পবিত্র রমজান মাস আরবি মাসসমূহের মধ্যে নবম মাস। রোজা হচ্ছে ইসলামের তৃতীয় স্তম্ভ। এর আরবি পরিভাষা হচ্ছে সওম, বহুবচনে বলা হয় সিয়াম। সওম অর্থ বিরত থাকা, পরিত্যাগ করা। পরিভাষায় সওম হলো আল্লাহর সন্তুটি কামনায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তসহকারে পানাহার থেকে বিরত থাকা।
পবিত্র রমজান মাস ও ঘুরাঘুরি
আমরা যারা ঘুরাঘুরি করতে খুব বেশি পছন্দ করি তারা সব সময় চাই কোথাও না কোথাও ঘুরতে। রমজানে খাবার নিয়েও চিন্তায় থাকতে হয়না। তাই সময় অবস্থা ভেদে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আসা সম্ভব হয়। কোথাও শুনেছি জ্ঞান অর্জন এর সুন্দর ২ টি মাধ্যম – বই পড়ে এবং ভ্রমণ করে।
রমজান মাস ধর্মীয় অনুভূতির মাস আর এসময় যদি আমরা বিভিন্ন ধর্মীয় স্থান গুলিতে ভ্রমন করতে পারি তাহলে আমাদের ধর্মীয় জ্ঞান ও অনুভূতি ২ টি অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে।
পবিত্র রমজান মাস এ যেখানে ভ্রমণ করতে পারেন-
আমাদের বাংলাদেশে রয়েছে অনেক প্রাচীন মসজিদ, মাজার যা আমাদের দেশের ঐতিহ্য কে ধারন করে৷ সেই প্রাচীন মসজিদ বা মাজার গুলো থেকে আমরা অনেক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারি। যা ভ্রমণ পিপাসু দের জন্য এক অসাধারণ অনুভূতি। বাংলাদেশের প্রতিটি কোণায় কোণায় ভিন্ন ভিন্ন স্থাপত্যশৈলীর মসজিদ রয়েছে যা বর্ণনা করে শেষ করার মতো নয়। সেখান থেকে কিছু ঐতিহ্যবাহী মসজিদ এর নাম তুলে ধরা হলো।
১) ষাট গম্বুজ মসজিদঃ
বাংলা সালতানাতের সময় সুন্দরবনের গভর্নর খান জাহান আলী খুলনায় ষাট গম্বুজ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম স্মৃতিস্তম্ভগুলোর মধ্যে সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক মসজিদ এটি। এর গম্বুজ সংখ্যা ৮১টি। যা সাতটি সারিতে সাজানো ৭৭টি নিচু গম্বুজ। পাশাপাশি প্রতিটি কোণে রয়েছ একটি করে গম্বুজ। যা ধরে রাখতে মসজিদটির ভিতরে ৬০টি সরু পাথরের স্তম্ভ রয়েছে। এখানকার চারটি টাওয়ার থাকলেও আজান দেওয়া হতো দুটি টাওয়ারে। মসজিদটিতে একসঙ্গে প্রায় তিন হাজার মুসল্লি নামাজ পড়তে পারেন। ৬০টি সরু পাথরের স্তম্ভ দ্বারা মসজিদটি নির্মিত হওয়ায় একে ষাট গম্বুজ মসজিদ বলা হয়ে থাকে।
কিভাবে যাবেন
গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে সোহাগ, শাকুরা, হানিফ, কমফোর্ট লাইন, দোলা পরিবহন ও ইগল পরিবহণের গাড়ি ছাড়ে। এছাড়া ঢাকা থেকে খুলনাগামী আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা এসে সেখান থেকে বাসে বা সিএনজি তে করে করে ষাট গম্বুজ মসজিদ যেতে পারবেন। খুলনা থেকে সময় লাগবে এক থেকে দেড় ঘন্টার মত।
২) ছোট সোনা মসজিদ
বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন মসজিদ। প্রাচীন বাংলার রাজধানী গৌড় নগরীর উপকণ্ঠে পিরোজপুর গ্রামে এ স্থাপনাটি নির্মিত হয়েছিল, যা বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ থানার অধীনে পড়েছে। সুলতান আলাউদ্দিন হুসেন শাহ এর শাসনামলে (১৪৯৪-১৫১৯ খ্রিষ্টাব্দে) ওয়ালি মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তি এই মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। এর দৈর্ঘ্য ৮২ ফুট, প্রস্থ ৫২.৫ ফুট, গম্বুজসমূহ ১৫,উপাদানসমূহ পাথর, ইট, টেরাকোটা ও টাইল।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ বিভিন্ন ভাবে যেতে পারবেন। ঢাকা থেকে বাসে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে চাইলে রাজশাহী হয়ে কিংবা সরাসরি চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া যায়। তবে ঢাকা থেকে ট্রেন করে যেতে চাইলে আপনাকে আগে রাজশাহী এসে তারপর চাঁপাইনবাবগঞ্জ এতে হবে। হানিফ এবং শ্যামলী পরিবহনের বাসে রাজশাহী হয়ে সহজে চাঁপাইনবাবগঞ্জ যাওয়া যায়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে সিএনজি, অটোরিক্সা সরাসরি ছোট সোনা মসজিদে যেতে পারবেন।
৩) আতিয়া মসজিদ
বাংলাদেশের টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত একটি প্রাচীন ঐতিহাসিক মসজিদ যা বাংলাদেশের অন্যতম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এই মসজিদটি ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত হয়েছে এবং এখানে নিয়মিত জামাতে নামাজ আদায় করা হয়। মুহাম্মদ খাঁ নামক তৎকালীন এক প্রখ্যাত স্থপতি এই মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। রওশন খাতুন চৌধুরাণী ১৮৩৭ সালে এবং আবুল আহমেদ খান গজনবী ১৯০৯ সালে মসজিদটির সংস্কার করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রচলিত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক মুদ্রিত১০ (দশ) টাকা মূল্যমানের নোটের একপার্শ্বে আতিয়া মসজিদের ছবি রয়েছে।
কিভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলের দূরত্ব সড়ক পথে ৯০ কি।মি। মহাখালি বাস স্ট্যান্ড থেকে নিরালা সুপার, ঝটিকা, বিনিময় বিভিন্ন গাড়ি যায় ভাড়া ২০০-৩০০ টাকা । পুরাতন বাস স্ট্যান্ড নেমে সিএনজি করে যাওয়া যাবে বা ট্রেনে আসলে একই ভাবে যাওয়া যাবে।
৪) বজরা শাহী মসজিদ
এটি নোয়াখালীর নোয়াখালী মাইজদী শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার উত্তরে সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামে প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে অবস্থিত। এটিকে নোয়াখালীর ৩০০ বছরের পুরাতন মসজিদ হিসেবে ধরা হয়। মোঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহের রাজত্বকালে ১৭৪১-৪২ খ্রিস্টাব্দে মসজিদটি নির্মাণ করেন আমান উল্লাহ। ১৯১১ থেকে ১৯২৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে বজরা জমিদার খান বাহাদুর আলী আহমদ ও খান বাহাদুর মুজির উদ্দিন আহমদ মসজিদটি মেরামত করেছিলেন এবং সিরামিকের মোজাইক দিয়ে সাজিয়েছিলেন। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১১৬ ফুট, প্রস্থ প্রায় ৭৮ ফুট, এবং উচ্চতা প্রায় ২০ ফুট। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ এ স্থাপনার তত্ত্বাবধান করছে।
কিভাবে যাবেন
বাস কিংবা ট্রেনে চড়ে নোয়াখালীর মাইজদী এসে সোনাইমুড়ীগামী যেকোন লোকাল বাস, সিএনজি অথবা অটোরিক্সায় গেলে বজরা শাহী মসজিদে পৌঁছে যাবেন। অথবা বাসে করে বজরা বাস স্ট্যান্ড হতে রিক্সা কিংবা পায়ে হেঁটে বজরা শাহী মসজিদ কমপ্লেক্সে যাওয়া যায়।
৫) রাজশাহীর বাঘা মসজিদঃ
যা হোসেন শাহী রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ নির্মাণ করেন। মসজিদটিতে রয়েছে মোট ১০টি গম্বুজ, চারটি মিনার ও পাঁচটি প্রবেশপথ। ২৫৬ বিঘা জমির উপর নির্মিত মসজিদের গম্বুজ ভেঙে গেলে ১৮৯৭ সালে মসজিদটি পুনর্নির্মাণ করা হয়। বাঘা মসজিদের মসজিদের ভেতরে ও বাইরে সর্বত্রই টেরাকোটার নকশা। দৈর্ঘ্য ৭৫ ফুট প্রস্থ ৪২ ফুট, উচ্চতা ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি। দেয়াল চওড়া ৮ ফুট গম্বুজের ব্যাস ৪২ ফুট, উচ্চতা ১২ ফুট। চৌচালা গম্বুজের ব্যাস ২০ ফুট উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। বাঘার মসজিদের অনিন্দ্য সুন্দর কারুকাজের জন্য এটি ২২ আগস্ট ১৯৯৯ সালে পঞ্চাশ টাকার নোটে এটি স্থান পেয়েছে।
কিভাবে যাবেন
রাজশাহী সদর বাস টার্মিনাল থেকে বাঘা যাওয়ার বাস বিভিন্ন বাস ছাড়ে। সেগুলোতে বাঘা যেতে জনপ্রতি ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ভাড়া লাগে। এছাড়া সিএনজি ভাড়া বা রিজার্ভ নিয়ে বাঘা মসজিদ দেখতে যেতে পারবেন।
কন্টেন্ট রাইটার- শুভ্র দে সরকার
Shottii jete iccha korche .. khub shundor bornona…addhatikotar alada ekta charm roeche…
[…] শুরু হয়। চান্দ্রবছরের নবম মাস রমজান, যা আমরা সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পার করি, […]