আজ পর্যটনলিপি আপনাদের সামনে তুলে ধরবে আপনাদের সুপরিচিত স্থান সীতাকুণ্ড। এই স্থানটি কারো কাছে তীর্থ আবার কারো কাছে পর্যটন স্থান হিসেবে বেশি পরিচিত। তবে আজ আমরা আপনাদের সামনে তুলে ধরব বাংলাদেশের অন্যতম তীর্থস্থান ‘চন্দ্রনাথধাম’।
বাংলাদেশে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের তীর্থস্থান হিসেবে খ্যাত চট্টগ্রাম জেলার সীতাকুন্ড। শুধু তাই-ই নয় এই স্থানটি বর্তমানে পর্যটক আকর্ষণেও অনেকটা এগিয়ে। বিশেষত সীতাকুন্ডের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য যেকোনো ভ্রমণকারীকে আপন করে নিতে সক্ষম। সীতাকুন্ডের সবচাইতে দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র হলো চন্দ্রনাথ পাহাড়।
সীতাকুন্ড বাজার থেকে পূর্ব দিকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে এই পাহাড়টি অবস্থিত।
জনশ্রুতি রয়েছে যে, নেপালের এক রাজা ঘুমের মধ্যে পৃথিবীর পাঁচ স্থানে শিব মন্দির স্থাপনের আদেশ পান। স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে নেপালের সেই রাজা পৃথিবীর পাঁচ স্থানে পাঁচটি শিব মন্দির স্থাপন করেন। এগুলো হলো নেপালের পশুপতিনাথ, কাশিতে বিশ্বনাথ, পাকিস্তানে ভুতনাথ, মহেশখালীর আদিনাথ এবং সীতাকুন্ডের চন্দ্রনাথ মন্দির। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায় প্রাচীন আমলে এখানে মহামুনি ভার্গব বাস করতেন। অযোধ্যার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এই স্থানে এসেছিলেন। মহামুণি ভার্গব রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র আগমন করবেন জেনে তাদের গোসল করার জন্য এখানে তিনটি কুন্ড সৃষ্টি করেন। রামচন্দ্রের সাথে তার স্ত্রী সীতাও এখানে এসেছিলেন। রামচন্দ্রের স্ত্রী সীতা এই কুন্ডে গোসল করেছিলেন এবং সেই থেকে এই স্থানের নাম সীতাকুন্ড।
চন্দ্রনাথ মন্দির ছাড়াও এখানে সীতা মন্দির নামে আরও একটি মন্দির আছে। এই মন্দিরের কাছে মৃতপ্রায় একটি ঝর্না রয়েছে। তবে আপনি যদি ঝর্নার পানিতে গোসল করতে চান তাহলে আপনাকে পাহাড়ের গভীর বনের মধ্যে যেতে হবে। গ্রীষ্মকালে এই পাহাড় রুক্ষ্ম থাকলেও বর্ষাকালে বৃষ্টিস্নাত হয়ে পাহাড়ের গাছ, লতা, পাতা সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার সতেজ হয়ে পর্যটকদের মন প্রাণ ভরিয়ে তোলে। উল্লেখ্য বর্ষাকালে পাহাড়ে ওঠার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়। এসময় পাহাড়ি পথ ব্যবহার না করে সিড়ি পথটিই ব্যবহার করা সুবিধাজনক।সারা বছর জুড়েই অসংখ্য দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আনাগোনায় এই স্থানটি মুখরিত থাকে। এখানে পর্যটকদের গাড়ি রাখার জন্য বিশাল একটি মাঠ রয়েছে। তবে এখানে বিশুদ্ধ খাবার পানির বড়ই অভাব। সেজন্য পর্যটকদের সাথে করে খাবার পানি নিয়ে যেতে হয়।
সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড় এলাকা বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা প্রতি বছর বাংলা ফাল্গুন মাসে বড় ধরনের একটি মেলার আয়োজন করে থাকে। যেটি শিবর্তুদর্শী মেলা নামে পরিচিত। এই মেলায় বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে অসংখ্য সাধু এবং নারী-পুরুষ যোগদান করেন।
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন ও বিমান সকল পথেই সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়ে যাওয়া যায়। ঢাকার কমলাপুর, সায়েদাবাদ, কল্যাণপুর সহ দেশের যেসকল স্থান থেকে চট্টগ্রামের গাড়ি ছাড়ে সেসব গাড়িতে করে সীতাকুন্ড যাওয়া যায়। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে সকল বাসই সীতাকুন্ডে থামে। আর যারা ট্রেনে করে যেতে চান তাদেরকে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা মেইল ট্রেনে উঠতে হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র এই ট্রেনটিই সীতাকুন্ড স্টেশনে যাত্রী উঠা-নামা করিয়ে থাকে। তবে শিবর্তুদর্শী মেলার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের অন্যান্য ট্রেনও সীতাকুন্ডে যাত্রী উঠা-নামা করিয়ে থাকে। ঢাকা মেইল ট্রেনটি ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ১১ টায় এবং সীতাকুন্ডে গিয়ে পৌছায় সকাল ৭ টায়। চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ড যাওয়ার জন্য চট্টগ্রামের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলকারী পাবলিক বাস রয়েছে। এসব বাসগুলো চট্টগ্রাম মাদারবাড়ী ও কদমতলী থেকে ছেড়ে যায়। এছাড়া স্থানীয়ভাবে ম্যাক্সী নামক এক ধরনের ছোট গাড়ি রয়েছে চট্টগ্রাম থেকে সীতাকুন্ডে যাওয়ার জন্য। এগুলো অলংকার বাস স্ট্যান্ডে পাওয়া যায়।
পর্যটকদের থাকার জন্য সীতাকুন্ডে তেমন কোনো ভালো হোটেল নেই। পর্যটকরা চাইলে এখানে অবস্থিত মন্দিরগুলোতে অনুমতি নিয়ে থাকতে পারেন।
[…] জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা ফটিকছড়ি। এটি সীতাকুণ্ড ও চট্টগ্রাম হিল ট্র্যাকস এর […]