নৌকাবাইচ খেলা বাংলার ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আজকে আমরা জানব বাংলাদেশের প্রাচীন এক খেলা – নৌকাবাইচ সম্পর্কে।
বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ খেলা
বর্তমানে এই খেলার উপস্থিতি টেলিভিশনে দেখা গেলেও একসময়ে এই খেলার বেশ দাপট ছিল। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই খেলা বিলুপ্তপ্রায়। এই খেলা সম্পর্কে জানবার আগে জেনে আসি এর রঙিন ইতিহাস।
ফিরে দেখি ইতিহাস
খেলার আগমন সেই মোঘল আমলে, নবাবদের শাসনামলে। ১৮শ শতাব্দীতে শহরাঞ্চলে এই খেলার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। মোঘল নবাবরা অনেকেই প্রায়শই এই খেলার আয়োজন করতেন। সেসময়ে নৌকাবাইচের সাথে সারি গানেরও জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। বর্ষা মৌসুমে এই খেলার জনপ্রিয়তা বেড়ে যেত কয়েকগুণ। ব্রিটিশ শাসনামলে সিলেট জেলায় এই খেলার প্রচলন ছিল সবচেয়ে বেশি। নৌকাবাইচের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য – একেক জেলায় একেক রকম নৌকা তৈরি হত এই খেলার জন্য।
ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং পাবনা জেলায় বানানো হত সোজা তলের সরু কাঠের “কোশা” নৌকা। দ্বিতীয় রকমের নাম “গোয়েনা” । “সারঙ্গি” নৌকা তৈরি হত সিলেট, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। “সাম্পান” তৈরি হত চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও ফেনী জেলায়।
২০০৭ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ডশায়ার কাউন্টির শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ব্রিটিশ বাঙালিরা দুইটি ৪০ ফুট নৌকা দিয়ে প্রবাসে নৌকাবাইচের প্রচলন করেন। নৌকা দুইটি বাংলাদেশের সিলেটে তৈরি করে ইংল্যান্ডে নেয়া হয়েছিল।
খেলার আমেজ ও নিয়মকানুন
বাংলাদেশের নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে এই নৌকাবাইচ এখন তেমন চোখে পরে না। তবে বর্ষাকালে এখনও কিছু জেলায় এই খেলার আয়োজন করা হয়। ২০-৩০ ফুট লম্বা, ড্রাগন ধরনের নৌকায় ৭, ২৫, ৫০ কিংবা ১০০জন মাঝি বা খেলোয়াড় এই খেলায় অংশগ্রহন করেন, মাঝখানে থাকেন একজন নির্দেশক। খেলার সময়ে খেলোয়াড়গণ সারি গান ধরে, যেগুলো তাদেরকে স্পৃহা যোগায়। দুইটি দলের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে, জাতীয় প্রতিযোগিতায় দুই নৌকার মধ্যে কমপক্ষে ৬৫০ মিটারের দূরত্ব থাকতে হবে, স্থানীয় প্রতিযোগিতায় সেই দূরত্ব কমপক্ষে ১০ মিটার। খেলার সময়ে এক নৌকা অন্য নৌকাকে স্পর্শ করতে পারবে না। কোন কারণে যদি প্রতিযোগীতা শুরুর পর ১০০ মিটারের মধ্যে কোন নৌকা অপর নৌকার সাথে ধাক্কা খায় তাহলে আবার নৌকাগুলোকা ফিরিয়ে আনা হবে এবং নতুন করে প্রতিযোগীতা শুরু হবে। প্রতি নৌকার খেলোয়াড় সংখ্যা পূর্বেই কর্তৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত হয়ে থাকে।
নৌকাবাইচ খেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে অলিম্পিক প্রতিযোগিতায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই খেলাকে। বিভিন্ন গ্রামে এই খেলাকে কেন্দ্র করে মেলাও বসে যায়। বাংলাদেশের জনপ্রিয় টিভি ব্যাক্তিত্ব শাইখ সিরাজ তার হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে এই নৌকাবাইচের আয়োজন করে থাকেন।
Add comment