জিন্দা পার্ক যেখানে অবস্থিত সেই গ্রামটার নাম আদর্শ গ্রাম। এই দু’টো নামেই হয়তো বুঝতে পারছেন এই আদর্শ গ্রাম আপনাকে জীবনে ব্যস্ততার অবসাদ ভুলিয়ে আরেকবার জিন্দা করে তুলবে!
অপরূপ জিন্দা পার্ক
যদি মনে করেন সপ্তাহের কাজের চাপ আর ব্যস্ততায় আপনার জীবন একই বৃত্তে ঘুরছে তাহলে সেই বৃত্তের গণ্ডি থেকে একটু বের হোন। প্রকৃতির একটুখানি ছোঁয়া হয়তো আপনার সপ্তাহের ক্লান্তি মুছে দেবে এক লহমায়। কিন্তু প্রস্তুতি আর সময়ের বেড়াজালে আটকেও বের হওয়া হয় না কখনোই। তবে যদি ‘পর্যটনলিপি‘ আপনাকে এমন একটা জায়গার সন্ধান দেয় যেখানে ভ্রমণে আপনার খুব বেশি প্রস্তুতির প্রয়োজন তো পড়বেই না বরং একদিনে ফিরে আসতে পারবেন আপনার গন্তব্যে!
জিন্দা পার্ক এর বিশেষত্ব
১৯৮০ সালে পাঁচ হাজার সদস্য নিয়ে শুরু হয় অগ্রপথিক পল্লী সমিতির দীর্ঘ ৩৫ বছরের পরিশ্রম, আন্তরিকতা এবং একাগ্রতায় দৃশ্যমান হয় জিন্দা পার্ক। ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জে জেলার দাঊদপুর ইউনিয়নে প্রায় ১৫০ একর জায়গা জুড়ে অবস্থিত সবুজে ঘেরা জিন্দা পার্ক। পাঁচটি অসম্ভব সুন্দর জলাধারের পাশাপাশি চারদিকের সবুজে আপনাকে সুরভিত করে রাখার জন্য জিন্দা পার্কে রয়েছে ২৫০ প্রজাতির দশ হাজারের বেশি গাছ। সেই গাছগুলোতে নির্ভয়ে বসবাসরত অসংখ্য পাখিদের কলতানে মুগ্ধতা ছড়াবে যেকোনো হৃদয়ে।
এছাড়াও গাছের উপরের টং ঘর, সান বাঁধানো পুকুর ঘাট, পুকুরের মধ্যে সাঁকো, মার্কেট, মাটির সুসজ্জিত ঘর, স্থাপত্যশৈলীর লাইব্রেরি, মিনি চিড়িয়াখানা আপনাকে দেবে নির্মল আনন্দের পূর্ণতা। দর্শনার্থীদের নৌবিহারের জন্য প্রস্তুত রাখা হয় আট টি সুসজ্জিত নৌকা।
যাবার উপায়
জিন্দা পার্ক ঢাকা থেকে মাত্র ৩৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হবার ফলে বিভিন্ন উপায়েই জিন্দা পার্কে যাওয়ার প্রস্তুতি নেয়া যায়। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু পথের মধ্যে অন্যতম সহজ এবং সুন্দর রাস্তা হলো কুড়িল বিশ্বরোডের পূর্বাচল হাইওয়ে অর্থাৎ ৩০০ ফিট দিয়ে। ঢাকা শহরের যেকোনো প্রান্ত থেকে কুড়িল বিশ্বরোডে আসুন কুড়িল রেললাইনের পাশে বি আর টিসি কাউন্টার থেকে কাঞ্চন ব্রিজের টিকিট নিন (টিকিট মূল্য ২৫/-)। কাঞ্চন ব্রিজের আগে ঢাকা সিটি বাইপাস ধরে চার কিলোমিটার দূরেই জিন্দা পার্কের অবস্থান। কাঞ্চন ব্রিজের আগে বাইপাস মোড় থেকে জিন্দা পার্কে যাওয়ার জন্য আটো রিক্সা ভাড়া জনপ্রতি ২৫/৩০ টাকা। আর রিজার্ভ করে যেতে চাইলে ভাড়া পড়বে ১০০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত।
৩০০ ফিট রাস্তার মাথা থেকে লোকাল সিএনজি লোকাল প্রাইভেট কার বা লেগুনা দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়া যায়। ৩০০ ফিট থেকে সরাসরি জিন্দা পার্ক যেতে চাইলেও সিএনজি বা অটো রিক্সা রিজার্ভ করে যেতে পারেন। ভাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ এর মত হতে পারে। হাতে একটু বেশি সময় থাকলে আপনি অটো রিক্সায় যেতে পারে এতে একটু বেশি সময় লাগলেও আশপাশের সৌন্দর্যের বিমোহিত হবেন প্রতিটা সেকেন্ডে।
এছাড়াও ঢাকার টঙ্গী মীরের বাজার থেকে বাইপাস রাস্তা ধরে জিন্দা পার্ক যাওয়া যায় সেক্ষেত্রে দূরত্ব কমে দাঁড়ায় মাত্র ২৮ কিলোমিটারে। বাসে কাঁচপুর ব্রিজ পাড়ি দিয়ে ভুলতা এবং ভুলতা থেকে মহানগর বাইপাস হয়ে জিন্দা পার্ক যাওয়ার আরেকটি সহজ রাস্তা। নিজের ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে উল্লেখিত রাস্তার যেকোনো একটি ব্যবহার করে ঘুরে আসতে পারেন অপরূপ সৌন্দর্যে পরিপূর্ণ জিন্দা পার্ক।
খোলার সময় এবং অন্যান্য
জিন্দা পার্ক সপ্তাহে সাত দিন সকাল ৯টার পর থেকেই খোলা থাকে তবে কখনো বন্ধ থাকলে তা জিন্দা পার্কের ওয়েবসাইটের নোটিশে জানিয়ে দেয়া হয়। জিন্দা পার্কে প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা বাচ্চাদের জন্য ৫০ টাকা, লাইব্রেরি ফি ১০ টাকা, পার্কিং ভাড়া ৫০-১০০ টাকা।
থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা
সবুজের মায়ায় নিমজ্জিত এই জিন্দা পার্কের একমাত্র আক্ষেপের বিষয় এখানে থাকা ব্যবস্থা নেই। তবে খাওয়া দাওয়ার জন্য রয়েছে পরিচ্ছন্নতায় পূর্ণ ক্যান্টিন। যেখানে আপনি মুরগী, গরু, খাসি, সবজি, ডাল, ভাত সহ নানান আইটেমের খাবার খেতে পারেন। যা প্যাকেজ আকারে নেয়ার ব্যবস্থাও রয়েছে। এছাড়াও আপনি বাইরে থেকেও খাবার নিতে পারেন সেক্ষেত্রে ২৫ টা ফি দেয়ার নিয়ম রয়েছে।
জিন্দা পার্কে পিকনিক করতে চাইলে কর্তৃপক্ষের সাথে ২/৩ দিন কথা বলা জরুরি। আর নিজের মানসিক রিফ্রেশমেন্টের জন্য যেকোনো দিন চলে আসতে পারেন জিন্দা পার্কে গাছ, পাখি আর প্রকৃতির রাজ্যে।
কন্টেন্ট রাইটার – ওমর ফারুক
Add comment