Porjotonlipi

টাংগুয়ার হাওর ভ্রমণলিপি

টাংগুয়ার হাওর বাংলাদেশের বৃহত্তম গ্রুপ জলমহালগুলোর অন্যতম। বর্তমানে বাংলাদেশের  মোট জলমহাল সংখ্যা ৫১ টি এবং মোট আয়তন প্রায় ৬,৯১২.২০ একর তবে নলখাগড়া বিল, হিজল-করচ বনসহ বর্ষাকালে সমগ্র হাওড়টির আয়তন দাঁড়ায় প্রায় ২০,০০০ একর। পর্যটনলিপির এই আয়োজনে আজ জানবো এই টাঙ্গুয়ার হাওড় সম্পর্কে।

বিশ্ব ঐতিহ্য – টাংগুয়ার হাওর

Tanguar3

টাংগুয়ার হাওর এর অবস্থান:

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে সুনামগঞ্জ জেলার ধর্মপাশা ও তাহিরপুর উপজেলায় এই হাওরটি অবস্থিত। জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ মিঠাপানির এর হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার এলাকা। ভারতের মেঘালয়ের খাসিয়া, জৈন্তা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত এই হাওর টি পাখি ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর এক অনন্য অভয়াশ্রম।

Tanguar4

কিভাবে যাবেন টাংগুয়ার হাওর :

প্রথমে সিলেটের সুনামগঞ্জ চলে আসবেন দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে। ঢাকা থেকে সরাসরি সুনামগঞ্জ বেশ কয়েকটি বাস চলাচল করে। নন এসি বাস হলে ভাড়া পড়বে ৫৫০ টাকা। ঢাকা থেকে রাতের বসে উঠলে সকাল ৭টার মধ্যে সুনামগঞ্জ পৌঁছে যাবেন। সুনামগঞ্জ থেকে যেতে হবে তাহিরপুর। এখানে সিএনজি, লেগুনা অথবা মোটরসাইকেল যোগে যেতে পারবেন, সময় লাগবে প্রায় ২ ঘণ্টা। যেতে পথে আপনি দেখতে পারবেন শাহ আরেফিন এর মাজার, বারিক্কা টিলা, জাদুকাটা নদী, লাউয়েরগড় ও ইন্ডিয়ার বর্ডার সংলগ্ন অপরুপ কিছু ঝর্ণা। তবে এসব দেখতে হলে মোটরসাইকেল নিয়ে আসাটাই উত্তম। তাহিরপুরে আসার পর সরকারি ডাকবাংলো এবং ইউএনও রেস্টহাউসের রুম নিতে পারেন। এক্ষেত্রে আগেই বুকিং দিতে হয়। রুম ভাড়া ৩০০ টাকা। তাহেরপুর নৌকা ঘাটে গিয়ে দরদাম করে টাংগুয়ার উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করবেন। ট্রলার আগে থেকে বুক করে গেলেই ভালো, ৮ থেকে ১২ হাজার টাকার মধ্যে ট্রলারের সাইজের উপর ভাড়াটা নির্ভর করে। মনে রাখবেন দুপুরে খাবারের জন্য তাহেরপুর বাজার থেকে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনে নিতে হয়। আর তিন থেকে চার ঘণ্টায় পুরো টাংগুয়ার হাওর ভ্রমণ করে যদি সময় থাকে তাহলে মেঘালয় সংলগ্ন গ্রাম এবং গারোপাড়া বাঙ্গালভিটা দেখতে পারেন।

 

Tanguar2

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য:

টাঙ্গুয়ার হাওর মাছ পাখি এবং উদ্ভিদের পরস্পর নির্ভরশীল এক অনন্য ইকোসিস্টেম। মাছের অভয়াশ্রম হিসেবেই এর গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি। প্রকৃতির অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ এই  হাওড়টি মাছ প্রতিপালন সংরক্ষণ ও আহরণের স্থান তা নয় এটি একটি মাদার ফিশারি। সাথে সাথে হিজল-করচের দৃষ্টিনন্দন সারি এ হাওর কে করেছে আরও মোহনীয়। এছাড়াও নলখাগড়া, দুধিলতা, নীল শাপলা, পানিফল, শতমূলী, শীতলপাটি, স্বর্ণলতা, বন তুলসী ইত্যাদি সহ প্রায় ২০০ প্রজাতির গাছগাছালি রয়েছে এই প্রতিবেশ অঞ্চলে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের কার্যকর ও টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে এখানে বর্তমানে ছোট-বড় প্রায় ২০৮ প্রজাতির পাখি, ৩৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৬ প্রজাতির কচ্ছপ, ৭ প্রজাতির গিরগিটি, ২১ প্রজাতির সাপ ও ১ প্রজাতির উভচর প্রাণী পাওয়া যায়। তাছাড়া নলখাগড়ার বনও বৃদ্ধি পেয়েছে বেশ কয়েক গুণ। বর্তমানে শীতকালে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ব্যাপক পাখির আগমন ও অবস্থানে মুখরিত থাকে টাংগুয়ার হাওর। এর মধ্যে উল্লেক্ষ্য হলো বিলুপ্তপ্রায় প্যালাসেস, বৃহদাকার  গ্রে- কিংস্টারক, শকুন এবং আরো  বিপুলসংখ্যক অতিথি পাখি। স্থানীয় বিভিন্ন জাতের পাখি যেমন পানকৌড়ি, কালেম, বৈদর, ডাহুক, নানা প্রকার বালিহাস, গাঙচিল, বক, সারস ইত্যাদি পাখির দেখা মেলে এই হাওর অঞ্চলে। সাধারণ হিসেবে এই হাওরে বিগত শীত মৌসুমগুলোর প্রতিটিতে ২০/২৫ লক্ষ পাখির বিচরণ ছিল বলে অনুমান করা হয়।

অনুরোধ:

প্রকৃতি কে জানুন, সৃষ্টিকতার অপার সুন্দর সৃষ্টি কে দেখুন, যা আপনার জ্ঞান ও স্রষ্টার উপর আনুগত্য অবশ্যই বৃদ্ধি করবে৷ তবে ভ্রমনকালে এমন কিছু করবেন না যা এই প্রকৃতির সৌন্দর্য বা বিশুদ্ধতাকে ব্যাহত করে ৷

কন্টেন্ট রাইটারঃ নূর তাসমিয়া তাহারাত সৌখিন

 

Porjotonlipi Desk

1 comment