Porjotonlipi

তুরস্ক – সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের দেশ

তুরস্ক পশ্চিম এশিয়া ও দক্ষিনপূর্ব ইউরোপের একটি রাষ্ট্র, যার সরকারী নাম প্রজাতন্ত্রী তুরস্ক। তুরস্কের ইতিহাস দীর্ঘ ও ঘটনাবহুল। পর্যটনলিপির আজকের আয়োজনে আমরা জানব তুরস্কের সংস্কৃতি, ঘুরে দেখার জায়গা, এবং মুখরোচক খাবার সম্পর্কে। 

ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক যেই তুরস্ক

প্রাচীনকাল থেকে বহু বিচিত্র ও সংস্কৃতির জাতি এলাকাটি দখল করেছে, তাই সমাবেশ ঘটেছে বিচিত্র খাদ্যাভ্যাস, জীবন বৈচিত্র্য আর সংস্কৃতির যেটি দেশটিকে মানুষের কাছে করে তুলেছে আকর্ষনীয়। এছাড়া দেশটির কিছু অংশ পশ্চিম এশিয়া এবং কিছু অংশ দক্ষিন পূর্ব ইউরোপে হওয়ার কারনে ও বৈচিত্রময় সংস্কৃতি পরিলক্ষিত হয়।

মসজিদ ও তুরস্ক 

২০২১ সালের তথ্যমতে, তুরস্কে ৮২,৬৯৩ টি মসজিদ আছে। মুসলিম প্রধান দেশ হওয়ায় তুরস্কে মসজিদের সংখ্যা অনেক বেশি। তুরস্কের সবচেয়ে বড় মসজিদ ব্লু মসজিদ।  দৃষ্টিনন্দন নীল গম্বুজ ও মসজিদের দেয়ালের নীল রঙের টাইলসের কারণে এটি ‘ব্লু  মস্ক’ বা ‘নীল মসজিদ’ নামে পরিচত।

অবশ্য এর অফিসিয়াল নাম “সুলতান আহমেদ মসজিদ”। উসমানি সুলতান প্রথম আহমেদ ১৬০৯ থেকে ১৬১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে মসজিদটি নির্মান করেন। মসজিদটিতে মুসলমানদের ধারন ক্ষমতা প্রায় দশ হাজার। 

সুলেমানীয়া মসজিদ

তুরস্কের সবচেয়ে বড় ও সুন্দর মসজিদের মধ্যে এই মসজিদ উল্লেখযোগ্য। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সাতটি পাহাড়ের মাঝে একটি মুকুট। এছাড়া মসজিদের সাথে হাম্মামখানা (গোসলখানা), হাসপাতাল ও সুলেয়মানীয়ের সমাধি দেখতে পাবেন।

আয়া সোফিয়া

ইস্তাম্বুলের বিশেষ কিছু স্মৃতিস্তম্ভের মধ্যে আয়া সোফিয়া গুরুত্বপূর্ন। মহান সম্রাট বাইজেন্টাইন অনুমোদিত এই ভবন ৫৩৭ সাল পর্যন্ত চার্চ হিসেবে পরিচিত ছিল। পরবর্তীতে ১৪৫৩ সালে সুলতানের নির্দেশে চার্চটিকে মসজিদে রুপান্তর করা হয়। ১৯৩৫ সালে এই ভবনের স্থাপত্য শিল্প, সমৃদ্ধ ইতিহাস,ধর্মীয় গুরুত্ব ও অসাধারন সৌন্দর্যের জন্য কামাল আতাতুর্ক এই মসজিদকে জাদুঘরে রুপান্তর করেন। ভবনের নিচের তলা মূলত জাদুঘরের প্রধান ভবন। এখানের ডোম, বড় একটি গির্জার প্রধান অংশ, ও স্বর্ণের মোজাইক পর্যটকদের জন্য প্রধান আকর্ষন। 

শুধু দেশে নয়, দেশের বাইরেও মসজিদ প্রতিষ্ঠা করছে তুর্কী সরকার। পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতিতে ২০১৯ সালে বড় একটি মসজিদ নির্মাণ হয় তুর্কী অর্থায়নে। প্রায় দশ হাজার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে নির্মিত মসজিদটিতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ একসাথে নামাজ পড়তে পারবে। জিবুতি মুসলিম প্রধান দেশ বলেই নয়, অন্য অনেক দেশেও একই উদ্যোগ নিয়েছে তুরস্ক। ২০১৫ সালে রাশিয়ার রাজধানী মস্কো’র কেন্দ্রিয় মসজিদ হিসেবে পরিচিত মস্কো সেন্ট্রাল মস্ক পুণনির্মাণ করা হয়। মস্কোর অলিম্পিয়াস্কি অ্যাভিনিউতে অবস্থিত মসজিদটিতে একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারে ১০ হাজার মুসল্লি। মসজিদটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ১০৯ মিলিয়ন ইউরো। ছয় তলা বিশিষ্ট এই মসজিদটি নির্মাণে উদ্যোক্তা ও খরচের একটি অংশ বহন করেছে তুরস্কের দিয়ানেত ফাউন্ডেশন

তুরস্কের খাদ্যাভ্যাস ও ইফতার

তুর্কিরা সাধারণত ইফতারে তাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার খেতে পছন্দ করে। সে কারণেই দেশটির ঐতিহ্যবাহী সব খাবার খাওয়ার জন্য রমজান মাসই হলো সবচেয়ে ভালো সময়। সারাদিন রোজা রাখার পর ইফতারিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বসে ঐতিহ্যবাহী সব খাবার খাওয়া একটি সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। ইফতারের আয়োজন থাকে বেশ জমকালো।

ইফতারের তালিকায় থাকে বিখ্যাত “পিডে” নামক গরম ও তাজা রুটি (পিঠা), খেজুর, খাবার টেবিলে অবশ্যই থাকবে স্যুপ (সরবা), সালাদ (পাতা কপি, বেগুনী বাঁধা কপি, গাজর, পেঁয়াজ, ঝালবিহীন সবুজ ও লাল মরিচ, মাইডানোজ, নানে অর্থাৎ পুদিনা পাতা, জয়তুনের তৈল, ভিনেগার বা লেবুর রস, কেচাপ, সরিষা, কিবিরজিক ইপরা/মুরাল অথাৎ কোঁকড়ানো পাতা-লেটুস, ললরোসো ইপরা, সেমিজতু, রোকা দেমেত, দেরেওত, কুজু কুলাই), আসলে সালাদ তৈরির জন্য পুদিনা পাতার মতো হরেক রকমের পাতা তথা সবজি রয়েছে। শশা ও দই দিয়েও এক ধরনের সালাদ তৈরি করা হয়।

ইফতারে তুরস্কের ঐতিহ্যবাহী খাবারের ধারাবাহিকতা চলতেই থাকে। তা হলো- ভাত, মাংসের কিমা (বিভিন্ন সবজি দিয়ে রান্না), খোপতে (মিটবল), পাস্তিরমাহ (মসলাই গরুর মাংস), মশলাদার গরুর মাংসের পাতলা স্লাইস, মসলাদার সসেজ, টমেটো ও শশা, কাজু তান্দির বা তন্দুর করা ভেড়ার মাংস, হানকার বেগেন্ডি, মানতি বা তুর্কির বিশেষ প্রক্রিয়ার রান্না করা ডাম্পলিংস।

তুর্কী্র মানুষেরা মিশতে ভীষন পছন্দ করেন। দেখা হলে কিংবা ভালো লাগলে পেয়ে যেতে পারেন চা কিংবা খাওয়ার নিমন্ত্রন। তারা মানুষকে বুকে টেনে নিতে ভালোবাসে। কোন সাহায্য লাগলে তুর্কিরা এগিয়ে আসে। রাস্তায় কোন অসুবিধা হলে ওরাই এসে জানতে চাইবে কোন সাহায্য লাগবে কি না। বিশেষ করে বিদেশিদের সাহায্য করাটা ওরা দেখে ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে। 

যেই জায়গাগুলো অবশ্যই যাবেন তুরস্ক গেলে

তুরস্কের কেন্দ্রীয় এনাটোনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত কাপাদোকিয়া। এখানকার রুপকথা, নিরিবিলি পরিবেশ আর প্রাকৃতিক সোন্দর্যের জন্য অনেক পর্যটকদের পছন্দের শীর্ষে তুরস্কের কাপাদোকিয়া শহর। এখানকার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে আছে লুনার ল্যান্ডস্কেপ,মাটির নিচের শহর, গুহার ভিতরের চার্চ ও হট এয়ার বেলুন। জুন, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাস কাপাদোকিয়া যাওয়ার উপযুক্ত সময়। কারন এই সময়টাতে গরম কম থাকে আর রাতে বেশ ঠান্ডা থাকে। আর এপ্রিলের প্রথম দিকে প্রচণ্ড বাতাস থাকার কারনে হট এয়ার বেলুনে তেমন মজা নিতে পারবেন না। তাই যাওয়ার ক্ষেত্রে এপ্রিলের মাসের সময়টা এড়িয়ে চলুন। 

তুরস্কের ভিসা

ইস্তানবুলে যাওয়ার জন্য ই-ভিসার ব্যবস্থা আছে। সেই ক্ষেত্রে সাথে সেনজেন ভিসা বা ভ্যালিড ইউ এস ভিসা লাগবে। আর এখানে যাদের রেসিডেন্স পারমিট নেই তাদের ক্ষেত্রে বিমানের রিটার্ণ টিকেট এবং হোটেল বুকিং এর প্রুফ দিতে হবে। খরচ হতে পারে নয় থেকে দশহাজার টাকা। অনলাইনে মাস্টারকার্ড বা ভিসা কার্ড থাকলে তখনই পেমেন্ট করে দেওয়া যাবে। আর ফিরতি ইমেইলে ভিসা চলে আসবে। সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট করে নিলেই হবে। আর সাধারনত ১৮০ দিনের মেয়াদ থাকে ভিসার আর ৩০ দিনের বেশি তুরস্কে থাকা যাবে না। 

ভ্রমন খরচ

ইস্তানবুল থেকে বিমানে কাপাদোকিয়াযেতে ৮০০০-১১০০০ টাকা খরচ হয়। আর এখানের মূল আকর্ষন হট এয়ার বেলুনের জন্য আলাদা খরচ আছে। আর এই রাইডের খরচ নির্ভর করে কবে ও কতক্ষন এই রাইডে থাকবেন। আর পিক সিজন হলে দাম অনেক বেশী হয়। তবে সাধারনত বাংলাদেশী টাকায় ২৫০০-৩০০০ এর মধ্যে হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে বাংলাদেশ থেকে ইস্তানবুল হয়ে কাপাদোকিয়া যেতে ৫ দিন ৪ রাতের জন্য বিমান ভাড়া সহ ১২,০০,০০-১৫,০০,০০ টাকা এর মত খরচ পড়বে।

 

কন্টেন্ট রাইটারঃ মোঃ সাব্বির উদ্দিন

 

Porjotonlipi Desk

1 comment