Porjotonlipi

দেবালয়টেকের ১০০ বটগাছ

সোনর একটি গ্রাম যেখানে পাবেন দেবালয়টেকের ১০০ বটগাছ এর দেখা। এটি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার একটি গ্রাম। বাংলাদেশের আর পাঁচটা সাধারণ গ্রামের মতোই দৃশ্য এই গ্রামটিরও।

অভূতপূর্ব দেবালয়টেকের ১০০ বটগাছ এর পথে

সবুজে মোড়ানো, পাখপাখালির কলকাকলীতে মুখর অতি সাধারণ দৃশ্য এখানকার। কিন্তু এই সাধারণতার মাঝেই এক অনন্য এবং অদ্ভুত নিদর্শনের জন্যে গ্রামটি হয়ে উঠেছে অসাধারণ।

মনোমুগ্ধকর গ্রামীণ পরিবেশ

গ্রামটির ঠিক মাঝ বরাবর চলে গিয়েছে ছোট্ট একটি পাকা রাস্তা। রাস্তার একপাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধানের ক্ষেত আর একপাশে ছোট বড় সারিবদ্ধ পুকুর। এই পুকুরগুলোর পাশে দাঁড়ালে পুকুরের পানিতে মাছেদের ঝাঁকে ঝাঁকে ছুটে চলা আপনাকে মুগ্ধ করবে।

দেবালয়টেকের বটবৃক্ষ

গ্রামের প্রধান রাস্তা থেকে এই পুকুরের পাড় ধরে চলে গিয়েছে একটি পায়ে হাঁটা পথ। আর এই পথটি ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই পুকুরের পুর্ব পাশে দেখা মিলবে সোনর গ্রামের বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠের মাঝে দেবালয়টেকে প্রায় তিন বিঘা জায়গাজুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি শতবর্ষী বটগাছের। গাছটির ঝুরিমূল থেকে সৃষ্টি হয়েছে আরো অনেকগুলো বিভিন্ন আকারের বটগাছ। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছটির পরিধিও বেড়েছে। এই বটগাছগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট হল এরা সকলে সকলের সাথে কোন না কোন ভাবে মিশে আছে। গাছগুলো পরস্পরের সাথে এমন ভাবেই জড়িয়ে রয়েছে যে, আলাদা করে বোঝার কোন উপায় নাই কোনটা কোন গাছের মূল। দেখা গেল একটি গাছের ডাল বলে আপনি যেটাকে ভাবছেন সেটা অন্য গাছেরও ডাল। মানে এরা প্রত্যেকে একে অপরের সাথে এমন ভাবে জড়িয়ে আছে যে, কাওকে আলাদা ভাবে চেনা যায় না। যেন পরম বন্ধুর মতো গলা জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে তারা, দিগন্তের পানে বিস্তৃত হয়ে।

আকৃতিগত বৈশিষ্ট্য

দেবালয়টেকের এই বটগাছগুলো আকৃতিগতভাবে কিছুটা অদ্ভুত গড়নের। কোথাও এর আকৃতি এমন যে দেখলে আপনার কাছে মনে হবে একটা গেইটের মতো। যেন এটাই এই দেবালয়টেকের মূল প্রবেশদ্বার। আবার কোথাওবা এর গঠন অনেকটা আরাম কেদারার মতো। আপনার যেন মনে হবে এখানে পা দুলিয়ে আরাম করে বসে একটু পাখির কুজন শুনি। ভীষণ ভালো লাগার মতো এই এলাকাটা। জন মানবহীন এমন নির্জনতায় বসে পাখির কুজন শুনতে ভালো লাগবে না কার?

টেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য

এখানে বসেই দেখা যাবে জাতীয় পাখি দোয়েলদের ব্যাপক আনাগোনা। বটের পাতার ফাঁকে ইতিউতি দেখা যাবে স্ত্রী কোকিলদের বট ফল খাওয়ার চিত্র। অথবা দেখা যাবে বুলবুলিদের অলস বেলা কাটানোর দৃশ্য। পথের ধারের সন বনে দেখা মিলবে রঙবেরঙা ফড়িংদের। শেষ বিকালের সূর্য্যের আলোয় পুকুরের পানিকে মনে হবে যেন গোলানো সোনা।

নামকরণের প্রচলিত ইতিহাস ও বাৎসরিক মেলা

কথিত আছে, দেবালয়টেকের এই গাছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দেব-দেবী থাকে। আর সম্ভবত একারনেই জায়গাটির নামকরণ করা হয়েছে দেবালয়টেক। কেউ যদি এই গাছের কোনো অংশ কাটে তাহলে সে মারা যায়। বহু আগে থেকেই প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ মাসের ২ তারিখে এই গাছের তলে গ্রামীন মেলা বসে।

শত বটের নিরব-নিস্তব্ধতা

অতীতে এই দেবালয়টেকে ছিলো মাত্র কয়েকটা বট গাছ। এখন সে গাছ বিস্তার লাভ করেছে বেশ। তবে জায়গাটা দিনের বেলাতেও খুবই নিস্তব্ধ, শুনশান। আর রাত হলেতো কথাই নেই। চারদিক গ্রাস করে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা। এখানে তেমন কেউ থাকেনা বললেই চলে। টেকের ভেতর দিয়ে ছুটে গেছে ছোট একটা মেঠোপথ। মাঝে মধ্যে কয়েকটা মানুষ এ গ্রাম থেকে ও গ্রামে যেতে পারাপার করে এই রাস্তায়। তবে সন্ধ্যে নামার পর সাধারণত কেউ আর চলাচল করে না এই দেবালয়টেকের ভেতরের পথ দিয়ে। আর হ্যাঁ, পুরানো এসব গাছপালা ছাড়াও এখানে রয়েছে আরও অন্যান্য গাছ-গাছরা ও বাঁশঝার। আর রয়েছে টলটলে পানির বেশ কয়েকটি জলাধার। প্রকৃতিপ্রেমিক হলে আপনি চাইলেই ঘুরে দেখে আসতে পারেন দেবালয়টেকের এই শত বটবৃক্ষের মেলা।

যেভাবে যাবেন

ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে প্রথমে যেতে হবে নরসিংদীর পাঁচদোনা বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে সোনরে পৌছতে রিকশায় সময় লাগবে ১০ মিনিট। রিকশা থেকে নেমে মেঠো পথে দুই মিনিট হাঁটলেই আপনি পৌছে যাবেন দেবালয়টেকে।

কন্টেন্ট রাইটার- ফাহিম সাদেক সৌরভ

 

Porjotonlipi

Add comment