একদুয়ারিয়া নরসিংদী জেলার মনোহরদী উপজেলার একটি সুন্দর গ্রাম। আর সেই গ্রামের বাসিন্দা জাফর তুহিন গ্রামের সৌন্দর্য দেখছে ব্যতিক্রম দৃষ্টিতে।
একদুয়ারিয়া গ্রাম নিয়ে জাফর তুহিন এর ব্যতিক্রমী উদ্যোগ
বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামে বসেও ট্যুরিজম ব্যবসা করা সম্ভব এবং একজন তরুণ শহুরে চাকচিক্য ছেড়ে বিদেশীদের নিজ গ্রাম দেখানোও একটা পেশা হতে পারে, এই দুইটি ভাবনাতীত বিষয়কে সত্য করে তুলেছেন নরসিংদীর জাফর তুহিন।
একদুরিয়া ও জাফর তুহিনের স্বপ্ন
জাফর তুহিন পড়াশোনা শেষ করে চাকুরী করতেন ঢাকা শহরের একটি রেস্তোরাঁয়, সেখানে তাঁর পরিচয় হয় একজন বিদেশীর সাথে এবং তখনই তিনি পরিকল্পনা করেন ট্যুরিজম ব্যবসায় আসার। তবে তাঁর পরিকল্পনা ছিল কিছুটা ব্যতিক্রম, জাফর চেয়েছিলেছেন গ্রাম-বাংলা সরজ ও সরল জীবন সম্পর্কে ভিনদেশীদের ধারনা দিতে। তাঁর এই ব্যতিক্রমী প্রচেষ্টায় সাড়াও মিলছে ব্যাপকহারে। নিউজিল্যান্ড, আমেরিকাসহ ইউরোপের অনেক নাগরিকই জাফর তুহিনের গাইডে ভ্রমণ করেছেন একদুয়ারিয়া গ্ৰাম। ইউরোপ থেকে আসা সকল পর্যটকরাও বেশ আগ্রহী ছিলেন বাংলাদেশ গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে জানতে। শুধুমাত্র প্রাকৃতিক পরিবেশই নয় গ্রামের মানুষের সারল্য ও অতিথিপরায়ণ আচরণও মুগ্ধ করে বিদেশী পর্যটকদের। ফলে একদুয়ারিয়া গ্রামে নিয়মিতভাবে বাড়তে থাকে বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনা।
জাফর তুহিনের বাণিজ্যিক পথচলা
জাফর তুহিনের এজেন্সির নাম ‘তাঁবু ট্যুর’, ভালো ইংরেজি দক্ষতা এবং একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পর্যটকদের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন তিনি। গ্রামের মাটির রাস্তায় বাচ্চাদের খেলাধুলা, নদীতে গরুকে গোসল করানো, গরুর দুধ দোহানো, মাটির চুলায় মহিলাদের রান্না করা এসব কিছু গ্রামের নিত্যদিনের ঘটনা কিন্তু একদুয়ারিয়া গ্রামে গেলে আপনি হয়তো প্রায়ই দেখতে পাবেন একজন বিদেশী গ্রামীণ পোশাক পরে পুকুর ঘাটে বসে আছে বড়শি ফেলে, হয়তো দেখবেন একদল বিদেশী শিশু ফসলি জমির আল ধরে দৌড়ে যাচ্ছে গ্রামের অন্য ছেলেমেয়েদের মতই, এমনকি গ্রামীণ জীবনব্যবস্থার আসল স্বাদ পেতে পর্যটকেরা খাবার তৈরির কাজেও সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের সাথে নিমিষেই মিশে যাচ্ছেন ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন বয়সী পর্যটকেরা। এতে খুশি তুহিনের গ্রামবাসীও, বিদেশীদের সংস্পর্শ মুগ্ধ করে তাঁদেরও। পর্যটকদের গ্রামীণ জীবনের নানা কায়দাকানুন বেশ আগ্রহ নিয়েই শিখিয়ে দেন তুহিন ও তাঁর গ্রামবাসী। শুধু তাই নয় বিদেশী পর্যটকদের অনেকেই একদুয়ারিয়া ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করে থাকেন বিভিন্ন ব্লগ বা ওয়েবসাইটে। ফলে একদুয়ারিয়া গ্রাম পৌঁছে যাচ্ছে আরো অনেক বিদেশী পর্যটকদের নিকট, এবং অন্যান্য পর্যটকেরাও আগ্রহী হয়ে উঠছেন একদুয়ারিয়া গ্রাম তথা বাংলাদেশ ভ্রমণের জন্য।
ইতোমধ্যে একদুয়ারিয়ার গ্রামের অনেকেই পর্যটকদের থাকার উপযোগী বাসস্থান তৈরির পরিকল্পনা করছেন। তাই ধীরে ধীরে অর্থনৈতিকভাবেও উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন জাফর তুহিন ও তাঁর গ্রামের অনেক যুবকেরা।
পর্যটন শিল্প শহরমুখী হতে হবে, গ্রামকে নগরায়ন করার প্রতিযোগীতা এবং তরুণদের শহরমুখী হওয়া -এই সকল বিষয়গুলো দূরে ঠেলে জাফর তুহিন আমাদের শেখায়, দেশের ৭৫% মানুষের গ্রাম ধ্বংস না করে গ্রাম্য সৌন্দর্য ও মানুষের জীবনের বৈচিত্রকে সৃষ্টি করা যায় পর্যটন শিল্প হিসেবে।
কন্টেন্ট রাইটার- ওমর ফারুক
Add comment