Porjotonlipi

পলওয়েল পার্ক – পাহাড় ও লেকের অপূর্ব সমন্বয়

পলওয়েল পার্ক রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের তত্ত্বাবধানে কাপ্তাই লেকের কোল ঘেঁষে তৈরি। সৃজনশীলতার ছোঁয়ায় রাঙ্গামাটির অন্যতম সেরা বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে স্থান করে নিয়েছে এটি। বৈচিত্র্যময় দৃশ্য, অভিনব নির্মাণশৈলী এবং নান্দনিক বসার স্থান পার্কটিকে দিয়েছে ভিন্ন এক মাত্রা।

রাঙ্গামাটি জেলার পলওয়েল পার্ক

নৈসর্গিক প্রাকৃতিক পরিবেশে সময় কাটাতে ও চিত্তবিনোদনের জন্য শুধু স্থানীয় মানুষই নয় বরং দূর-দূরান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য দর্শনার্থীর পদচারণায় পলওয়েল পার্ক মুখর হয়ে উঠে।

দৃষ্টিনন্দন পলওয়েল পার্ক

মুখোশের আদলে তৈরী করা হয়েছে পার্কটির প্রবেশপথ। প্রবেশপথের পাশেই ভিন্ন আরেকটি মুখোশ আকৃতির টিকেট কাউন্টার। প্রবেশমূল্য, জনপ্রতি ৩০ টাকা। পাঁচ বছরের কম বয়সী বাচ্চাদের জন্য টিকেটের প্রয়োজন নেই। পার্কটি রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকে।

পলওয়েল পার্ক এ প্রবেশের পর চোখে পড়বে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক) কর্তৃক পরিচালিত প্রদর্শনী ও বিক্রয় কেন্দ্র। এখানে পাওয়া যায় বিভিন্ন ধরণের স্যুভেনির, আদিবাসীদের হাতে বোনা কাপড় ইত্যাদি। বিনোদনের সাথে সাথে পাহাড়ি স্মৃতি বন্দি করতে এখানে পেয়ে যাবেন নানান ধরনের জিনিস।এরপরই শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে কিডস জোন। শিশুদের আনন্দ দিতে এই পার্কে বিভিন্ন রকম রাইডের ব্যবস্থা রয়েছে। টিকেটের মূল্য রাইড ভেদে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। টিকেটের দামের তুলনায়, অনেক বেশি সময় ধরে বাচ্চারা এখানে রাইডগুলো উপভোগ করতে পারে।

ছবি – সংগৃহীত

বাঙালির জীবনের সাথে মিশে থাকা গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য তুলে ধরতে কিডস জোনের অপর প্রান্তে তৈরী করা হয়েছে ঢেঁকিঘর আদলের একটি স্থাপনা। গ্রামের নারীদের ঢেঁকিতে ধান ভানার এই ভাস্কর্য গ্রামীণ জীবনের কথা মনে করিয়ে দেয়। এই ভাস্কর্যের স্থাপত্য শৈলী এতটাই সুনিপুণ, প্রথম দেখায় আপনার মনে হতে পারে বাস্তব কোনো দৃশ্য দেখছেন।

কিডস জোন থেকে সামনে এগিয়ে গেলে রাস্তার পাশে বসার জন্য কিছু বেঞ্চ তৈরী করা আছে। এখানে বসলে কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ে। সামনে যতদূর দৃষ্টি যায়, লেকের অথৈ জলের সীমানা দূরের আকাশে গিয়ে মিশেছে। আকাশ আর লেকের নীলের মাঝে পাহাড়গুলো যেন সীমারেখা হয়ে আছে। এর ঠিক পেছনেই তৈরী করা আছে কলসি কাঁখে নারী ভাস্কর্য। তাদের কলসের প্রবাহমান পানিতে তৈরী হয়েছে ঝর্ণা। দিনের আলো নিভে গেলে কৃত্তিম আলোয় এই ঝর্ণা দেখতে ঠিক নৈসর্গিক লাগে।

এখান থেকে কিছুটা এগোলেই চটপটি আর ফুচকার দোকান। অনেকটা খোলা জায়গা জুড়ে চেয়ার টেবিল পেতে বসার ব্যবস্থা। ফুচকা আর চটপটি প্রেমীরা কাপ্তাই লেকের সৌন্দর্য দেখে আর ফুচকা খেয়ে বিকেলটা এখানে কাটাতে পারেন। আরও একটু সামনে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেই পলওয়েল ক্যাফেটেরিয়া। মুখরোচক খাবারের সাথে আইসক্রিম আর কফিও পাওয়া যাবে এখানে।

ক্যাফেটেরিয়া থেকে সামনে এগোলে ফিশিং পিয়ার। ফিশিং পিয়ার হচ্ছে এমন একটা স্তম্ভ বা প্ল্যাটফর্ম, যেটা উপকূল থেকে শুরু হয়ে লেক/নদী/সমুদ্রের যেখানে পানির গভীরতা অনেক বেশি, এমন দূরত্ব পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। আসলে জাহাজ, বড় নৌকা গুলো পানির গভীরতা কম থাকায় তীরে ভিড়তে পারেনা। তাই পানি গভীর থাকে সবসময়, উপকূল থেকে এমন দূরত্ব পর্যন্ত ফিশিং পিয়ার তৈরী করা হয়। যেন জাহাজ, নৌকা গুলো সহজেই সেখানে ভিড়তে পারে এবং নোঙ্গর ফেলে অবস্থান করতে পারে। এখানে দাঁড়ালে কাপ্তাই লেকের দৃশ্য বেশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায়।

ছবি – সংগৃহীত

পলওয়েল পার্ক এর একেবারে শেষপ্রান্তে তৈরী করা হয়েছে লাভ পয়েন্ট। যদি হয়ে থাকেন কপোর-কপোতী তবে এই জায়গায় ছবি না তুলে যাবেন না। এছাড়াও পার্কটিতে রয়েছে পলওয়েল পার্ক কটেজ এবং সুইমিং পুল। লেকে ঘোরার জন্য বোটের ব্যবস্থা আছে, আছে জেট স্কিইং এর ব্যবস্থা, আছে কায়াকিং এর ব্যবস্থা। লেকের পার ঘেঁষে রাখা আছে বিচ চেয়ার। লেক আর পাহাড়ে সন্ধ্যা নামার দৃশ্য, আর লেকের মিষ্টি হাওয়া উপভোগ করতে করতে  শেষ বিকেলে এখানে বসতে পারেন আয়েশ করে।

রাঙামাটির অন্য সব গুলো স্পট থেকে কাছাকাছি হওয়ায় আপনি চাইলেই এই স্পটে ফেরার দিন ঘুরে যেতে পারেন। সারা দিন সময় কাটানোর মত একটি জায়গা। এতো অসাধারণ কিছু দৃশ্য এখান থেকে দেখা যায়, যা অন্য কোথা থেকে পাওয়া যায় না। আর পলওয়েল পার্ক রাঙামাটির একদম প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত। খুব সহজেই অটো রিক্সা নিয়ে চলে যাওয়া যায়।

এছাড়াও এখানে রয়েছে সু-বিশাল সুইমিংপুল। যা লেকের কোলঘেঁষে তৈরী হওয়ায় দেখতে অপরুপ লাগে। সুইমিংপুল এর সুবিধার জন্যে জনপ্রতি ২০০ টাকা গুনতে হবে।

যোগাযোগ

ডিসি বাংলো রোড, রাঙ্গামাটি সদর

ফোন নাম্বার – 01837-335595, 09613-500-900

ওয়েবসাইট – polwelpark.com

ই-মেইল – info@polwelpark.com

ফেইসবুক –  facebook.com/PolwelParkRmtOfficialPage/

যেভাবে যাবেন পলওয়েল পার্ক

ঢাকার ফকিরাপুল মোড় অথবা সায়দাবাদ থেকে রাঙামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টারের অবস্থান। সকল বাসই সকাল ৮.০০ হতে ৯.০০ টা এবং রাত ৮.৩০ হতে ১১.০০ এর মধ্যে ঢাকা ছাড়ে।

চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি

চট্রগ্রামের অক্সিজেন এলাকার রাঙামাটির বাস টার্মিনাল যেতে হবে। এখান থেকে আধ ঘন্টার ব্যবধানে আপনি পাবেন পাহাড়ীকা ও লোকাল বাস সার্ভিস। পাহাড়ীকা বাসে সময় লাগে আড়াই ঘন্টা এবং লোকাল বাসে ৩-সাড়ে ৩ ঘন্টা। সকাল ৭টা হতে রাত ৮টা পর্যন্ত পাওয়া যায় বাস। এছাড়া যারা আরামদায়ক ভ্রমন করতে চান, তাদের জন্য আছে বিলাস বহুল সার্ভিস এস. আলম, ইউনিক, হানিফ ও বিআরটিসি।

এছাড়া নিজস্ব গাড়ী অথবা ভাড়া করা মাইক্রো, কার, ক্যাব নিয়েও আপনি যেতে পারবেন রাঙামাটি। রাঙ্গামাটি রিজার্ভ বাজার থেকে ডিসি বাংলো বা পলওয়েল পার্ক এর দূরত্ব ১ কিঃমিঃ।

পলওয়েল পার্ক এর কটেজ ভাড়া

পলওয়েল পার্ক ঘুরে দেখার পাশাপাশি এখানে রয়েছে থাকার জন্য বেশ কিছু কটেজ। একদম লেকের প্রান্ত ঘেঁষে রয়েছে বেশ কয়টি কটেজ এবং সুইমিংপুল। রাঙামাটির অন্যতম সুন্দর ভিউ রয়েছে এই কটেজ গুলোর। হানিমুন কটেজের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ৬০০০ টাকা, ফ্যামিলি কটেজের ভাড়া ৮০০০ টাকা এবং VIP কটেজের ভাড়া নির্ধারন করা হয়েছে ১০০০০ টাকা প্রতিরাত।

পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত ইন্সপেক্টর থেকে তদুর্ধ কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের জন্যে কটেজে রয়েছে ৪০% ছাড়। এছাড়া সরকারি কর্মকর্তা এবং তাদের পরিবারের জন্যে রয়েছে ২০% ছাড়া।

এছাড়া রাঙামাটিতে পর্যটকদের থাকার জন্য বেশ কিছু ভালমানের হোটেল আছে যেমন, তেমনি আছে মাঝারি মানের হোটেলও। ভালোমানের হোটেলের মধ্যে হোটেল সুফিয়া, নীডস হিল ভিউ, মোটেল জর্জ, হোটেল গ্রীন ক্যাসেল, শাইনিং হিল গেষ্ট হাউজ, টুকটুক ইকো ভিলেজ, হোটেল আনিকা অন্যতম।

কমদামী হোটেলগুলোর মধ্যে আছে মধুমিতা, সৈকত, শাপলা, ডিগনিটি, সমতা, উল্লেখযোগ্য। এগুলো ভাড়া সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া পর্যটনের রয়েছে নিজস্ব মোটেল। ভাড়া ১২০০ থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত। রয়েছে ছোট ছোট কটেজ। কটেজগুলোর প্রতি রাতের ভাড়া ৩০০০-৫০০০ টাকা। সরকারি বিভিন্ন দফতরের রেষ্ট হাউস, গেষ্ট হাউস এবং বাংলোগুলো নির্ধারিত মূল্য পরিশোধ এবং অনুমতি সাপেক্ষে ভাড়া দেওয়া হয়।

 

শাহীন সুলতানা

Add comment