Porjotonlipi
Jahangirnagar

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর রঙিন দেয়াল

হাজির হয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর এক সৃজনশীল পদক্ষেপের তথ্য নিয়ে। চিত্রকর্ম – মানব চিন্তা প্রকাশের এক অন্যতম সফল মাধ্যম। মুখের বুলি ও লেখার মাধ্যমে যতটা মনের ভাব ফুটিয়ে তোলা যায়, রংতুলি দিয়ে আঁকা ছবির মাধ্যমে সেই মনের ভাবের গাম্ভীর্য বেড়ে যায় কয়েক গুণ। মানব সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকে চিত্রকর্মের আবির্ভাব। বিভিন্ন শতাব্দীতে রং তুলির ব্যবহারে দেখা গেছে হরেক রূপ। কিন্তু উদ্দেশ্য সেই একটাই – শিল্পীর মনে কি চলছে, সেটাকে বিস্তারিত ভাবে ফুটিয়ে তোলা। একটা পরিপূর্ণ আঁকা ছবির সামনে দাঁড়ালে দর্শকের মনের মধ্যেও চলে হরেক বিতর্ক – শিল্পী কি বোঝাতে চেয়েছেন? একটি পরিপূর্ণ চিত্রকর্ম হাজার শব্দের অনুভবকে সামান্য চেষ্টায় মানুষের সামনে তুলে ধরে। 

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এর রং তুলির জাগরণ

এই রং তুলি দিয়ে আঁকা ছবি কখনো ধারণ করে অস্ত্রের রূপ, কখনো প্রতিবাদের ভাষা, কখনো অনুপ্রেরণার মাধ্যম। ক্যানভাস এর সাদা কাপড় হোক, হোক বোবা দেয়াল, আবার কখনো হোক শিশুর সাদা কাগজ আর মোমরং – মানুষের চিন্তাকে রঙিন ভাবে তুলে ধরতে চিত্রকর্মের বিকল্প নেই। মানুষের রং তুলির প্রতি প্রবল আগ্রহকে বিবেচনা করেই শিক্ষা কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছে চারুকলা শিল্প এবং অনুষদ। বর্তমানে যুব সমাজই এই চিত্রশিল্প কে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে যুগের পর যুগ। 

Jahangirnagar
ছবি- সংগৃহীত

ঢাকা শহরের দেয়াল গুলোতে রং তুলির ছোঁয়ার চেয়ে পোস্টারের উপস্থিতি বেশি চোখে পরে। কিন্তু সেই ধারা কে ঢেলে সাজিয়েছে বাংলাদেশের সরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীগণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তা হোক, হোক জাহাঙ্গীরনগরের বোবা দেয়াল – কাগজের পোস্টারের রাজত্বকে হটিয়ে জায়গা করে নিয়েছে বিভিন্ন প্রতিবাদী অক্ষরচিত্র, ম্যুরাল, লোকশিল্পের দৈনন্দিন জীবন চিত্র, এবং ভিনদেশী অ্যানিমেশন চিত্র। লাল ইটের গাঁথুনিতে দেখা মিলছে বিশাল গ্যালাক্সির। এ যেন প্রাণহীন শহরতলীতে ছোট্ট এক সতেজ জীবনের টুকরো। 

জাহাঙ্গীরনগরের বোবা দেয়ালে রঙিন প্রাণ 

ঢাকা শহরের কোলাহল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান অনেক দূরে, প্রকৃতির চাদরে মোড়ানো বিশাল এক একর এই ছাত্রনগরী। কিন্তু এর দেয়ালগুলোতে দেখা যেত অযাচিত বিভিন্ন পোস্টার, চিকা, বিজ্ঞাপন আর বিভিন্ন ব্যাচের নামের একচ্ছত্র আধিপত্য। কিন্তু বরাবরের সেই প্রথাকে ভেঙ্গে  প্রাণহীন দেয়ালগুলোতে প্রাণ ফিরিয়ে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুশদের আবদুল্লাহ মামুর সহ কয়েকজন তরুন বিদ্যার্থী। বিভিন্ন দেয়ালে তাঁরা তুলে ধরেছেন হরেক পদের চিত্র। সেই তালিকায় জায়গা পেয়েছে বাংলা চলচ্চিত্র জগতের ৩ প্রিয়মুখ – ফেলুদা, টেনিদা এবং ঘনাদা। আরও আছে স্বদেশী প্রিয়মুখ – হুমায়ূন ফরীদি, এটিএম শামসুজ্জামান এবং দিলদার এর মত কালজয়ী তারকাদের ম্যুরাল। বাংলার এই তারকাদের ম্যুরাল গুলো নজর কেড়েছে বাংলা চলচ্চিত্র প্রেমীদের। অনেকেই ছবি গুলো কে শেয়ার করছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। 

ছবি- সংগৃহীত

দেয়াল গুলোতে আরও আছে লোকশিল্পের ছবি, ভিনদেশী বিভিন্ন অ্যানিমেশন এবং তারকারজ্যের গ্যালাক্সি। আইরিশ সিনেমা ‘সং অব দ্য সী‘ এবং জাপানি সিনেমা ‘মাই নেইবর তোতোরো‘ ঠাঁই করে নিয়েছেন এখানে। 

রং তুলি দিয়ে আঁকানো দেয়ালের উদ্যোক্তা ছাত্র আবদুল্লাহ মামুর এর সাথে কথা বলে জানা যায়, তিনি চে গুয়েভারা এবং বব ডিলানের গতানুগতিক প্রথা থেকে বেরিয়ে এসে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে চান। তিনি আরও জানান, সেই তালিকায় যোগ হবে বাংলা গানের পপ সম্রাট আজম খান, মহীনের ঘোড়াগুলি সহ এবং আরও কয়েকটি চিত্রকর্ম। 

আবদুল্লাহ মামুর এর পাশাপাশি প্রশংসার সমান অধিকারি একই অনুষদের আবির আর্য, থিন জো মং, বিপিন চাকমা, ফারজাদ দিহান, জাকিয়া রহমান সহ আরও অনেক। 

জাহাঙ্গীরনগরের এই উদ্যোগকে পুঁজি করে অনেক জায়গায়তেই এখন দেখা মিলছে বিভিন্ন দেয়ালচিত্রের। উন্মত্ত শহরতলীতে প্রাণ ফিরিয়ে দিতে প্রয়োজন এরকম সব শিল্পীর। যুগে যুগে জন্ম হোক এরকম সতেজ প্রানের। শহরের রংচটা দেয়াল গুলো জীবিত হয়ে উঠুক রং তুলির ছোঁয়ায়।

 

ফাতেমা নজরুল স্নেহা

Add comment