বাংলার অপার সৌন্দর্যের এক ভিন্ন রূপ পরিলক্ষিত হয় যে স্থানে তার নাম হলো দুর্গাপুর । উল্লেখ্য যে, বিরিশিরি নামে আমরা যে স্থানটিকে বুঝি সেটাই আসলে দুর্গাপুর এবং বিজয়পুর এর চীনামাটির পাহাড়। পর্যটনলিপির নিয়মিত প্রয়াসে আজকে আমরা জানব, দুর্গাপুরের চীনামাটির পাহাড় সম্পর্কে।
দুর্গাপুর এর চীনামাটির পাহাড় ( বিরিশিরি )
অবস্থান
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে প্রায় ৭ কি. মি. উত্তর পশ্চিমে কুল্লাগরা ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় অবস্থিত বিজয়পুরের সাদামাটি অঞ্ল। এটি বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ সাদামাটির খনিজ সম্পদের অঞ্চল। এটি প্রায় ১৫.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ৬০০ মিটার প্রস্থ খনি সম্পদ অঞ্চল। এখানে রয়েছে ছোট বড় টিলা, সমতল ভূমি ও পাহাড়। খনিজ সম্পদ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী হাজার ১৯৫৭ সালে এই অঞ্চলে সাদা মাটির পরিমাণ ধরা হয় ২৪ লক্ষ ৭০ হাজার মেট্রিক টন যা বাংলাদেশের তিন শত বছরের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
ইতিহাস
চিনামাটির প্রাচীন ইতিহাস সঠিক না জানা গেলেও এই দুর্গাপুর এর ইতিহাস বেশি প্রাচীন নয়। ১৯৫৭ সালে প্রথম এই মাটি উত্তোলন এই কাজ শুরু হয়, ১৯৬০ সালে সর্বপ্রথম কোহিনূর অ্যালুমিনিয়াম ওয়ার্কার্স নামে একটি প্রতষ্ঠান এই সাদামাটি উত্তোলন এর কাজ শুরু করে। পরবর্তী সময় ১৯৭৩ সালে BCIC সাদামাটি উত্তোলনের কাজে যোগ দেয়, এখন প্রায় ৯ টি কোম্পানি এই মাটি উত্তোলন কাজ করছে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য
দুর্গাপুরের বিভিন্ন রং এর মাটি এবং পানি সাথে সাথে প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য যেকারো মন কে বিমোহিত করতে পারে।সাদা, গোলাপী, হলুদ, বেগুনি, খয়েরী, নীলাভ বিভিন্ন রং এর মাটি এর পাহাড় চোখ কে জুড়িয়ে দেয়। এজেনো এক বিরল সৌন্দর্য। এছাড়া সাদা মাটির পাহাড়ের গা ঘেঁষে রয়েছে সবুজ ও নীল পানির লেক।আরো রয়েছে রানিক্ষ মিশনারী খ্রিস্টান ক্যাম্প ও বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্প, আরও দেখতে পাবেন বাংলাদেশ ভারত সীমান্ত ঘেসা উঁচু গারো পাহাড, কমলা বাগান, সোমেশ্বরী নদী, ফান্দা ভালী ও বিরিশিরি কালচার একাডেমী।
কিভাবে যাবেন বিরিশিরি দুর্গাপুর
ঢাকা থেকে দুর্গাপুর যেতে হলে সবথেকে ভালো হবে যদি নাইট কোচ সার্ভিস বেছে নেন। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ এরপর ময়মনসিংহ ভায়া শামগঞ্জ দুর্গাপুর অথবা ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোনা, নেত্রকোনা থেকে দুর্গাপুর এরপর সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিক্সা বা মোটরবাইক যোগে আধা কাঁচা আধাপাকা রাস্তা দিয়ে বিজয়পুর এর সাদা মাটির অঞ্চলে যাওয়া যায়। এর যদি ট্রেন এ করে যেতে চান, তবে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোর ৪.৪৫ মিনিটে বলাকা কমিউটার ছেড়ে যায় ময়মনসিংহ হয়ে জারিয়ার উদ্দেশ্যে। ট্রেন থেকে নেমে পেয়ে যাবেন সি এন জি, লেগুনা, মহিন্দ্রা কিংবা ভাড়ায় চলা মোটরসাইকেল যাতে করে আপনি অতি সহজেই পৌঁছে যেতে পারবেন দুর্গাপুর।
আর এখানে থাকার মত ভালো মনের বেশ কয়েকটি গেস্ট হাউজ ও রয়েছে ৷ এখানকার থাকার হোটেলগুলোর ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু কর ৩০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে ৷
অনুরোধ
বাংলাদেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আমাদের উচিত বাংলাদেশের এসকল পর্যটন কেন্দ্রে ঘুরতে গিয়ে এখানে ওখানে ময়লা ফেলে একে দূষিত না করা। এটি আমাদের পর্যটন অঞ্চলগুলোর সৌন্দর্য যেমন নষ্ট করে তেমনি বিদেশী পর্যটকদেরকেও নিরুৎসাহিত করে এদেশ ভ্রমণ করতে। অতএব, আমাদের সকলের দায়িত্ব এই সকল পর্যটন কেন্দ্রসমূহকে পরিচ্ছন্ন রেখে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের পর্যটনশিল্পকে আরও প্রস্ফুটিত করা।
কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর তাসমিয়া তাহারাত সৌখিন
চমৎকার পোস্ট হয়েছে। চীনামাটির পাহাড়ের এই ইতিহাসটুকু অন্য কোথাও পাচ্ছিলাম না। ধন্যবাদ।
প্রশ্ন: নয়টি কোম্পানীর মাটি উত্তোলন কাজ কি এখনও চলমান? সেরকম কিছু চোখে পড়ল না।