Porjotonlipi

এক নজরে টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্য

বাংলাদেশ বহু অতীত ঐতিহ্যে পরিপূর্ণ, আর টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্য অন্যতম৷ আজকের বিশ্বের অনেক ধনী দেশের যখন সূচনাও ঘটেনি। বাংলাদেশ তখন ছিল সভ্যতা ও সংস্কৃতিতে পরিপুর্ণ। আর এই দেশের বহু অতীত ঐতিহ্য, লোক সংস্কৃতির আর ইতিহাসের ভান্ডার এক এলাকার নাম হল টাঙ্গাইল।

টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্য

পর্যটনলিপি সবসময় সচেষ্ট বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য কে সবার দারে পৌঁছে দিতে। তারই সূত্র ধরে আজ আমরা জানবো টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্য ও তাঁর গুরুত্ব সম্পর্কে।

ঐতিহাসিক গুরুত্ব:

বাংলাদেশের ১০ টাকার নোটে যে আতিয়া মসজিদ এর ছবিটি মুদ্রিত আছে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আতিয়া নামক স্থানে অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে অন্যতম। উল্লেখ্য যে, টাঙ্গাইল জেলার প্রাচীন নাম ই ছিল আতিয়া বা আটিয়া। এছাড়া বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ জমিদার বাড়ি মহেরা জমিদার বাড়ি টাঙ্গাইল এ অবস্থিত। এই জেলায় আরো বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি সগর্বে এখনো দাঁড়িয়ে রয়েছে, এর মধ্যে উল্লেখ্য হলো পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি, নাগরপুর জমিদার বাড়ি, এলেঙ্গা জমিদার বাড়ি প্রভৃতি।

ফটোঃ উইকিমিডিয়া

২০১ গম্বুজ মসজিদ:

এছাড়া বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা সম্পর্কে বলতে গেলে যে স্থানটির কথা না বললেই নয় তা হলো গোপালপুর উপজেলার নখদা শিমলা ইউনিয়নের দক্ষিণ পাথালিয়া গ্রামে অবস্থিত ২০১ গম্বুজ মসজিদ। এই মসজিদে রয়েছে বিশ্বের সবথেকে উঁচু মিনার যা কিনা একটি ৫৭ তলা উঁচু ভবনের সমান। এই মসজিদের ছাদে রয়েছে কারুকার্যমন্ডিত ২০১ টি গম্বুজ এবং রয়েছে ৯ টি মিনার।

২০১ গম্বুজ মসজিদ, টাঙ্গাইল

মসজিদ টি ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য এবং প্রস্থ ১৬৫ ফুট । এখানে একসঙ্গে প্রায় ১৫ হাজার মুসল্লীরা নামাজ পড়তে পারে। এর উত্তর পাশে রয়েছে একটি অজুখানা যেখানে একসাথে ১৫০ জন অজু করতে পারে। এছাড়া মসজিদের পাশে নির্মিত হয়েছে বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা ও দুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। ১৮ বিঘা জায়গার উপর নির্মিত হয়েছে একটি হেলিপ্যাড। আর এই মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম।

শিক্ষা ও সংস্কৃতি:

প্রাচীনকাল থেকেই জেলা শিক্ষা ও সংস্কৃতি তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ টাঙ্গাইলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে সন্তোষ জাহ্নবী হাই স্কুল ও শহরে অবস্থিত বিন্দুবাসিনী বালক উচ্চ বিদ্যালয়,  বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। এছাড়াও রয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী ডিগ্রি কলেজ, টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ সহ আরো অনেক উচ্চমান সম্পন্ন বিদ্যা পীঠ। এছাড়া প্রাচীনকাল থেকেই লোক সংস্কৃতির পীঠস্থান এই টাঙ্গাইল। একসময় জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতায় এখানকার গ্রামে গ্রামে গড়ে ওঠে নানা নাট্যসংঘ যার উদ্যোগে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হত। এখানে জন্মেছন অনেক বিশিষ্ট নাট্যকার, নাট্যশিল্পী, কবি ও অভিনেতা। টাঙ্গাইলের লোকসাহিত্যের অনেক আলেখ্য ময়মনসিংহ গীতিকা স্থান পেয়েছে।

মাওলানা ভাষানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
ফটো ক্রেডিটঃ জাকির হোসেন সবুজ

কৃষি ও শিল্প:

টাঙ্গাইল একটি নদীবিধৌত কৃষি প্রধান অঞ্চল। এখানে সবচেয়ে উন্নতমানের পাট চাষ হয়। এছাড়া ধান, কলা, আনারস ও বিভিন্ন সবজি উৎপাদনে টাঙ্গাইল অন্যতম। এক কালে টাঙ্গাইলে সমৃদ্ধশালী ব্যবসা ছিল কাঁসা ও পিতল শিল্প। শুধু দেশেই নয় উপমহাদেশের প্রতিটি দেশে, বিশেষ করে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ও সমানভাবে সমাদৃত ছিল টাঙ্গাইল জেলার কাঁসা ও পিতল শিল্প। এছাড়া মৃৎশিল্প এ  এই জেলা বেশ উন্নত। তাঁত ও কুটির শিল্পে টাঙ্গাইলের বিশেষ সুনাম রয়েছে। টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি এই অঞ্চলকে দিয়েছে আলাদা পরিচয়। কথায় আছে –

” নদী চর, খাল বিল, গজারির বন,
টাঙ্গাইলের শাড়ি তার গর্বের ধন।”

পোড়াবাড়ির চমচম:

পোড়াবাড়ির চমচম মিষ্টি রাজা বলে খ্যাত। এর স্বাদ আর স্বতন্ত্রতা প্রায় ২০০ বছরের প্রাচীন। ব্রিটিশ আমল থেকে অবিভক্ত ভারত সহ গোটা বিশ্বে এর সুনাম ছিল। এই ঐতিহ্যবাহী চমচম মূলত এই জেলাকে বিশ্ববাজারে পরিচিত করেছে। পোড়াবাড়ি হলো ছোট্ট একটি গ্রামের নাম যা টাঙ্গাইল শহর থেকে ৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। ধারণা করা হয় এই গ্রামের কারিগর প্রথম বানিয়েছিলেন সেই চমচম। এছাড়াও এখানকার ঘোষ এবং পাল বংশের লোকেরা বংশানুক্রমে যুগ যুগ ধরে তৈরি করেছেন অসংখ্য সুস্বাদু মিষ্টি।

যাতায়াত ব্যবস্থা:

একসময় এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল নৌপথ নির্ভর। এখান থেকে লঞ্চ-স্টিমারে বড় বড় নৌকায় যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা হতো। নৌপথে যোগাযোগ ছিল কলকাতা পর্যন্ত। এরপর নদীর নাব্যতা হারানোর জন্য নৌ-যোগাযোগ এখন শুধু বর্ষা মৌসুমে সীমিত আকারে চালু থাকে ।

সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আগের তুলনায় অনেক ভালো। যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণের পর এক কালে মিজেলফ ইন এ জেলায় এখন রেল চলাচল রয়েছে সচল। উত্তরাঞ্চলের ১৭ টি জেলায় যানবাহন চলাচল করে টাঙ্গাইলের উপর দিয়ে। ঢাকা থেকে সড়কপথে বাস ও ট্রেনে করে খুব সহজেই টাঙ্গাইল যাওয়া যায়। প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরত্ব পার হতে মাত্র ১২০ থেকে ১৬০ টাকায় মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে প্রায় সারাদিনই বাস পাওয়া যাবে।

অনুরোধ:

সবশেষে বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে, ভ্রমণপিপাসু হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে পর্যটনলিপির আপনার কাছে একটি ছোট্ট অনুরোধ, আসুন আমরা প্রকৃতি কে সুন্দর রাখার দায়িত্ব টা পালন করি। আশা করি, আমরা প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে গিয়ে প্রকৃতিকে হয়রানির সম্মুখীন করবো না। আশা করছি টাঙ্গাইল জেলার ঐতিহ্য নিয়ে আমাদের আয়োজন ভালো লেগেছে।

কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর তাসমিয়া তাহারাত সৌখিন

 

Porjotonlipi

Add comment