থানচি উপজেলার সৌন্দর্য্য বোঝার জন্য এই লেখাটি অবশ্যই যথেষ্ট নয়। বান্দরবান জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা হল থানচি। সাকা হাফং, নাফাখুম জলপ্রপাত, বড় পাথর বা রাজা পাথর, বাকলাই জলপ্রপাত, ছোট পাথর (তিন্দু) সহ অনেক দর্শনীয় স্থান এই থানচি উপজেলার অন্তর্গত।
থানচি উপজেলার কিছু কথা
আয়তনের দিক থেকে বান্দরবান জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা থানচি। থানচি উপজেলার আয়তন ১০২০.৮২ বর্গ কিলোমিটার (২,৫২,২৫০ একর)। দক্ষিণ-পূর্বাংশ জুড়ে ২১°১৫´ থেকে ২১°৫৭´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯২°২০´ থেকে ৯২°৪১´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে থানচি উপজেলার অবস্থান। এ উপজেলার দূরত্ব বান্দরবান জেলা সদর থেকে প্রায় ৮৫ কিলোমিটার।
থানচি উপজেলার নামকরণের ইতিহাস
১৯৫০ সালের দিকে অথবা তার পূর্বে নৌপথে চলাচল কালে যাত্রীগণ বিশ্রামের জন্য এ স্থানে থামতেন বলে থাইন চৈ নামে স্থানটি পরিচিত ছিল, পরে তা থানচি হিসাবে পরিচিতি লাভ করে। মারমা শব্দ থাইন চৈ বা বিশ্রামের স্থান থেকে থানচি নামটির উৎপত্তি।
থানচি এলাকার ব্যবস্থাসমূহ
১৯৭৬ সালে থানচি থানা প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় প্রতিস্থাপন করা হয়।থানচি উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক হল বান্দরবান-থানচি সড়ক। প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম বাস।থানচি উপজেলার প্রধান হাট-বাজার ২টি, থানচি বাজার এবং বলিপাড়া বাজার।
জনগোষ্ঠী
থানচি উপজেলায় মার্মা, চাকমা, খেয়াং, ত্রিপুরা, খুমী, খিও, ম্রো ও বম উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।২০১১ সালের আদমশুমারী অনুযায়ী অনুযায়ী থানচি উপজেলার মোট জনসংখ্যা ২৩,৫৯১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২,৩৪৪ জন এবং মহিলা ১১,১৪৭ জন।
নাফাখুমের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য
পানির প্রচণ্ড আঘাতে ঝরনার চারপাশে অনেকটা স্থানজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে ঘন কুয়াশা আর এই পানি প্রায় ৩০ ফুট ওপর থেকে আছড়ে পড়ে। সূর্যের আলো এই জলপ্রবাহের খেলায় সৃষ্টি করেছে রংধনু। চারদিকে বড় বড় পাহাড়। নদীতে ছড়ানো অজস্র পাথর। পাথরগুলো যেন এক-একটি ভাস্কর্য। এমন দৃশ্য বান্দরবানের থানচি উপজেলার রেমাক্রির নাফাখুম জলপ্রপাতের প্রতিচ্ছবি।
রেমাক্রি ঝর্ণা
শঙ্খ নদীর একটি উপখাল হল রেমাক্রী। এ খাল যেখানে ঝরণা আকারে শঙ্খ নদীতে এসে মিশেছে সেখানে অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি হয়েছে। রেমাক্রীর খালের পানি ও ঝরণার গান আর অরণ্য মিলেমিশে এক অপরূপ সৌন্দর্য সৃষ্টি হয় ।
যোগী পাহাড় ও গুহার গল্প
থানচি উপজেলা সদর থেকে ৪৫ কিলোমিটার দুরে মিয়ানমারের সীমান্তে উঁচু পাহাড়। রেমাক্রী মৌজার কালু ত্রিপুরা পাড়ার থেকে প্রায় চার ঘন্টা পায়ে হেঁটে এ পাহাড়ে যাওয়া যায়। এ পাহাড়ে একটি পাথরের গুহা রয়েছে। এ পাহাড় থেকে মিয়ানমারের পিক্ষ্যং নদী ও বাংলাদেশের শঙ্খ উপত্যকার মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখা যায়।
ড্যতং পাহাড়ের সৌন্দর্য
রেমাক্রী খালে উৎসস্থলের কাছাকাছি একটি পাহাড়। প্রায় চার-পাঁচশ’ ফুট ভয়ঙ্কর খাড়া পাথরের দেওয়াল পরিবেষ্টিত পাহাড়ের চারিদিক । পাহাড়ের পশ্চিম পাশে শুধুমাত্র একটি সংকীর্ণ পাথুরে পথে সিঁড়ি দিয়ে যাওয়া যায়। আগে এ পাহাড়ে বুনো হাতি, শুকরসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ছিল। থানচি উপজেলা সদর থেকে পূর্বদিকে রেংসম ম্রো পাড়ার পথে ড্যতং যাওয়া যায়।
ভূতের আয়না বা রুক্ষামাইনের গল্প
রেমাক্রী খালের ওপর পতিত রেমাপো ছড়ায় মিয়ানমারের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় অবস্থিত একটি স্বচ্ছ খাড়া পাথুরে পাহাড়। এ পাথুরে পাহাড়টিতে সবসময় আলৌকিকভাবে আলো জ্বলে এবং এটি ভূতের বাসস্থান বলে স্থানীয় ত্রিপুরা আদিবাসীদের বিশ্বাস।
কিভাবে যাবেন
বান্দরবান থেকে বাসে করে থানচি যেতে হবে । থানচি থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকা করে রেমাক্রি বাজার, সেখান থেকে নৌকা করে কিংবা হেঁটে যেতে হবে নাফাখুম। থানচি থেকে গাইড নিয়ে গেলে বেশি ভালো হবে ।
Add comment