Porjotonlipi
Bagerhat Chunakhola Mosque

বাগেরহাটের চুনখোলা মসজিদ

আজ কথা বলবো বাগেরহাটের চুনখোলা মসজিদ নিয়ে। বাগেরহাট বাংলাদেশের মূলত একটি বিলুপ্তপ্রায় শহর, যেটিকে মসজিদের শহরও বলা চলে। জেলাটি বিভিন্ন ইসলামিক স্থাপত্য এবং বিচিত্র সুন্দর মসজিদের জন্য বহুল পরিচিত। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীতে যত মসজিদ রয়েছে, তার সিংহভাগ রয়েছে বাংলাদেশে। বঙ্গদেশের ৬৪ জেলা ঘুরে দেখলে অনেক বিলুপ্তপ্রায় মসজিদ থেকে শুরু করে আধুনিক স্থাপত্যশৈলী মেনে নির্মিত মসজিদও চোখে পরে। বাগেরহাটে বিভিন্ন ধসে পরা, পুরনো, তুর্কি ঘরানার বেশ কয়েকটি মসজিদ আছে। তাহলে চলুন জেনে নেই আরেকটি বিচিত্র মসজিদ চুনখোলা মসজিদ সম্পর্কে।

বাগেরহাটের এক গম্বুজীয় চুনখোলা মসজিদ

 

বাগেরহাটের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস

একসময়ে বাগেরহাটকে ডাকা হত খলিফাতাবাদ  এবং শাহী বাংলা আমলে একে ডাকা হত পুদিনার শহর  । শহরটি ১৫ শতকের দিকে নির্মাণ করা হয়, তুর্কি সেনাপতি খান – ই – জাহান কে বলা হয়ে থাকে এই শহরের নির্মাতা। আনুমানিক ১৪৫৯ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন এবং সেখান থেকে জানা যায় বাগেরহাটের অভ্যুথ্যান। তিনি একজন পীর ব্যক্তি ছিলেন, অনেক জনহিতকর কাজের পাশাপাশি নির্মাণ করিয়েছিলেন বিভিন্ন মসজিদ, রাস্তা, সেতু – যেগুলো খান জাহানের স্থাপত্যশৈলী  হিসেবে পরিচিত। তার আদেশে নির্মিত দুইটি পুকুরও আছে যেগুলো ঘোড়াদীঘি  এবং দারগাদীঘি । তার স্থাপত্যবিদ্যায় বিশেষ জ্ঞান ছিল। বাগেরহাটের দশটি মসজিদের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে সাতটি মসজিদই খান জাহানের রীতিতে নির্মাণ করা হয়েছিল।

এক গম্বুজীয় চুনখোলা মসজিদ

ধান খেতের মাঝে নির্মিত এই মসজিদের নির্মাণকাল সেই ১৫ শতক। চুনখোলা গ্রামের নামানুসারে মসজিদের নাম রাখা হয়েছে। এককালে চুনাপাথরের নির্যাস পাওয়া যেত বলে গ্রামের নাম রাখা হয় চুনখোলা, এরকমটাই অনেকে মনে করে থাকেন। খান জাহানের স্থাপত্যশৈলীতে এক ভিন্নতার ছোঁয়া পাওয়া যায়। চুনখোলা ঠিক একই রকম, একটিমাত্র গম্বুজ দিয়ে বানানো মসজিদটি কালের পরিক্রমায় ইতিহাস সঙ্গে করে দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর।

গঠন বিন্যাস

৭.৭ মিটার উচ্চতার একটি ছোট চৌকোণা দালান যার দেয়াল গুলো ২.২৪ মিটার পুরু এবং প্রায় ৭-৮ মিটার চওড়া। মসজিদের পূর্ব দিকে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ১ টি করে মোট ৫ টি দরজা রয়েছে এবং দরজা গুলো উপরের দিকে টেরাকোটার টাইলস দিয়ে আবৃত। মসজিদের চারপাশে গোলাকার ৪ টি পিলার রয়েছে। মসজিদের রয়েছে ৩ টি ধনুকাকৃতি মিহরাব, যার মধ্যে মাঝের মিহরাবটি সর্ববৃহৎ, প্রতিটি মিহরাবের গায়ে রয়েছে সুন্দর কারুকাজ। ইট দিয়ে নির্মাণ করার কারণে সালফেটের কারণে কিছু জায়গার ইট নষ্ট হয়ে যায়, যেগুলো পরবর্তীতে ইউনেস্কো কর্তৃক আনুমানিক ১৯৮০ সালে সংস্কার করা হয়।

বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ এবং অলাভজনক প্রতিষ্ঠান CyArk ২০১৯ সালে এই মসজিদ এর উপর একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছিল।

কিভাবে যাবেন বাগেরহাটের চুনখোলা মসজিদ ?

ঢাকার সায়েদাবাদ এবং গাবতলি থেকে বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি বাস বাগেরহাটের উদ্দেশ্যে যায়, সুবিধামত সময় অনুযায়ী টিকিট কেটে ঘুরে আসা যায় বাগেরহাট শহর সহ বেশ কয়েকটি মসজিদ।

এছাড়া আন্তঃনগর ট্রেনে (সুন্দরবন এক্সপ্রেস / তিস্তা এক্সপ্রেস) করে খুলনা গিয়ে এরপর বাসে চড়ে সহজেই বাগেরহাট চলে যাওয়া যায়।

বাসস্ট্যান্ড থেকে সাত কিলোমিটার দূরত্বে ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং খান জাহান আলীর মাজার রয়েছে, রিকশাভাড়া ত্রিশ টাকার মত। ষাট গম্বুজ মসজিদ থেকে কিছুটা আগালে দেখা মিলবে ঘোড়া দিঘির, সেখান থেকে পশ্চিম ধারের পথ ধরে আগালে প্রথমে নজরে আসবে বাগেরহাটের আরেক ঐতিহাসিক বিবি বেগনি মসজিদ, এবং সেখান থেকে আরও কিছু পথ আগালেই চুনখোলা মসজিদ।

ঘুরে দেখুন বাংলাদেশ, দেশ সম্পর্কে জানুন। নিজে সচেতন হয়ে ভ্রমণ করুন, অন্যকে সচেতন ভ্রমণ করতে উদ্বুদ্ধ করুন।

কন্টেন্ট রাইটার- ফাতেমা নজরুল স্নেহা

 

Porjotonlipi

Add comment