলা। গ্রামে সেই সাথে যুক্ত হয় বলী খেলা, নৌকা বাইচ। এই ধরণের বৈশাখী মেলা চলে পুরো মাসব্যাপী, সেই সাথে থাকে নানা রকম বৈশাখী আয়োজন।
গ্রাম বাংলার পালা পার্বণ থেকে শহরের পালা পার্বণ অনেকটা ভিন্ন। শহরের বৈশাখী আয়োজনগুলো আবার একটু ভিন্ন আঙ্গিকের হয়ে থাকে। ঢাকা শহরে পহেলা বৈশাখের আগের দিন আয়োজন করা হয় চৈত্র সংক্রান্তি, যেখানে সন্ধার পর চারুকলার বটতলায় বসে নানা আয়োজন। চলে নাচ ,গান, আবৃত্তি সহ আরও অনেক কিছু। এছাড়াও মানিক মিঞা এভিনিউ তে রাতভর আঁকা হয় আলপনা। আলপনায় ফুটিয়ে তোলা হয় বৈশাখের পটভূমি । সেই আলপনা আঁকা দেখতে অনেকই ভীড় করেন সেখানে । তবে এই বার প্রথম বারে মত আয়োজন হবে পুরো বাংলাদেশের সকল বিভাগ এক সংগে ও একই দিনে আকবে। যা কিনা বাংলাদেশের জন্য এক র্গব ও ভাল লাগা দিক।
খাবারের আয়োজন ও পহেলা বৈশাখ
পহেলা বৈশাখ যেহেতু বাঙলা মাসের প্রথম দিন, তাই এই দিন টিকে কেন্দ্র করে চলে খাওয়া- দাওয়ার এক ধুম। শহর এবং গ্রামের প্রত্যেক বাড়িতে ভাল- মন্দ, কম- বেশী রান্না হয়, যা সবাই একটি পালা-র্পাবণ কিংবা একটি উংসবের দিন হিসেবে পালন করে থাকে। মিষ্টি বাঙালির যে কোনো উৎসবের প্রধান আর্কষন হয়ে থাকে, আসলে মিষ্টি ছাড়া আমাদের বাঙালির যে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয় না। আর সাথে থাকে মাছ, র্ভতা। নানা পদের র্ভতা এবং মাছ এই দিনে রান্না করা হয়ে থাকে। কথায় আছে “মোরা (আমরা) মাছে-ভাতে বাঙালি ,তাই নানা জাতের মাছ পহেলা বৈশাখে রান্না করা হয়। মাছের মধ্যে প্রধান র্আকষণ থাকে ইলিশ মাছ এবং বাজারে এই দিন টিকে কেন্দ্র করে সব রকম মাছের দাম বাড়িয়ে দেয়, বিশেষ করে ইলিশ মাছের দাম। পহেলা বৈশাখের কয়েক দিন আগেই এই মাছের দাম বাড়তি থাকে। তবে সাধ্য মতন সবাই কেনার চেষ্টা করে থাকে। আর সাথে থাকে দই – মিষ্টি।
পহেলা বৈশাখে বাঙ্গালী ফ্যাশন
বিশেষ এই দিনটি কেন্দ্র করে নতুন জামাকাপড় কেনার একটি আগ্রহ সবার মাঝে দেখা যায়। থাকে পোশাকে কিছু প্রধান রং, লাল-সাদা বা শুধু লাল বা শুধু সাদা থাকে প্রথম পছন্দ। আগেও এই প্রথা ছিল বটে তবে আজকাল এটি ফ্যাশন পরিণত হয়ে গেছে। এই দিন বেশির ভাগ ছেলে-মেয়ে, পুরুষ- মহিলা সকলেই যে পোষাক পরে না কেন, তারা লাল বা সাদা রং বেছে নেয়। ছেলেরা বেশির ভাগ পরে পাঞ্জাবী এবং বেশীর ভাগ মেয়েরা পরে শাড়ী। সেদিন সারাদিন দেখতে পাওয়া যায় রঙিন এক বৈচিত্র্যময় পোশাক। সবাই সুন্দর সেজে পরিপাটি হয়ে বের হয় এই দিনটি পালন করতে।
আদিবাসীদের নববর্ষ উদযাপন
আমাদের এই বাংলাদেশে সব জাতি যেহেতু সমান, সেই প্রথা অনুযায়ী এই দেশের আদিবাসী ও তাদের নতুন বছর যা কিনা ফুল বৈষাবী এই সময় পালন করে থাকে। তিন দিন তারা এই উৎসব পালন করে থাকে। আমাদের পহেলা বৈশাখের মতন এটিও তাদের একটি অন্যতম উৎসব। সকাল বেলা ভোরে নানা রঙের ফুল নদীতে ভাসিয়ে তারা এই দিন টি শুরু করে থাকে। তারপর দিনভর চলতে থাকে নানা আয়োজন। করোনা র জন্য তাদের ও এই দিনটি গত দুই বছর তেমন কিছু করা হয়নি, তবে এ বছর উৎসাহ ও উদ্দিপনা সাথে পালিত হয়েছে বা হবে।
আমাদের এই প্রাণর উৎসবে এই পহেলা বৈশাখ গত দুই বছর বন্ধ ছিল, করোনা মহামারীর কারণে। সবাই ঘরে বসে অনলাইনে সকল আয়োজন উপভোগ করেছিল। তবুও সবার মন খারাপ ছিল, যেখানে সবাই একসাথে বাইরে বের হয়ে দিনটি উৎযাপন করে থাকতো, তা তখন বন্ধ ছিল। এই বছর করোনার প্রকট কম থাকায়, পুনরায় সব আয়োজন পালন করা হচ্ছে। সীমিত আকারে হলেও উৎসবের দিন সুন্দর করে সেজে বাইরে বেড়িয়ে সকল অনুষ্ঠান উপভোগ করা যাবে বা যাচ্ছে। এই বছর পহেলা বৈশাখ দিনটি যেন ফিরে পেতে যাচ্ছে তার চিরাচরিত রূপে। যে দিনটি আমরা সকল বাঙালিরা সব ভেদাভেদ ভুলে একসাথে দিনটি পালন করে থাকি, একসাথে সবাই আনন্দে মেতে উঠি, পুরোনো দিনগুলো ফেলে রেখে, নতুন দিনের পথচলা শুরু করি, তাই কবি গুরু বলেছিলেন
“মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা।
অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা। “
তাই নতুন বছর, নতুন দিন এবং নতুন একটি বছর সবাই শুরু করি মঙলময় ভাবে। সবার নতুন বছর খুব ভালো হোক বা কাটুক এই আশা করি। সকল কে নবর্বষ শুভেচ্ছা। শুভ নবর্বষ।
কন্টেন্ট রাইটার – উর্মিতা সাহা
Add comment