তাজহাট জমিদার বাড়ি বর্তমান কৃষি ইনস্টিটিউটের পাশে সবুজ গাছপালা পরিবেষ্টিত আর্কষর্ণীয় পরিবেশে অবস্থিত। বর্তমান তাজহাট বাজার হতে উত্তর দিক দিয়ে প্রধান ফটক অতিক্রম করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে কয়েকশ’গজ পেরিয়ে জমিদার বাড়ির প্রধান প্রবেশ পথে আসা যায়। জমিদার বাড়ির সামনে রয়েছে সমসাময়িককালে খননকৃত বিশাল আকৃতির ৪টি পুকুর।
ঐতিহাসিক তাজহাট জমিদার বাড়ি
তাজহাট জমিদার বাড়ি নিয়ে কিছু কথা
তাজহাট জমিদার মূলত গোবিন্দ লালের পুত্র গোপাল লাল এর সাথে সর্ম্পকযুক্ত যা স্থানীয়ভাবে তাজহাট জমিদার নামে পরিচিত। প্রকৃতপক্ষে এ বংশের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মান্না লাল রায়। তিনি সেই সুদূর পাঞ্চাব হতে রংপুরের সমৃদ্ধ স্থান মাহিগঞ্জে স্বর্ণ ব্যবসা করার জন্য এসেছিলেন।
প্রাচীন রংপুরের ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, রংপুরের মাহিগঞ্জে মান্না লাল রায় এসেছিলেন হীরা, জহরত ও স্বর্ণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে। প্রথম দিকে তিনি বহু রকমের নামী দামী হীরা, মানিক জহরত খচিত তাজ বা টুপির ব্যবসা করেছিলেন। আর সেই তাজ বিক্রির লক্ষে এখানে হাট বসে যা এক সময়ে এসে বিরাট প্রসিদ্ধি লাভ করে এবং এই হাটকে কেন্দ্র করে এই জমিদারবাড়ীর নামকরণ করা হয় তাজহাট জমিদার বাড়ি।
যেমন দেখতে তাজহাট জমিদার বাড়ি
তাজহাট জমিদার বাড়িটির দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য তিনটি অভিগমন পথ রয়েছে তন্মধ্যে মাঝখানের অভিগমন পথটি অপেক্ষাকৃত প্রশস্ত। সবকটি অভিগমন পথের প্রতিটি ধাপ মসৃণ সাদা ও ছাই রংয়ের পাথর দ্বারা মোড়ানো। বারান্দাটির সম্পূর্ণ মেঝে একই রকম পাথরে মোড়ানো। ভবনটির প্রথম তলার ছাদ নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে বড় বড় লোহার বীম ও লোহার ফালি।
অন্যদিকে নিচ তলার অংশটিতে ৪টি কক্ষ দেখা যায় এবং এতে সর্বমোট ১১ জোড়া কপাট বিশিষ্ট দরজা দেখা যায় যা প্রাসাদের প্রকোষ্ঠগুলোতেও অনুরূপ। এছাড়া পূর্বের অংশে ৭টি প্রবেশ দ্বারা সমন্বিত ৩টি বড় বড় কক্ষ এবং পশ্চিম অংশে জোড়া কপাট বিশিষ্ট দরজাসহ বিরাট হলরুম রয়েছে এবং এ অংশের প্রায় মধ্যভাগে একটি প্রবেশ ও বর্হিপথ রয়েছে।
প্রধান ইমারতের উত্তর অংশের মাঝামাঝি ২য় তলায় ওঠানামার জন্য সুন্দর কাঠের তৈরি ২২টি ধাপ বিশিষ্ট সিঁড়ি দেখা যায় এবং দক্ষিনের প্রাসাদের প্রকোষ্ঠটিতেও ২য় তলায় ওঠানামার জন্য লৌহ নির্মিত নকশাকৃত ঝুলন্ত মজবুত সিঁড়ি রয়েছে । মজার বিষয় হল সিঁড়িগুলোর রেলিং সুন্দর লৌহ নির্মিত ফুলগাছের মতো দেখা যায়।
সম্মুখস্থ প্রধান প্রাসাদটির ২য় তলায় ওঠানামার জন্য একটি বিরাট গ্যালারির মতো সিঁড়ি রয়েছে । সিঁড়িটিকে তিনটি স্তরে বিভক্ত দেখা যায়। প্রথম স্তরে ১টি ধাপ বিরাজমান, ২য় স্তরে ওঠার সময় একটু সমান অবস্থান নেমে আবার ১৪টি ধাপ অতিক্রম করে একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন আয়তাকার প্লাটফরমে ওঠা যায়, যা দ্বিতীয় তলার ছাদের সাথে সম্পৃক্ত , আর একে ৩য় স্তর হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে। সিঁড়িটি ভূমি থেকে দ্বিতীয় ভবনের ছাদ পর্যন্তসম্পূর্ণ অংশ সুন্দর মসৃন সাদা – কালো পাথরে মোড়ানো এবং সম্পূর্ণ অক্ষতঅবস্থায় রয়েছে।
আশা করছি আপনারাও ঘুরে দেখে আসবেন ঐতিহাসিক এই রাজবাড়ীটি। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখবেন যে, আপনার দ্বারা এই মূল্যবান সম্পদটির কোন ক্ষতি সাধিত না হয়।
Add comment